‘সেঞ্চুরি’ করেই বিদায় সবচেয়ে বেশি বয়সী ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটারের
গত বছর ২২ ডিসেম্বর নিজের ১০০তম জন্মদিন পালন করেছিলেন রুসি কুপার। জীবনের স্কোরকার্ডে আর ‘১০১’–এর দেখা পাওয়া হলো না তাঁর। আজ সকালে দক্ষিণ মুম্বাইয়ে নিজের বাসস্থান কেম্পস কর্নারে ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার রুসি কুপার।
মৃত্যুর আগে রুসি কুপার ছিলেন ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে ‘পেন্টাঙ্গুলার লিগ’ ও রঞ্জি ট্রফি খেলা একমাত্র জীবিত ক্রিকেটার। ১৯২২ সালে জন্ম নেওয়া ডানহাতি এ ব্যাটসম্যানের ১৯৪১–৪২ মৌসুমে বোম্বের (মুম্বাই) পেন্টাঙ্গুলার লিগে অভিষেক হয়। পেন্টাঙ্গুলার লিগের দলগুলো হতো সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের ভিত্তিতে। সেখানে পার্সি দলের হয়ে ১৯৪১–৪২ মৌসুমে খেলেছেন রুসি কুপার।
রঞ্জিতে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত খেলেছেন বোম্বের (মুম্বাই) হয়ে। মিডলসেক্সের হয়ে ১৯৪৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হয়, তবে ওই মৌসুমে খেলেছেন একটাই ম্যাচ। পরের মৌসুমে দলটির হয়ে আরও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ভালো করতে পারেননি। মিডলসেক্সের হয়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ১৯.৬৩।
২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫২.৩৯ গড়ে ১২০৫ রান করেছেন রুসি কুপার। ৩টি সেঞ্চুরিও আছে। এর মধ্যে তাঁর সেরা সেঞ্চুরিটি সম্ভবত ১৯৪৪–৪৫ মৌসুমে রঞ্জির ফাইনালে হোলকারের বিপক্ষে। দুই ইনিংসে ৫২ ও ১০৪ রান করেছিলেন রুসি কুপার। বোম্বে (মুম্বাই) ম্যাচ জিতেছিল ৩৭৪ রানে। সে মৌসুমে দুটি সেঞ্চুরি ও ৫টি ফিফটিসহ ৯১.৮৩ গড়ে ৫৫১ রান করেছিলেন। ভারতে সেটাই হয়ে যায় তাঁর শেষ ক্রিকেট মৌসুম।
রুসি কুপার ২৩ বছর বয়সে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসে পড়তে গিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে সেখানে পড়াকালে মিডলসেক্স কাউন্টি ক্লাবে যোগ দেন। সেখানে ডেনিস কম্পটন ও বিল এডরিচদের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছেন। মিডলসেক্সের হয়ে তেমন সাফল্য না পেলেও ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্রিকেটে অনেক রান করেছিলেন। হোর্নসি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ১৯৫৩ সালে ১৩৯.৬২ গড়ে ১৯ ইনিংসে ১১১৭ রান তাঁর।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে পড়াশোনা শেষে লিংকনস বারে ব্যারিস্টারি পড়ার আমন্ত্রণ পান রুসি কুপার। ১৯৫৪ সালে ভারতে ফিরে এলেও আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে পারেননি। খেলার জন্য তাঁর চাকরিদাতা ছুটি দিতে রাজি হননি। তবে ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার (সিসিআই) হয়ে স্থানীয় টুর্নামেন্টে প্রচুর রান করেছেন। সিসিআই ভারতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাবগুলোর একটি। ইংল্যান্ডের যেমন মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি), ভারতেও তেমনি সিসিআই। ১৯৩৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৯০ বছরে পা রাখার আগপর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন রুসি কুপার। বিশেষজ্ঞ ছিলেন সমুদ্র আইন বিষয়ে। তাঁর শেষ জীবনটা কেমন ছিল, এ নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে কিছুটা আলোকপাত করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) আম্পায়ার মার্কাস কৌতো, ‘১২ জন সাবেক ক্রিকেটারকে নিয়ে রুসির একটি বন্ধুদের দল ছিল। ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁরা আড্ডা দিতেন। টিকে কন্ট্রাক্টরের মৃত্যুর পর সেই আড্ডাটা থেমে যায়। অন্যরা ছিলেন বিজয় মার্চেন্ট, আনন্দজি দোসা, নরি কন্ট্রাক্টর, বাপু নাদকার্নি, ফারুক বারুচা...। সেই সময়ের স্কুলছাত্র শচীন টেন্ডুলকার মাঝেমধ্যে ওদের আড্ডায় যেত মিষ্টি খেতে। পাশে দাঁড়িয়ে আমি ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের পুরোনো দিনের গল্প শুনতাম।’