শামীম যখন ফাইন লেগের ‘রাজা’
স্ট্রাইকে শামীম হোসেন। বোলার বল করছেন ফাইন লেগ ফিল্ডার ৩০ গজে রেখে। স্পিন কিংবা পেস বলের গতি কম হোক বা বেশি—কী হতে যাচ্ছে, আপনি ধরে নিতেই পারেন। শামীম শাফল করবেন, বলটাকে শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে—যেভাবেই হোক, ফাইন লেগ ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানোর চেষ্টা করবেন। গতিময় বোলার হলে কথাই নেই। ফিল্ডার বাউন্ডারিতে থাকলেও বোলারের গতি কাজে লাগিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করবেন। ভাবা যায়!
ফাইন লেগ নিয়ে শামীমের এই পাগলামি কাল দেখা গেল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি মেরেছেন ৪টি। ৩টিই এসেছে ফাইন লেগ দিয়ে, আরেকটি থার্ড ম্যান দিয়ে। যে বাউন্ডারিটি থার্ড ম্যান দিয়ে এসেছে, সেটাও তিনি খেলতে চেয়েছিলেন ফাইন লেগে, টাইমিংয়ের গড়বড় হওয়ায় বল যায় থার্ড ম্যানে। একবার থার্ড ম্যান দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ফিল্ডারের ভুলে রক্ষাও পেয়েছেন।
শামীম তবু নির্দ্বিধায় সেই ঝুঁকিপূর্ণ শটটা খেলে গেছেন। ইনিংসের ১৭তম ওভারে ফজলহক ফারুকির ওয়াইডের সীমানাছোঁয়া একটি বলকে শর্ট ফাইন লেগ ফিল্ডারের ওপর দিয়ে চার মারেন শামীম। হাঁটু গেড়ে সে শটটা খেলেই শামীম শুয়ে পড়েন। ফারুকি দৃশ্যটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। উইকেটকিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে এমন ইশারা করলেন, যার অনুবাদ হতে পারে, ‘এটা কীভাবে সম্ভব?’
শেষ পর্যন্ত শামীম আউট হয়েছেন রশিদ খানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে স্কয়ার লেগে সুইপ করে তুলে মারতে গিয়ে। কাল রাতে এ নিয়ে শামীমের সে কী আক্ষেপ! ওই শটটা স্কয়ারে না খেলে ফাইন লেগে খেললেই আরও একটি বাউন্ডারি হতো। বাংলাদেশ এগিয়ে যেত জয়ের আরও কাছে। তবে শামীম যখন আউট হন, তখন অবশ্য জয় বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।
মজার বিষয়, বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ নিক পোথাস কদিন আগেই শামীমকে ফাইন লেগে খেলতে বারণ করছিলেন। সেটা অবশ্য শামীমের ভালোর জন্যই। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি দলের অনুশীলনের সময় শামীমকে ফাইন লেগে খেলার চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যাটিং করতে বলেন পোথাস। সেটি অবশ্যই মাঠের অন্যান্য জায়গায় শট খেলার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবে।
এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ জানতেন, ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে খেলা শামীমের শক্তির জায়গা। পোথাস চাচ্ছিলেন মাঠের অন্যদিকেও খেলার দক্ষতা বাড়ুক তরুণ বাঁহাতির। সে জন্য বারবার শামীমকে বলেছেন, ‘শামীম, ফাইন লেগ নিয়ে চিন্তাই কোরো না। আমি ওই দিকে দুজন ফিল্ডার রেখেছি। চিন্তা করো, অন্য অপশন বের করো।’
কোচের কথা অনুযায়ী শামীম নেট বোলারদের লং অন, লং অফ দিয়ে খেলার চেষ্টা করছিলেন। কিছু কিছু বল ঠিকই ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন ফাইন লেগে। দূর থেকে পোথাস সে দৃশ্য দেখে শামীমকে বকাও দেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় টিকে থাকতে হলে শামীমকে স্বাভাবিকভাবেই মাঠের অন্য দিকেও বাউন্ডারি বের করার উপায় খুঁজে নিতে হবে। সেটা শামীম নিজেও জানেন।
তবে কাল রাতে শামীম একবারও মাঠের অন্যদিকে তাকাননি। আফগান বোলারদের ফাইন লেগে আছড়ে ফেলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য, সেটা যেভাবেই হোক—যেন এক দিনের জন্য ফাইন লেগ অঞ্চলটা শুধু শামীমেরই।