একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, অন্যদিকে জিততে পারে যে কেউই

শেষ পর্যন্ত যে চারটি দল সেমিফাইনালে উঠে এল, তারা সবাই যে ফেবারিট ছিল, তা নয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলের জায়গা হলো না! পাকিস্তানকে নিয়েও অনেকে আশাবাদী ছিল। বোঝাই যায়, টি-টোয়েন্টি এমন একটি সংস্করণ, যেখানে মাঝারি বা বড় দলের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য। শুধু স্কিল নয়, মাঝসমুদ্রে যারা দঃসাহসী হতে পারে, এ খেলা তাদের জন্যও।

আফগানিস্তান সবাইকে চমকে দিয়েছে। ওদের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি, কার্যকর বোলিং এবং হার না মানার দৃঢ়প্রত্যয়। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক চড়াই–উতরাই পার হয়েও শেষ পর্যন্ত সব ম্যাচ জিতেই লড়াইয়ে টিকে থাকা। ব্যাটিংয়ে তাদের মতো করে জ্বলে উঠতে না পারলেও বোলিং আক্রমণ দারুণ।

আফগানিস্তানের খেলা অনেকাংশেই নির্ভর করছে তাদের টপ অর্ডারের পারফরম্যান্সের ওপর। অনেক বড় রানের খেলা না হলেই তাদের জন্য ভালো। তারা চাইবে, খেলাটি যাতে ১৫০ বা ১৬০ রানের মধ্যেই থাকে। তাদের মানসিকতাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। আমার ধারণা, ৫০ রানে অলআউট হলেও তারা হাল ছাড়বে না।

আরও পড়ুন

নকআউট ম্যাচে অতীত অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাথায় থাকবে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এই চাপ নেওয়ার অভিজ্ঞতা এখন তাদের ভালোই আছে। এই বিশ্বকাপেই দু-একটি ম্যাচে অল্প ব্যবধানে জিতেছে, ‘চোক’ করেনি। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাই ফেবারিট থাকবে।

নকআউট ম্যাচে অতীত অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাথায় থাকবে
এএফপি

ভারতকে এ পর্যন্ত তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। এটির ভালো–মন্দ দুটি দিকই আছে। কোনো শক্ত পরীক্ষা দিতে হয়নি বলে নকআউট ম্যাচে অস্বস্তি থাকতে পারে। ফলে সাবধানী এক ভারতকে দেখা যেতে পারে। তাদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন আসে কি না, সেটিই দেখার বিষয়। যদি না আসে, তাহলে ভারতকে আটকানো কঠিন হবে।

অন্যদিকে ইংল্যান্ড যেকোনো পরিস্থিতিতে একইভাবে খেলতে চায়, একই গতিতে। প্রতিপক্ষ কারা, খেলাটি কী—সেটি মাথায় রাখতে চায় না। এতে যেমন ঝুঁকি আছে, তেমনি ইতিবাচক দিকও আছে। ছন্দটা ধরে রাখা যায়। এ কারণেই ইংল্যান্ড ভয়ংকর প্রতিপক্ষ।

ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন না এলে ভারতকে আটকানো কঠিন হবে
এএফপি

এ ম্যাচটি দুই দলের জন্যই একরকম ফাইনালের মতো। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দুটি দল। খেলাটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় হবে। এ ম্যাচে কাউকেই ফেবারিট বলা যাবে না। ভারত হয়তো নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছে, কিন্তু ক্রিকেটে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ইংল্যান্ডের মতো দল ভারতকে যেকোনো সময়ে বিপদে ফেলে দিতে পারে।

আশা করি, দুটি সেমিফাইনালই উপভোগ্য হবে। তবে একটা দুঃখ রয়েই গেল। সুযোগ আমাদেরও ছিল সেমিফাইনালে খেলার। আমরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলামও না, পারলামও না।

  • লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক