অস্ট্রেলিয়ানদের মতো করে জিততে চাইতেন না স্টোকস
জনি বেয়ারস্টোর আউটটি নিয়ে এন্তার বিতর্ক লর্ডস টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার জয় ছাপিয়েও দিনের প্রথম সেশনে তাঁর আউটটি আসছে আলোচনায়। ইংলিশ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের ডিসমিসালটি ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী কি না, বিতর্কটা এ নিয়েই। দিনের মধ্যাহ্নবিরতির সময় লং রুমেও এ নিয়ে লেগেছে ধুন্ধুমার। লর্ডসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দর্শকেরা যে জায়গায় বসে খেলা দেখেন, সেখানে সেই ‘আপাত পরিশীলিত’ দর্শকদের সঙ্গেও কথা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ‘কথা-কাটাকাটি’র অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপারটা গড়িয়েছে অনেক দূরই। কারণ, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল এমসিসির কাছে এই ঘটনা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের অভিযোগ, ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে লং রুমের লোকজনই ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজাদের নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন। এমনকি গায়ে ধাক্কা দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে দারুণ ক্ষোভ ইংল্যান্ড দলে। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার ডাক করে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। মনে করেছিলেন বলটা ‘ডেড’ হয়ে গেছে। কিন্তু বল কুড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি বল ছুড়ে ভেঙে দেন স্টাম্প। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা আউটের আবেদন জানান। তবে আউটের আবেদন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরাও ছিলেন কিছুটা দ্বিধান্বিত। আম্পায়াররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য টেলিভিশন আম্পায়ারের সাহায্য চান। তৃতীয় আম্পায়ার জানিয়ে দেন, বেয়ারস্টোকে ‘স্টাম্পিং’ করেছেন ক্যারি।
৩৭১ রানের লক্ষ্যে বেন স্টোকস একাই লড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে। বেন ডাকেট ৮৩ রান করলেও স্টোকসের লড়াইটা অতিমানবীয় প্রায়। তাঁর ১৫৫ রানের ইনিংস আরেকটু বড় হলেই লর্ডস টেস্টের ফল অন্য রকম হতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বেয়ারস্টো থাকলে হয়তো লড়াইটা আরও জমত। স্টোকস হয়তো তখন একটু ধরে খেলতে পারতেন।
৪৩ রানে হেরেছে ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত। তবে ম্যাচ শেষে স্টোকস ইঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া যে জয়টা তুলে নিয়েছে, তিনি অধিনায়ক হিসেবে এমন জয় মোটেও চান না।
বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে বেশ ক্ষোভও ঝরেছে স্টোকসের কণ্ঠে। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘আম্পায়াররা আসলে কখন ওভার হয়েছে এটা ঘোষণা করেন? যখন মাঠের আম্পায়াররা জায়গা থেকে সরেন, তখন কি ধরে নিতে হবে ওভার হয়ে গেছে? আমি ঠিক জানি না। জনি (বেয়ারস্টো) ক্রিজেই ছিল। আম্পায়াররা জায়গা ছাড়ার পর সে-ও ক্রিজ ছেড়েছিল। আমি ওর আউটটি নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না, কারণ ওটা আউট।’
অস্ট্রেলিয়ার জায়গায় থাকলে স্টোকস কী করতেন, সেটাও বলেছেন তিনি বিবিসিকে, ‘আমি যদি প্রতিপক্ষের দলে থাকতাম, তাহলে আমি আম্পায়ারদের জিজ্ঞেস করতাম, তাঁরা ওভার ঘোষণা করেছেন কি না। এটা নিয়ে তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতাম। তাঁদের পুরো বিষয়টি নিয়ে, এর সঙ্গে জড়িত ক্রিকেটীয় চেতনা ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করতাম। তবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্যাপারটা ছিল ম্যাচ জয়ের মুহূর্ত।’
কিন্তু তিনি অধিনায়ক হিসেবে এভাবে জিততে চাইতেন না বলেই জানিয়েছেন, ‘আমি কি ওইভাবে (অস্ট্রেলিয়ানদের মতো) ম্যাচ জিততে চাইতাম? আমার উত্তর হচ্ছে “না”।’
১৫৫ রানের ইনিংসে বাউন্ডারির ঝড় তুলেছিলেন স্টোকস। মেরেছেন নয়টি চার ও নয়টি ছক্কা। ছক্কার আটটিই আজ মারা। তবে তিনি পরিষ্কার করেছেন, বেয়ারস্টোর বিতর্কিত আউটের ক্ষোভ থেকে নয়, তিনি বাউন্ডারির ঝড় তুলেছিলেন ম্যাচের পরিস্থিতি মাথায় রেখেই, ‘আমার ইনিংসটি মোটেও বেয়ারস্টোর ডিসমিসালের ক্ষোভ থেকে নয়। এটা খেলেছি আমি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী। আমি চিন্তাভাবনা করে, কৌশলী হয়েই ঝুঁকিগুলো নিয়েছি। আমি মনে করেছি, ওই পরিস্থিতিতে ফিল্ডারদের দূরে সরিয়ে দিলেই ভালো হবে।’