ভারতের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের অবিশ্বাস্য প্রদর্শনী, ধবলধোলাই বাংলাদেশ

ভারতের রান পাহাড়ে চাপা পড়েছে বাংলাদেশবিসিসিআই
ভারত: ২০ ওভারে ২৯৭/৬
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭
ফল: ভারত ১৩৩ রানে জয়ী

রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজার। কিন্তু আজ হায়দরাবাদের বিশাল এই স্টেডিয়ামের গ্যালারি অর্ধেকও পূর্ণ হলো না। গ্যালারির অনেক আসন ফাঁকা থেকে যাওয়ার অবশ্য কারণ আছে। কাল ছিল দুর্গাপূজার দশমীর রাত। এমন দিনে কষ্ট করে মাঠে এসে ভারত-বাংলাদেশের নিয়ম রক্ষার ম্যাচ কেন দেখতে আসবেন?

তবু ভারতের মাঠে ভারতের খেলা, মাঠে দর্শক আসবেই। কালও এসেছেন প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার। যাঁরা এসেছেন, তাঁরা যে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের সাক্ষী হলেন, সেটি মনে রাখবেন অনেক দিন। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী ম্যাচের আবহ ভুলিয়ে ভারত আগে ব্যাট করে তুলেছে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি করেছেন সঞ্জু স্যামসন, ফিফটি পেয়েছেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব।

দিল্লিতে আগের ম্যাচেই ৯ উইকেটে ২২১ রান করেছিল ভারত। গোয়ালিয়রে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ১২৭ রান ১১.৫ ওভারেই টপকে যায় ভারত। সে ম্যাচে আগে ব্যাট করলেও রানটা নিশ্চিতভাবেই ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারত। আজ তো সেই ২০০ রানকেও ছেলেখেলা বানিয়ে ছাড়ল ভারত। অল্পের জন্যই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে নেপালের করা ৩ উইকেটে ৩১৪ রানের রেকর্ডটা ভাঙতে পারল না ভারত।

সঞ্জু স্যামসন করেছেন সেঞ্চুরি
বিসিসিআই

যা হয়েছে, সেটাও অবশ্য কম কিছু নয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়েছে ভারত, ৬ ওভারে ১ উইকেটে করেছে ৮২ রান। ১০০ ছাড়িয়েছে ৭.১ ওভারে। ১৫০ মাত্র ১০ ওভারে। ১৪ ওভারে ২০০, ১৬.৪ ওভারে ২৫০ হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত থেমেছে ৩০০ থেকে ৩ রান দূরে।

তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশও এই সিরিজে তাদের সেরা ব্যাটিংটা করেছে। তাওহিদ হৃদয়ের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৪২ বলে অপরাজিত ৬৩ রান ও লিটন দাসের ২৫ বলে ৪২ রানের ইনিংসের সৌজন্যে এই সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৩ রানের বড় হারে টেস্টের পর টি-টোয়েন্টিতেও ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ।

সূর্যকুমার যাদব খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস
বিসিসিআই

পাওয়ারপ্লের প্রথম ওভারে শেখ মেহেদী হাসান দিয়েছিলেন ৭ রান। সেই ওভারের পর পাওয়ারপ্লের প্রতি ওভারেই রান এসেছে ১০-এর বেশি, সর্বোচ্চ ১৯। এর মধ্যে তানজিম হাসানের বলে অভিষেক শর্মার উইকেটটি সেই অর্থে বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র সাফল্য। বাকি উইকেটগুলো বাংলাদেশ নেয়নি, ভারত মারতে গিয়ে দিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন

অভিষেকের আউটের পর বোলাররা এসেছেন, বল করেছেন, আর সূর্য-স্যামসন চার-ছক্কা মেরেছেন। দুজন মিলে মাত্র ৭.১ ওভারে দলের রান এক শর ওপারে নিয়ে যান। সঞ্জু ততক্ষণে ফিফটি করে ফেলেছেন, সেটাও মাত্র ২২ বলে, বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো ভারতীয়র দ্রুততম ফিফটি এটি। আগের রেকর্ডটি ছিল রোহিত শর্মার (২৩ বল)। কিছুক্ষণ পর সূর্য ২৩ বলে ফিফটি করে ছুঁয়ে ফেলেন রোহিতকে।

রিশাদ হোসেনকে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরেছেন সঞ্জু স্যামসন
বিসিসিআই

মাঝে তাসকিনের করা ১২তম ওভারে টানা ৪ বলে কোনো বাউন্ডারি হয়নি। ওই ওভারের পরেই স্টেডিয়ামের ডিজে মাইকে বলছিলেন, ‘৪ বলে কোনো বাউন্ডারি নেই! দর্শকেরা, আপনারা কিছু করুন!’ মেহেদীর করা পরের ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেন স্যামসন। শেষ পর্যন্ত স্যামসনের ইনিংস থামে মোস্তাফিজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে। তার আগে ৪৭ বলে ১১টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১১১ রান করেন তিনি।

পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন সূর্যকুমার। তাঁর ৭৫ রান এসেছে ৩৫ বলে, ৮টি চার ও ৫টি ছক্কা ছিল ভারতীয় অধিনায়কের ইনিংসে।
দুজনের বিদায়ের পর চার-ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় যোগ দেন হার্দিক পান্ডিয়া ও রিয়ান পরাগ। দুজন মিলে ভারতকে ১৬.৪ ওভারেই আড়াই শ রানে নিয়ে যান। তখন থেকে স্টেডিয়ামের ডিজের একটাই চিৎকার, ‘ভারত তিন শ! ভারত তিন শ!’ পরাগ ১৩ বলে ৩৪ ও পান্ডিয়া ১৮ বলে ৪৭ করে সে লক্ষ্যটা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। ইনিংসের শেষ দুটি ওভারে মাত্র ১৫ রান করে আসায় রক্ষা!

বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত
বিসিসিআই

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ২০ ওভারে ২৯৭/৬ (সঞ্জু ১১১, সূর্যকুমার ৭৫, পান্ডিয়া ৪৭, পরাগ ৩৪; তানজিম ৩/৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১/২৬, তাসকিন ১/৫১, মোস্তাফিজ ১/৫২)।

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (হৃদয় ৬৩*, লিটন ৪২; বিষ্ণয় ৩/৩০, মায়াঙ্ক ২/৩২)।
ফল: ভারত ১৩৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: ভারত ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সঞ্জু স্যামসন।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: হার্দিক পান্ডিয়া।