আপন শক্তিতে অটল থেকে ম্যাচসেরা রিশাদ
১৫ মাসের ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এ নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেন রিশাদ হোসেন। তবে বিশ্বকাপে আজই রিশাদের প্রথম আবির্ভাব। এমন দিনেই প্রথমবার পেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটের স্বস্তির জয়ে বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুভসূচনা পেয়েছে, তাতে বল হাতে বড় অবদান রেখেছেন রিশাদ। একজন ভালো লেগ স্পিনারের জন্য বাংলাদেশের যে দীর্ঘ দিনের হাহাকার, তা অনেকটাই দূর করেছেন তিনি।
আজ ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডারে ধস নামানোর পর যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, লেগ স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশকে আর চিন্তা করতে হবে না; তিনি ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ হতেই এসেছেন।
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে রিশাদ বললেন, ‘আমি সেরাটা দেওয়া চেষ্টা করেছি এবং নিজের শক্তির জায়গায় অটল থাকতে চেয়েছি।’
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা ১৪ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়েছে ১০০ রান তুলে ফেলেছিল। উইকেটে ছিলেন দুই থিতু ব্যাটসম্যান চারিত আসালাঙ্কা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। শেষ ৬ ওভারে রানের গতি বাড়িয়ে দলের ১৫০-এর ওপারে নিয়ে যাবেন—এমন পরিকল্পনাই নিশ্চয় করে রেখেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু ইনিংসের ১৫তম ওভারে নিজের শেষ স্পেল করতে এসে আসালাঙ্কা-ধনাঞ্জয়ার সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন রিশাদ। প্রথম ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা এই দীর্ঘদেহী লিগ স্পিনার পরের ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন কার্যত সেখানেই শেষ! ম্যাচের মোমেন্টামও বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়েছে জাদুকরী ওই স্পেলটায়।
ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই রিশাদকে স্লগ সুইপে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন আসালাঙ্কা। পরের বলে লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে রিশাদ যেভাবে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান, তা বহু দিন মনে রাখবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। একদম জাত লেগ স্পিনারের মতোই বল ফেলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে, তা কয়েক ডিগ্রি বাঁক খাওয়ার পর হাসারাঙ্গার ব্যাটে আলতো ছোঁয়া দিয়ে জমা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে।
বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনারের এভাবে উইকেট পাওয়ার দৃশ্য সর্বশেষ কবে দেখা গেছে কিংবা এর আগে আদৌ দেখা গেছে কি না, তা বয়োজ্যেষ্ঠরাই ভালো বলতে পারবেন।
রিশাদের হ্যাটট্রিক বলটা সামলাতে আসেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের বলটা তিনি ডিফেন্স করেন। তবে পরের ওভারে বল করতে এসে লঙ্কানদের আরও বড় ধাক্কা দেন রিশাদ। ২১ বছর বয়সী স্পিনার এবার ফ্লাইট লেগব্রেক দিয়ে প্রলুব্ধ করেন ধনাঞ্জয়াকে। স্টাম্পড হয়ে ফিরতে হয় তাঁকে।
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো বলটি নিয়ে রিশাদ বলেছেন, ‘হ্যাটট্রিক ডেলিভারির সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছি এবং ভালো জায়গায় বল ফেলার চেষ্টা করেছি।’