৩৯ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে সিরিজ জেতালেন নোমান–সাজিদ
পাকিস্তান সফরে ইংল্যান্ডের শুরু আর শেষ যেন একেবারে উত্তর-দক্ষিণ। মুলতানে প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে যে ইংল্যান্ড ৮২৩ রান করেছিল, সেই দলটিই পরের দুই টেস্টে ৪ ইনিংস মিলিয়ে তুলেছে মোট ৮১৪ রান।
তাতে মুলতানে দ্বিতীয় টেস্টে ১৫২ রানে হারা ইংল্যান্ড রাওয়ালপিন্ডিতেও হেরেছে ৯ উইকেটে। সিরিজও হারল ২-১ ব্যবধানে। সিরিজের শেষ টেস্টে আজ তৃতীয় দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১১২ রানে। তাতে জয়ের জন্য পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩৬। এই ম্যাচ হারার মতো পাকিস্তান এতটাও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দলও নয়! লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের লেগেছে মাত্র ১৯ বল।
২০২১ সালের পর ঘরের মাঠে এই প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতল পাকিস্তান। টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ও দেশের মাটিতে প্রথমবার পিছিয়ে থেকে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর শেষ দুই টেস্ট জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল পাকিস্তান। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
দলকে এবার সিরিজ জিতিয়েছেন মোটাদাগে দুজন—নোমান আলী ও সাজিদ খান। শেষ দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৯টিই পেয়েছেন এই দুই স্পিনার। অন্য একটি উইকেট পেয়েছেন যিনি, স্পিনার তিনিও—জাহিদ মেহমুদ।
অবশ্য পাকিস্তানের পেসাররা উইকেট পাবেনই বা কীভাবে? উইকেট পেতে তো বোলিং করতে হবে! মুলতানে দ্বিতীয় টেস্টে ৬ ওভার বোলিং করা পেসার আমির জামালকে রাওয়ালপিন্ডিতে ১ ওভার বোলিংও করাননি অধিনায়ক শান মাসুদ। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। সব মিলিয়ে এই সিরিজে স্পিনাররা উইকেট নিয়েছেন ৭৩টি। পাকিস্তানের মাটিতে এক সিরিজে যা সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ৭১, সেটি দেখা গেছে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে।
স্পিনারদের প্রশংসা করতে করতে সৌদ শাকিলের নামটা ভুলে গেলে চলবে না। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে তাঁর সেঞ্চুরিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সেই ইনিংসে কখনো মোহাম্মদ রিজওয়ান, কখনো আমির, কখনো নোমান-সাজিদকে নিয়ে ইনিংস টেনেছেন। পাকিস্তানকে এনে দেন ৭৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড।
১৩৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরাও তিনি। ইংল্যান্ড মূলত শাকিলের মতোই কাউকে খুঁজছিল। তবে ৭৭ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে কেউ শাকিল হতে পারেননি।
৩ উইকেটে ২৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। ক্রিজে ছিলেন জো রুট ও হ্যারি ব্রুক। ২৬ রানে ব্রুক নোমানের বলে আউট হলে ব্যাটিং ধসের শুরু হয়। শেষ ৪৬ রানে ইংল্যান্ড হারায় ৭ উইকেট। রুট করেছিলেন ৩৩।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া সাজিদ দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। তাতে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম স্পিনার হিসেবে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন এই স্পিনার। সব মিলিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে এটি তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার। ১৯ উইকেট আর ৭২ রান করে সাজিদই সিরিজসেরা।
ক্রিকেটারদের পাশাপাশি এই সিরিজ জয়ে পিসিবিও কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। নতুন নির্বাচকেরা এসে দলকে নতুন করে সাজিয়েছেন। বাবর আজমের মতো তারকা ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। পুরোপুরি স্পিনিং উইকেটে খেলার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তারা। এমন ঝুঁকি নেওয়ার সাহসেই জয়ের পথে ফিরেছে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ২৬৭ ও ১১২/১০ (রুট ৩৩, ব্রুক ২৬; নোমান ৬/৪২, সাজিদ ৪/৬৯)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৪৪ ও ৩৭/১ ( মাসুদ ২৩*, সাইম ৮; ১/২৭)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে জয়ী পাকিস্তান
ম্যাচসেরা: সৌদ শাকিল
সিরিজসেরা: সাজিদ খান