রিজওয়ানদের উর্দুতে কথা বলতে দিচ্ছেন না তাঁরা
‘এক শোয়েব বশিরে রক্ষা নেই, রেহান আহমেদ দোসর’—পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এমনটা ভাবতেই পারেন!
বৃহস্পতিবার শুরু রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে কোন ১১ জন খেলবেন, সেটি দুই দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন স্টোকস-ম্যাককালামরা। সেই ১১ জনের নাম দেখার পর পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের শোয়েব-রেহানকে নিয়ে আলাদা করে ভাবারই কথা।
শোয়েব ও রেহানের স্পিন কীভাবে সামলাবেন, সেই ভাবনা তো আছেই; মোহাম্মদ রিজওয়ান-শান মাসুদদের ভাবতে হচ্ছে কী ভাষায় কথা বলবেন, তা নিয়েও। ওই দুজনের সামনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষায় কথা বললে যে তাঁদের ‘গোপন পরিকল্পনা’ ফাঁস হয়ে যাবে।
অফ স্পিনার শোয়েব বশির ও লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ—দুজনই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তাঁদের পরিবারের অনেকেই এখনো পাকিস্তানে বাস করেন। যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করলেও তাই শোয়েব-রেহানরা উর্দুটা খুব ভালোই বোঝেন। পাকিস্তান ‘বিপদে’ আছে শোয়েব-রেহানের এই উর্দুজ্ঞান নিয়েই।
বিবিসির ক্রিকেট–বিষয়ক অনুষ্ঠান টেস্ট ম্যাচ স্পেশালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোয়েব-রেহানরা উর্দু ভাষা, পরিবার ও ধর্মচর্চা নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেই উঠে এসেছে রিজওয়ানদের ভাষা–সমস্যায় ফেলার কথা।
শোয়েব ও রেহান—দুজনের পূর্বপুরুষের বাড়িই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের মিরপুর অঞ্চলে। সেখানকার লোকজনের প্রধান ভাষা পোথওয়ারি। শোয়েব-রেহানরা সেই ভাষা তো জানেনই, পাকিস্তানের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা উর্দুও ভালো বোঝেন।
প্রথম দুই টেস্টে দলে না থাকা রেহান বললেন তিনি কতটা উর্দু ভালো বোঝেন, ‘আমার উর্দু অতটা খারাপ নয়। ঠিকই আছে। আমি এ ভাষায় কথা চালিয়ে যেতে পারি, তবে সেটি একটু মিশ্র ভাষায় (ইংরেজি+উর্দু) হবে। অবশ্য বুঝতে পারি পুরোপুরিই।’
মোহাম্মদ রিজওয়ান তো স্টাম্পের পেছনে সারাক্ষণই কথা বলতে থাকে। আমি যখন ব্যাটিংয়ে নামলাম, সে বলল ‘‘এই ছেলে তো উর্দু বোঝে, চল আমরা পশতুতে কথা বলি।’’ এরপর তারা কী বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।
মুলতানে প্রথম দুই টেস্টের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে শোয়েব জানান, ইংল্যান্ড দলে তাঁর উপস্থিতি কতটা ঝামেলায় ফেলেছে পাকিস্তান দলকে, ‘রেহানের মতোই অবস্থা আমার। সবকিছুই বুঝি, একটু ভাঙা ভাষায় উত্তরও দিতে পারি। পাকিস্তান দল যখন নিজেদের ভাষায় আলোচনা করে, বোঝার চেষ্টা করি। আমি হয়তো বেন স্টোকসকে গিয়ে বলি ‘‘সে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে স্লগ করতে যাচ্ছে।’’’
শোয়েব বলেন, তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, পাকিস্তানিরা সেই সময়েই বেশি বিরক্ত হয়, ‘মোহাম্মদ রিজওয়ান তো স্টাম্পের পেছনে সারাক্ষণই কথা বলতে থাকে। আমি যখন ব্যাটিংয়ে নামলাম, সে বলল ‘‘এই ছেলে তো উর্দু বোঝে, চল আমরা পশতুতে কথা বলি।’’ এরপর তারা কী বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।’
রেহানের বাবা নাঈম আহমেদ মুলতানে প্রথম ম্যাচটি দেখেছেন গ্যালারিতে বসেই। তবে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য জয়ের মুহূর্তে গ্যালারিতে ছিলেন না তিনি। রেহান জানান, ম্যাচটা ড্র হবে ভেবেই চার ঘণ্টা দূরত্বের গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ওই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারে পাকিস্তান। ইংল্যান্ড একমাত্র ইনিংসে করেছিল ৮ শর বেশির রান। রেহানের দাদি ও চাচারা থাকেন পাকিস্তানেই। তাঁদের সঙ্গেও দেখা করেছেন ২০ বছর বয়সী বোলার।
শোয়েব-রেহান দুজনই নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। রেহান জানান, এই সফরে পাকিস্তান দলের সঙ্গেই জুমার নামাজ পড়েছেন দুজন।