ডি ভিলিয়ার্সও চমকে উঠেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দল দেখে
১৪ জনের দলে ৭ জনেরই এখনো অভিষেক হয়নি—নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজের জন্য এমন দলই ঘোষণা করেছে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ)। এত বেশি অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারে ভরা দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দল দেখে চমকে উঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, আগামী মাসে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পাওয়া কোনো কোনো ক্রিকেটারকে তিনিও চেনেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচি ভিন্নভাবে সাজানো গেলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে বলে ধারণা ডি ভিলিয়ার্সের।
নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য অনভিজ্ঞ দল ঘোষণার পর প্রবলভাবে সমালোচিত হয়েছে সিএসএ। টেস্টের তুলনায় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এসএ টোয়েন্টিকে প্রাধান্য দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা—এমনটাই সমালোচনার মূল ভাষা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ তো এটাও বলেছেন, তিনি নিউজিল্যান্ডের হলে সিরিজটা খেলতেন না।
এ নিয়ে পরে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে সিএসএ। এসএ টোয়েন্টি ও নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজের সূচি সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি জানায়, তারা টেস্ট সিরিজ পেছানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়াতে একটি পথ বেছে নিতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ শুকরি কনরাড একধাপ এগিয়ে বলেছেন, টি–টোয়েন্টি লিগ না হলে টেস্টও থাকবে না।
বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন তোলা বিষয়টি নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। অধিনায়ক নিল ব্রান্ডসহ অর্ধেক খেলোয়াড়ই এখনো অভিষেকের অপেক্ষায় থাকার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহজুড়ে একটা বিতর্ক বড় করে দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটি দল ঘোষণা করেছে, যে দলের নামগুলো অনেক মানুষই চেনেন না। এ বিষয়ে কথা বলাটা আমার জন্য কঠিন। তবে যেটা বলার, অনেকেই আছে নতুন, নিল ব্রান্ড অধিনায়ক... দক্ষিণ আফ্রিকা এই দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডে যাবে শুনে আমি প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম।’
অধিনায়কসহ যে ৭ ক্রিকেটার প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলার অপেক্ষায়, তাঁদের কাউকে কাউকে চেনেনও না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক, ‘এদের কয়েকজনকে আমিই চিনি না। আর কয়েকজন আছে, বেশ কিছু চার দিনের ম্যাচ খেলেছে, তাদের আমি চিনি। তারা নিজেদের জায়গা আদায় করে নিয়েছে।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টির কারণে আনকোরাদের টেস্ট খেলতে পাঠানোর বিষয়টি যে ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণকে চাপে ফেলে দিচ্ছে, সেটিও উঠে এসেছে ১১৪ টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যানের কণ্ঠে, ‘এটা (নিউজিল্যান্ড সফরের দক্ষিণ আফ্রিকা দল) ক্রিকেটবিশ্বে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এতে পরিষ্কার যে টেস্ট ক্রিকেট এখন চাপে আছে, এমনকি ওয়ানডেও। ক্রিকেটের পুরো চক্রটিই এখন টি–টোয়েন্টির দিকে ঘুরে গেছে।’
ডি ভিলিয়ার্স অবশ্য টি–টোয়েন্টির ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়া নিয়ে কাউকে দায়ী করছেন না। তাঁর মতে, জীবন ধারণের জন্য অর্থ আয়ের স্বাভাবিক প্রবণতাই পরিস্থিতি এ দিকে টেনে নিচ্ছে, ‘টাকাই এখানে মুখ্য। এখনকার দিনে ক্রিকেট হচ্ছে ব্যবসা। আর টাকা আছে টি–টোয়েন্টিতে। এখানে ভুলের কিছু নেই। কারণ, সবারই আর্থিক পরিস্থিতি ভালো থাকা দরকার।’
টেস্ট ও টি–টোয়েন্টির সাংঘর্ষিকতা রোধ করতে কী করতে হবে, এ বিষয়ে নিজের পুরোনো কথা তুলে ধরে ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘কয়েক বছর আগে অন্য কয়েকজনের সঙ্গে আমিও বলেছিলাম, বিষয়টিতে আইসিসির নজর দেওয়া দরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচির দিকে তাকানো দরকার। নয়তো টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট সবকিছুর জায়গা নিয়ে নেবে। খেলোয়াড়, বোর্ড ও কোচিং স্টাফের লোকেরা যেখানে টাকা, সেখানে ছুটবে।’