১০ উইকেট পেয়ে তাইজুলের দৃষ্টি আরও ভালো কিছুতে
এক টেস্টে ১০ উইকেট এ নিয়ে দুবার পেলেন তাইজুল ইসলাম। দুবারই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মজার ব্যাপার হলো, সিলেটের এই মাঠে এখন পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচই হয়েছে দুটি!
২০১৮ সালের নভেম্বরে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক সিলেটের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই টেস্টে বাংলাদেশ ১৫১ রানে হেরে গেলেও দুই ইনিংসে তাইজুল উইকেট পেয়েছিলেন ৬টি ও ৫টি করে মোট ১১টি। পাঁচ বছর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ শেষ হওয়া সিলেটের দ্বিতীয় টেস্টেও হার–জিতের ব্যবধান ১৫০ রান। তবে এবার জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ এবং সেই জয়ে তাইজুলের অবদান দুই ইনিংসে ১০ উইকেট। সিলেটের মাটির ভাষা যেন মুখস্থই হয়ে গেছে তাঁর!
কাল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েই দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তাইজুল। আজ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েও তাই আর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এলেন না। কথাবার্তা যা বলার, ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই বলেছেন। পরে ড্রেসিংরুমের সামনেও মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের।
স্বল্পভাষী তাইজুল সেখানেই জানিয়েছেন ১০ উইকেট নিয়ে তাঁর ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার প্রতিক্রিয়া। যদিও সীমিত সে প্রতিক্রিয়ায় নিজের চেয়ে দলের কথাই বেশি বললেন অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনার, ‘যখন আপনি অনেক বড় কিছু পাবেন, তখন উদ্যাপন সব সময়ই হয়। আমরা যে আজকে উদ্যাপন করিনি, তা নয়। অবশ্যই আমরা উদ্যাপন করেছি, মাঠের মধ্যে বা ড্রেসিংরুমে—সব জায়গাতেই। কিন্তু একটা জিনিস কি, আমরা ওটার জন্যই অপেক্ষা করছি, যেন আরও ভালো কিছু পাই।’
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দুই রকম ছায়া আছে তাইজুলের ওপর। সাকিব যেমন বাঁহাতি স্পিনার, তাইজুলও তা–ই। দলীয় সমন্বয়ের কারণে তাই সাকিব থাকলে অনেক সময় একাদশে জায়গা হয় না তাইজুলের। ভালো বোলিং করলে বেশির ভাগ সময় তাঁকে করা প্রশ্নগুলোর শুরুটা হয় এমন, ‘সাকিবের অনুপস্থিতিতে...।’ দলে তাইজুলের ভূমিকাটাই যেন সাকিবের ‘ডামি’ হিসেবে!
অন্যদিকে জাতীয় দলে তামিমের ঘনিষ্ঠ সহচরই বলা যায় তাইজুলকে। দলে সম্ভবত তামিমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ তিনিই। কাল ম্যাচ শেষে তাইজুল জানালেন, সিলেট টেস্টের মধ্যে সাকিব, তামিম দুজনই ফোন করেছিলেন তাঁকে, শুভকামনা জানিয়েছেন। ‘সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কালকে ফোনে কথা হয়েছিল। সাকিব ভাই–ই ফোন দিয়েছিলেন। তামিম ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তামিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার বড় ভাইয়ের মতোই মনে করি’—বলছিলেন তাইজুল।
টেস্টে বোলার তাইজুলের সামর্থ্য নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন থাকা উচিত নয় তাঁর ওয়ানডের সামর্থ্য নিয়েও। তবু দলীয় সমন্বয়ের যোগ–বিয়োগে এই সংস্করণে তাঁর খেলার সুযোগ অনেক কমই হয়। ৯ বছরে মাত্র ১৮টি ওয়ানডে খেলেছেন, তবে উইকেটশূন্য থেকেছেন মাত্র তিন ম্যাচে। তবু নিউজিল্যান্ড সফরের দলে নিজের নাম না দেখে কাল দিন শেষে একটু হতাশাই প্রকাশ করেছিলেন তাইজুল, ‘আফসোস সবারই থাকে। আমারও আফসোস আছে। কাল (পরশু) তো দল দিয়েছে, হয়তো দেখেছেন। আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।’
আজ সে রকমই এক প্রসঙ্গে অবশ্য হতাশাটা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তাইজুল, ‘কোনো খেলোয়াড়ই সারা জীবন খেলবে না। আমার একটাই আশা, আমি থাকব না, আমার জায়গায় যে আসবে, সে পারফর্ম করবে। যেই-ই আসুক, যেন বাংলাদেশকে ভালো কিছু দিতে পারে।’
৩১ বছর বয়স একজন স্পিনারের জন্য কিছুই নয়, যদি তিনি ফর্মটা ধরে রাখতে পারেন। তাইজুল তবু মাঝেমধ্যেই মনে করিয়ে দেন, তিনি এখনো ‘বুড়ো’ হয়ে যাননি। সেটা অবশ্য তিনি মাঠের পারফরম্যান্সেও জানিয়ে দেন বারবার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ শেষ হওয়া সিলেট টেস্টে দুই ইনিংসে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলমান সিলেট টেস্ট পর্যন্ত ১৪টি টেস্ট খেলে ৭২ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল, একবার ৭ উইকেটসহ ৫ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন ৫ বার। ক্যারিয়ারের ৯ বছর পার করে যত অভিজ্ঞ হচ্ছেন, বল হাতে ততই নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দেখা দিচ্ছেন তিনি।
তবে একটু চুপচাপ, নির্বিবাদী মানুষ বলেই কি না, অনেক কিছুতেই তিনি আড়ালে পড়ে থাকেন। মাঠে উইকেট পাওয়ার আনন্দে প্রায়ই বুনো উল্লাস করতে দেখা যায়, কিন্তু মাঠের বাইরে একেবারেই শান্ত–সাধারণ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৯টি বছর পার করেও যে কারণে দলের ‘লিডারশিপ গ্রুপে’র আলোচনায় তাঁর কথা সেভাবে আসে না। গত দেড়–দুই বছর ধরে বিভিন্ন সংস্করণে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব নিয়ে যে এত আলোচনা হচ্ছে, সেখানেও উঠতে শোনা যায়নি তাইজুলের নাম।
তাইজুলের অবশ্য এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। দলের যখন যেটা প্রয়োজন, সেটা তো করেই দিচ্ছেন! এর চেয়ে আর বেশি কিছু যেন তাঁরও চাওয়ার নেই।