মুমিনুলও জানেন না সিলেটে কত রান নিরাপদ
‘ম্যাচে তো ফলাফল হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে...’, এটুকু বলার পরই প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে মুমিনুল হক বলে উঠলেন, ‘রেজাল্ট হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
হ্যাঁ, এই একটা বিষয়ে যাঁরা ম্যাচটা খেলছেন, তাঁদের কোনো সন্দেহ নেই। কোনো দৈব-দুর্বিপাকে খেলা বন্ধ না হয়ে গেলে সিলেট টেস্ট যে ফলাফল দেখতে যাচ্ছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। প্রশ্ন হলো, তা কোন দলকে আনন্দে ভাসাবে।
তৃতীয় দিন শেষে হাতে ৭ উইকেট রেখে ২০৫ রান লিড নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশই চালকের আসনে। সিলেটের উইকেট কাল তৃতীয় দিনে প্রথম দুই দিনের মতো ব্যাটসম্যানদের খুব বেশি ভোগায়নি। আগামী দুই দিন সেটা কেমন হবে কে জানে, তবে উইকেট চরিত্র কিছু বদলালে তা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষেই যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লিড যত বাড়াবে, ততই ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে থাকবে।
আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে, উইকেট ভালো। ৪০০-ও হতে পারে, সাড়ে ৩০০-ও হতে পারে। কালকের (আজ) ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। কাল (আজ) চতুর্থ দিন, উইকেট অন্য রকম আচরণও করতে পারে।
বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৪০ রান করে দিন শেষে সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের প্রতিনিধি হয়ে। ম্যাচের ফলাফল নিজেদের দিকে আনতে হলে কী করতে হবে জানতে চাওয়ায় বলেছেন, ‘স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেললেই ভালো। যত পারা যায় ওদের দিক থেকে খেলা নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটটাই এমন। স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে হবে। এরপর ধৈর্য ধরে বোলিং করে যেতে হবে।’
প্রথম ইনিংসে দুই দলের রানের ব্যবধান মাত্র ৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসটা তাই যেন একটা আলাদা ম্যাচেই পরিণত হয়েছে। প্রথম ইনিংসের হিসাব-নিকাশ ভুলে এক ইনিংসের ‘এই ম্যাচে’ যারা বলে-ব্যাটে আধিপত্য দেখাবে তারাই জিতবে টেস্ট। তবে নিউজিল্যান্ডকে অন্তত কত রানের লক্ষ্য দিলে নিরাপদ থাকা যাবে, সে ব্যাপারে মুমিনুলের কাছেও নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই, ‘এটা বলা খুব কঠিন। আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে, উইকেট ভালো। ৪০০-ও হতে পারে, সাড়ে ৩০০-ও হতে পারে। কালকের (আজ) ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। কাল (আজ) চতুর্থ দিন, উইকেট অন্য রকম আচরণও করতে পারে।’
অবশ্য উইকেট যেমনই হোক, বাংলাদেশ যদি ৪০০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে তাহলে আর নিউজিল্যান্ডের কোনো আশা নেই বলেই মনে হচ্ছে মুমিনুলের। এটা বলতে অবশ্য ৫৮ টেস্ট খেলা মুমিনুল হক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ তাড়া করে জেতা কতটা কঠিন, সেটি ক্রিকেট অনুসরণকারী মাত্রই জানেন। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ রান করে জয়ের উদাহরণই তো মাত্র চারটি।
তবে প্রতিপক্ষকে ৩৯৫ রানের লক্ষ্য দিয়েও কিন্তু হারার উদাহরণ আছে বাংলাদেশের। সেটিও খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, আর সেই অভিজ্ঞতা দেশের মাটিতেই হয়েছে মুমিনুলদের। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেকের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২১০ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন কাইল মায়ার্স।
সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন কাইল জেমিসন। সিলেটে চতুর্থ ইনিংসে কত রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতা সম্ভব, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো তাঁকেও। একজন ব্যাটসম্যান হয়েও এ নিয়ে যখন মুমিনুলই পরিষ্কার কিছু বলতে পারছেন না, সেখানে পেসার জেমিসন কীভাবে বলবেন! এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তরটাও হলো একজন পেসারের মতোই, ‘প্রশ্নটা ব্যাটসম্যানদের কাউকে করলেই বোধ হয় ভালো হবে। এ নিয়ে আমার কোনো ধারণাই নেই।’
মুমিনুলের মতো তিনিও তা-ই ভাবছেন, ম্যাচটাকে যতটা সম্ভব নিজেদের দিকে নিয়ে আসা যায়। সে কাজটা যে প্রথমে নিউজিল্যান্ডের বোলারদেরই করতে হবে, তা তো জেমিসন জানেনই, ‘শুরুতেই যদি আমরা কিছু উইকেট নিয়ে নিতে পারি, তাহলেই আমরা পারব আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য লক্ষ্যটা সহজ রাখতে।’
অবশ্য সে রকম কিছু যে খুব সহজে হয়ে যাবে, তা সম্ভবত জেমিসনও আশা করছেন না। সিলেটের উইকেটকে যে তাঁর কাছে এদিন ব্যাটসম্যানদের বন্ধুই মনে হয়েছে!