বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচ এখনো কষ্ট দেয়
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাইদের জন্য শুভকামনাই থাকবে। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ এবার ভালোই করবে। শান্ত ভাইয়ের নেতৃত্বে (নাজমুল হোসেন) এবারের দলটির ভেতরের পরিবেশ খুব ভালো। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ভেতরে কিছুটা সমস্যা ছিল, এবার সেটা নেই বলেই মনে হয়। সবাইকে খুব চনমনেই মনে হচ্ছে।
ভারতে ২০১৬ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা খুব মনে পড়ে। সেবার মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও চলছিল একই সঙ্গে। বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচটা কোনো দিন ভুলব না। গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে জিততে হেরে গেল।
আমরা সবাই হোটেলে বসে খেলাটা দেখছিলাম। রোমাঞ্চকর সেই অনুভূতি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারতের মাটিতে ভারতকে হারাবে, সেই স্বপ্ন নিয়েই খেলা দেখছিলাম। প্রায় জিতেই তো গিয়েছিল। ওই ম্যাচটা যে বাংলাদেশ হেরে যাবে, সেটি ছিল অবিশ্বাস্য ঘটনা। খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। মনে আছে, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) আউট হয়ে যাওয়ার পর শেষ বলে শুভাগতদাও আউট হয়ে গেেলন। স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। শুধু আমি কেন, দেশের কোনো খেলাপ্রেমীই বোধ হয়, সেই ম্যাচটার কথা কোনো দিন ভুলতে পারবেন না। ওই দিনটার কথা মনে হলে, ওই ম্যাচটার কথা মনে হলে আমার এখনো মন খারাপ হয়। ভাগ্য আমাদের পক্ষে থাকলে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে বাংলাদেশ দল উল্লাসে মেতে উঠতেই পারত।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে অতীত স্মৃতির কথা মনে করলে সবার আগে বেঙ্গালুরুর ওই ম্যাচটিই মনে পড়ে। এত বছর পরও মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়াতে ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটির কথাও মনে পড়ে। লিটনদা (দাস) কী অসাধারণ ব্যাটিংটাই না করেছিলেন! বৃষ্টি বাগড়া না দিলে হয়তো আমরাই জিততাম। ওই ম্যাচটা নিয়েও আক্ষেপ আছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল। নেদারল্যান্ডস হঠাৎ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানকে হারালেই আমরা সেমিফাইনালে যেতাম। প্রত্যাশা ছিল দল জিতবে, কিন্তু হয়নি। আসলে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেন যে বাংলাদেশ কখনোই সেভাবে ভালো করতে পারে না, এটা বুঝি না।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাইদের জন্য শুভকামনাই থাকবে। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এবার ভালোই করবে। শান্ত ভাইয়ের নেতৃত্বে (নাজমুল হোসেন) এবারের দলটির ভেতরের পরিবেশ খুব ভালো।
আমাদের মেয়েদের দলও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারে না। এই সংস্করণটাতে আমরা খুব বেশি হোঁচট খাই। এটা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছি সবাই মিলে আশা করছি সামনে ভালো কিছুই হবে। ছেলেদের দলে তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী, তানজিদ তামিম, রিশাদ হোসেনের মতো দারুণ সব খেলোয়াড় বেরিয়ে এসেছে। আশা করছি এবার যুক্তরাষ্ট্রের আসরে এই তরুণেরাই বাংলাদেশ দলকে পথ দেখাবে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাইদের জন্য শুভকামনাই থাকবে। কেন যেন আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এবার ভালোই করবে। শান্ত ভাইয়ের নেতৃত্বে (নাজমুল হোসেন) এবারের দলটির ভেতরের পরিবেশ খুব ভালো। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ভেতরে কিছুটা সমস্যা ছিল, এবার সেটা নেই বলেই মনে হয়। সবাইকে খুব চনমনেই মনে হচ্ছে। তবে বিশ্বকাপের ঠিক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা সঠিক প্রস্তুতির সহায়ক হলো কি না, সেটি নিয়ে ভাবছি। শেষ তিনটি ম্যাচ ভালো হয়নি। শেষ ম্যাচে তো দল হেরেই গেল। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিশ্বকাপের আগে সিরিজ আরও একটু ভালো দলের সঙ্গে হলেই বোধ হয় ভালো হতো। এবারের আইপিএলে যা দেখছি, প্রচুর রান হচ্ছে, কিন্তু আমরা সেভাবে রান করতে পারি না। এটাই চিন্তার বিষয়। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে তো আগে ব্যাটিং করলে ১৮০–১৯০–২০০ করা উচিত ছিল। আমার মনে হয়, টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটা খুব ভালো করেই মাথায় রেখেছে। এখন টি–টোয়েন্টিতে ভালো করতে হলে রানের বন্যা বইয়ে দিতে হবে। আমরা এ জায়গাটাতে বেশ পিছিয়ে আছি। তবে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আশা করছি তরুণেরা জ্বলে উঠবেন। বাংলাদেশ দলকে ভালো করতে হলে তরুণদের ভালো করতেই হবে—এর কোনো বিকল্প নেই।
সামনে মেয়েদেরও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যা দেশের মাটিতেই হবে। সেদিকেই তাকিয়ে আমরা। অধিনায়ক হিসেবে মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েই ভাবছি। আশা করছি, আমাদের ভাইয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ করবে, যেটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আমার শুভকামনা।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক