টাকারের সেঞ্চুরি, টেক্টর-ম্যাকব্রাইনের ফিফটিতে বাংলাদেশের হতাশার দিন
২৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ৮ উইকেটে ২৮৬ রান, দ্বিতীয় দিনই টেস্ট হারের শঙ্কায় পড়ে যাওয়ার পর ১৩১ রানের এগিয়ে যাওয়া, এখনো বাকি ২ উইকেট—মিরপুর টেস্টে তৃতীয় দিন অনেক কিছুই বদলে দিল আয়ারল্যান্ড।
অভিষেক ম্যাচে লোরকান টাকারের সেঞ্চুরি, হ্যারি টেক্টরের পর অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের ফিফটিতে তৃতীয় দিন দারুণ লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার বছর পর টেস্ট খেলতে নামা দলটি। ফলে বাংলাদেশ কাটিয়েছে হতাশাময় এক দিন। উইকেটে তেমন সহায়তা ছিল না বোলারদের, বিশেষ করে পেসারদের জন্য। কিন্তু ক্রমাগত লাইন-লেংথ ধরে রেখে চাপ তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশ বোলাররাও।
৮৯ রান নিয়ে শেষ সেশনে নামা টাকার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৪৯ বলে, তাইজুলকে কাভার দিয়ে চার মেরে। কেভিন ও’ব্রায়েনের পর দ্বিতীয় আইরিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক সেঞ্চুরি করেন তিনি। ইনিংসের শুরু থেকেই বেশ ইতিবাচক ছিলেন, পেস বা স্পিনে তাঁর পায়ের ব্যবহারও ছিল দারুণ।
১০৮ রানের ইনিংসে ১৪টি চারের সঙ্গে মারেন একটি ছক্কা। কেন আইরিশ ক্রিকেটের অন্যতম ভবিষ্যৎ ভাবা হয় তাঁকে, এ ইনিংসে আরেকবার সেটিই যেন বোঝালেন টাকার।
ইবাদতের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ড্রাইভে শর্ট এক্সট্রা কাভারে শরীফুলের কাছে ক্যাচ গেলে থামে টাকারের ইনিংস। ভাঙে ম্যাকব্রাইনের সঙ্গে তাঁর ১১১ রানের জুটিও, টেস্টে সপ্তম উইকেটে আয়ারল্যান্ডের যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
টাকার ফেরার পরও দমেননি ম্যাকব্রাইন। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন, মার্ক এডেয়ারের সঙ্গে অষ্টম উইকেট জুটিতে যোগ করেন আরও ৩১ রান। ক্ল্যাসিক অফ স্পিন ডেলিভারিতে এডেয়ারকে ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন তাইজুল। তবে গ্রাহাম হিউমকে নিয়ে ম্যাকব্রাইন প্রতিরোধ গড়েন দিনের বাকিটা সময়।
আয়ারল্যান্ড ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল ম্যাকব্রাইন মনে করিয়ে দিয়েছিলেন--হিউমের মতো ব্যাটসম্যান দশে ব্যাটিং করেন। আয়ারল্যান্ডের দুর্দান্ত এক দিনে ম্যাকব্রাইনের সঙ্গে তাই অবদান রাখলেন সেই হিউমও। দিন শেষে ম্যাকব্রাইন অপরাজিত ৭১ রানে, হিউম ব্যাটিং করছিলেন ৯ রান নিয়ে।
দ্বিতীয় দিনের শুরুটাই বাংলাদেশের জন্য হয়েছিল হতাশার, দ্বিতীয় ওভারেই লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তখন ৯ রানে ব্যাটিং করা টেক্টর। প্রথম সেশনে শুধু পিটার মুরের উইকেটই প্রাপ্তি ছিল বাংলাদেশের।
গতকাল শেষ সেশনের পর আজ প্রথম ঘণ্টা মিলিয়ে প্রায় ২৬ ওভার ব্যাটিং করে মুর ও টেক্টরের জুটি, যাতে ওঠে মাত্র ৩৮ রান। সে সময় ক্রিজে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য ছিল তাঁদের। তবে প্রথম ঘণ্টার পানি-পানের বিরতির ঠিক আগে শরীফুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ব্যাট চালিয়ে কট-বিহাইন্ড হন ৭৮ বলে ১৬ রান করা মুর, যে বলটি চাইলে অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন তিনি।
টাকারের সঙ্গে পরে টেক্টরের জুটিতে অবশ্য ওঠে ৭২ রান। দুজনের জুটির শুরুটা তুলনামূলক দ্রুতগতির ও ইতিবাচকই ছিল। ৬২ রানে পিছিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় সফরকারীরা। বিরতির পর ম্যাচ ও ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন টেক্টর, খালেদ আহমেদকে চার মেরে।
মধ্যাহ্নবিরতির পর বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন তাইজুল ইসলাম। তাঁর ফুল লেংথের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হন টেক্টর, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও স্পিনে ভুল শট খেলে ফিরতে হলো তাঁকে। এর আগে একবার তাঁর বিপক্ষে নেওয়া রিভিউ ব্যর্থও হয়েছিল বাংলাদেশের।
অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে নিয়েও অবশ্য ইতিবাচক থাকেন টাকার। তাইজুলের বলে লেগসাইডে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পান তিনি। ঠিক পরের ওভারেই মিরাজকে ডাউন দা গ্রাউন্ডে এসে ছক্কা মারেন লং অনের ওপর দিয়ে। ৯৪ বলে ফিফটি করেছিলেন টাকার, চা-বিরতিতে যাওয়ার আগপর্যন্ত পরের ৩৯ রান করেন ৩৮ বলে। ৪৪ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে আয়ারল্যান্ড। সে সময় ২৭ ওভারে ১০৬ রান তোলে তারা।