বাজবল নয়, টেস্ট ক্রিকেটটা নিজের মতো খেলতে চান জাকির
জাকির হাসান ব্যাটিং করেন টেস্ট ক্রিকেটের প্রচলিত মেজাজে। ক্রিজে গিয়ে সময় নেবেন, বল পুরোনো হওয়ার অপেক্ষা করবেন। বাজে বলের ফায়দা নিয়ে খুঁজে নেবেন বাউন্ডারি। সাত ম্যাচের ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে জাকির এভাবেই খেলছেন। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিসহ চারটি ফিফটি এসেছে সেই ‘পুরোনো’ ধারার টেস্ট ব্যাটিংয়েই। জাকিরের ৫১ স্ট্রাইক রেটের টেস্ট ব্যাটিংয়ে পুরোনো ধারা বলার কারণ ‘বাজবল’।
ইংল্যান্ড আক্রমণাত্মক মানসিকতার নতুন এই মতাদর্শে টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরুর পর থেকেই প্রশ্ন হচ্ছে—বাজবল ভালো নাকি টেস্ট ক্রিকেটের সেই পুরোনো রীতি? বাংলাদেশ দলের ওপেনার জাকির বাজবল নয়, টেস্ট ক্রিকেটটা খেলতে চান নিজের শক্তিতে আস্থা রেখে।
আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জাকির তাঁর এই চিন্তার পক্ষে যুক্তিও দেখালেন, ‘এটা দলের ওপর নির্ভর করে। দলের কৌশল অনুযায়ী হতে পারে। ভারতীয় দলের পুরো ব্যাটিং অর্ডারে সবার দায়িত্ব এক রকম, আর পূজারার দায়িত্ব আরেক রকম। তার সেই সামর্থ্য আছে। পুরো দল বিশ্বাস করে সে লম্বা সময় খেলবে। দলের পরিকল্পনাটাও সেভাবে সাজানো। আমরাও সেটা করতে পারি। আমি হয়তো পূজারার মতো সারা দিন খেলে অভ্যস্ত নই। কিন্তু আমি যখন বড় ইনিংস খেলি, তখন আমার একটু সময় লাগেই। আমি যতটা সময় লাগে, সেটা নিয়েই খেলার চেষ্টা করি।’ জাকির এ কথাও বলেছেন, ‘একটা সুন্দর শট খেলার চেয়ে আমি দলকে কী দিতে পারছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ইংল্যান্ড এক রকম ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোর ব্যাটসম্যানরা কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সময় নিয়েই খেলছে। এটাই আদর্শ।’
টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার সুযোগ বাংলাদেশের চেয়ে ইংল্যান্ডের বেশি, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন জাকির, ‘ইংল্যান্ডের সুযোগও থাকে। ওরা এক সিরিজেই চারটা ম্যাচ খেলে। নতুন কিছু করে দেখার সুযোগ থাকে। আমাদের সে সুযোগটা থাকে না। আমরা দুই টেস্টের সিরিজ খেলি। এরপর হয়তো দুই-তিন মাস পর আবার দুটি টেস্ট। ওদের তুলনায় আমাদের সুযোগ কম। তবে অন্যরা যেভাবে টেস্ট ক্রিকেটটা খেলে, সেভাবে খেলতে পারলেও ভালো।’
বাংলাদেশ দল ১৭ আগস্ট পাকিস্তানে যাবে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে। তার আগে বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে পাকিস্তান পাঠাচ্ছে বিসিবি। ৬ আগস্ট দুটি চার দিনের ম্যাচ ও তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলতে পাকিস্তানের বিমান ধরবে ‘এ’ দল। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ের আগে জাকির ‘এ’ দলের হয়ে একটি চার দিনের ম্যাচ খেলবেন। পাকিস্তান সফরে রিভার্স সুইং হবে ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সে কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ওদের বোলাররা পুরোনো বলে খুব ভালো রিভার্স সুইং করায়। আমরা যদি কেউ থিতু হয়েও যাই, তবু আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
টেস্ট সিরিজের আগে আদর্শ প্রস্তুতি যে ‘এ’ দলের সফর, সেটা জাকিরেরই সবচেয়ে ভালো জানার কথা। ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের আগে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন জাকির। ‘এ’ দলের সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করার পর টেস্ট দলে ডাক পান এই বাঁহাতি। চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেও ‘এ’ দলের ফর্ম ধরে রেখেই শতক করেছেন।
সে স্মৃতির কথা মনে করিয়ে জাকির বললেন, ‘যদি প্রতিটি সফরের আগে “এ” দল পাঠানো যায়, তাহলে খুব ভালো হবে। জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড় প্রস্তুতি নিতে পারবে, বাইরের খেলোয়াড়েরাও প্রস্তুত হতে পারবে। আমার ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। ভারত “এ” দল আমাদের এখানে এসেছিল। আমি সেখানে ভালো খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমি তো ওদের সঙ্গে গত সপ্তাহেই খেলেছি! তখন মনে হবে, আই ক্যান ফেস অ্যানি ওয়ান।’
ইংরেজিতে বলা জাকিরের শেষ কথাটায় ছিল আত্মবিশ্বাস। রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিতে এই আত্মবিশ্বাসী জাকিরকেই দেখতে চাইবে বাংলাদেশ।