অনুশোচনায় ভোগা ওলোঙ্গা ক্ষমা চাইলেন
এখনো অনুশোচনায় ভুগছেন হেনরি ওলোঙ্গা। গত বুধবার ক্যানসারে আক্রান্ত সাবেক জিম্বাবুয়ে সতীর্থ হিথ স্ট্রিকের ‘মৃত্যু’তে শোক জানিয়ে এবং পরে মৃত্যুর খবরটা যে সঠিক নয়, সেটি জানিয়ে ক্রিকেট–বিশ্বে তোলপাড় তুলেছিলেন সাবেক এই পেসার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম স্ট্রিকের বন্ধু ওলোঙ্গার টুইটকে উদ্ধৃত করে তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছিল। এ ঘটনায় অনুশোচনায় ভোগা ওলোঙ্গা ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে ক্ষমা চেয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিও অ্যাডিলেডে গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩০টি টেস্ট এবং ৫০টি ওয়ানডে খেলা ওলোঙ্গা। ৪৭ বছর বয়সী ওলোঙ্গা এখন বাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে।
২০০৩ বিশ্বকাপ চলকালে জিম্বাবুয়ের মুগাবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। সে যা–ই হোক, এবিসি রেডিওকে ওলোঙ্গা জানিয়েছিলেন ফেসবুকে জিম্বাবুইয়ান স্পোর্টিং ফোরাম নামের একটি পেজে স্ট্রিকের মারা যাওয়ার খবর দেখেন। তাঁর আরেক সাবেক সতীর্থও নাকি জানিয়েছিলেন স্ট্রিক মারা গেছেন।
এরপরই টুইটারে স্ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে ভুলটা করে বসেন ওলোঙ্গা। জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্টে ৬৮ ও ওয়ানডেতে ৫৮ উইকেট নেওয়া সাবেক পেসার সেই ভুলের দুঃখবোধ থেকে সম্ভবত এখনো বের হয়ে আসতে পারেননি। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া এবং স্ট্রিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিশাল এক লেখা পোস্ট করেছেন ওলোঙ্গা। সেখানেও ৪৯ বছর বয়সী স্ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ কীভাবে পেলেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমাও চেয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
ওলোঙ্গা তাঁর ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেন, ‘মারাত্মক সেই ভুলের পর আমি স্ট্রিকের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তাদের জন্য এটা বেশি বেশি হয়ে গেছে।’
হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ কীভাবে পেয়েছেন, সেই ব্যাখ্যায় ওলোঙ্গা লিখেছেন, ‘এ বছরের শুরুতে যখন খবর পেলাম স্ট্রিক ভালো নেই, তখন আমি নিজের কাজে নিমজ্জিত জীবন থেকে উঠে এসে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করেছি। স্ট্রিক আমাকে তার চিকিৎসার খোঁজখবর জানাত, সম্পর্কটা আবার জমে উঠেছিল। নাদিনের (স্ট্রিকের স্ত্রী) সঙ্গেও তা–ই। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে তারাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ কম হয়। যেভাবেই হোক আমি জেনেছিলাম, স্ট্রিকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। তার মৃত্যুর কথা ভেবে তাকে নিয়ে ভালো ভালো কথা লেখার কথা ভাবছিলাম এবং তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। এই ভুলটা কীভাবে হলো, তার বিশদ বর্ণনা আমি দেব না, তবে এতটুকু বলতে পারি, বাকিদের মতো আমিও এটা ফেসবুক থেকে জেনেছি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তৎক্ষণাৎ স্ট্রিক ও নাদিনকে খুদে বার্তা পাঠাই। রাত গভীর হওয়ায় তাদের উত্তর দিতে দেরি হয়। স্ট্রিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে—এমন পরিচিত কয়েকজন (ক্রিকেট) সতীর্থের কাছেও খোঁজ নিই এবং তারা জানায় খবরটি সত্য। একদম সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম তাদের, উত্তরে তারা আশ্বস্ত করেছিল। যেহেতু আগের দিন স্ট্রিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল, তাই ঘটনাটা আমার কাছে একদম আকস্মিক ছিল। তবে হৃদয়টা ভেঙে গিয়েছিল এবং স্ট্রিক সত্যিই মারা গেছে বলে বিশ্বাস করেছিলাম। আমার যেমন লেগেছে, আমার ধারণা বাকিদেরও খবরটি শুনে একই রকম লেগেছে।’
ওলোঙ্গা এরপর লিখেছেন, ‘অবশ্যই আমি খুব দুঃখিত; কারণ, খবরটিকে নিরেট সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। এরপর নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেছি, যেটা আরও অনেকেই করেছেন। কয়েক ঘণ্টা পর স্ট্রিক আমাকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলে (তার রসিকতাজ্ঞান দুর্দান্ত)। এরপর আমি ভুলটা সংশোধন করি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ যুগে কি এত তাড়াতাড়ি এসব ভুল সংশোধন সম্ভব? যতটা পেরেছি করেছি।’
ওলোঙ্গার দীর্ঘ ফেসবুক বার্তার শেষটায় বোঝা যায়, ভুলটা তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে, ‘আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝবেন এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটির জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। এটা নিয়ে আমি খুব মনঃকষ্টে আছি। তবে আমাদের চ্যাম্পিয়নের (স্ট্রিক) জন্য সবাই যেভাবে ভালোবাসা নিংড়ে দিয়েছে, সেসব দেখে হৃদয়টা উষ্ণ হয়েছে। এত কিছুর মধ্যে এটাই সম্ভবত একমাত্র ভালো দিক।’
স্ট্রিকের খুদে বার্তা পাওয়ার পর টুইটারে তার স্ক্রিনশট পোস্ট করে ওলোঙ্গা আবার টুইট করেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর সংবাদ নিছকই গুজব। তার সঙ্গে মাত্রই কথা হলো। থার্ড আম্পায়ার তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন। বন্ধুরা, সে বেঁচে আছে।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ভারতীয় পত্রিকা মিড ডে স্ট্রিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করে তিনি বেঁচে আছেন। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় স্ট্রিক মিড ডেকে বলেন, ‘এটা গুজব। আমি জীবিত আছি, ভালোই আছি। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে এত বড় একটা খবর কারও কাছ থেকে নিশ্চিত না হয়েই কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আমার মনে হয় যে সূত্র এই খবর ছড়িয়েছে, তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম স্পোর্টস্টার জানিয়েছিল, বাসায় বসে সংবাদমাধ্যমে নিজের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন স্ট্রিক। ৪৯ বছর বয়সী সাবেক এই পেসার স্পোর্টস্টারকে বলেছেন, ‘এখন ভালো আছি এবং ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার পথে আছি।’