২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আরেকটি ‘এক ইনিংসে’র টেস্টে ফিলিপস ‘শো’

৮৭ রানের ইনিংস খেলেন গ্লেন ফিলিপসছবি: শামসুল হক

সিলেটে ৭ রানের, মিরপুরে ৮। দুই টেস্টেই প্রথম ইনিংসে লিড নিউজিল্যান্ডের। তবে সেটি এতটাই নগণ্যসংখ্যক রানের যে সিলেটের মতো মিরপুর টেস্টটাও এখন পরিণত হয়েছে এক ইনিংসের ম্যাচে। দ্বিতীয় ইনিংসে যারা ভালো করবে, জিতবে তারাই।

বৃষ্টির ঝাপটায় গতকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের পুরোই হারিয়ে গেছে, হতে পারেনি একটি বলও। বৃষ্টি আজ সকালেও ছিল। এরপর রোদ উঠলে মাঠ শুকানোর পর্ব শেষ করে খেলা শুরু হয় একবারে মধ্যাহ্ন বিরতি পার করে দুপুর ১২টায়। কিন্তু বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে আলোকস্বল্পতায় আবারও খেলায় বিরতি টেনে মাঠ ছাড়েন খেলোয়াড়েরা। খেলা এরপর আর হতেই পারেনি। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে শেষ ঘোষণা হয় দিনের খেলার।

আরও পড়ুন

অবশ্য মিরপুরের ফলাফল-অন্বেষী উইকেটে জয়-পরাজয়ে চোখ রাখতে আজ যেটুকু খেলা হয়েছে সেটুকুও যথেষ্ট। এবং এখনো প্রশ্ন—ম্যাচটা পঞ্চম দিনে গড়াবে তো!

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ সারা দিনে খেলা হতে পেরেছে মাত্র ৩২.৩ ওভার। প্রথম দিনের ১২.৪ ওভারের পর আজ ২৪.৩ ওভার ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ ১৮০ রানে। বাংলাদেশও দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ৩৮ রানে হারিয়ে ফেলেছে ২ উইকেট। এটা অবশ্য অস্বাভাবিকও নয়। টেস্টের প্রথম দিনেই উইকেটের যে রকম চরিত্র দেখা গেছে, দেড় দিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর সেখানে ব্যাটসম্যানদের কাজ আরও কঠিনই হওয়ার কথা।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ও জাকির হাসান
ছবি: শামসুল হক

পরশু প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৭২ রানে অলআউট হওয়ার পর সেদিনই ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। উইকেট দেড় দিন কাভারে ঢাকা থাকার পর আজ দুপুরে যখন খেলা শুরু হলো, কন্ডিশনের সুবিধা নিতে পেসার শরীফুল ইসলামকে ব্যবহার করে দেখতে পারতেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান। সেটা না করে প্রথম দিনের দুই সফল স্পিনার তাইজুল ইসলাম আর মেহেদী হাসান মিরাজের ওপরই আস্থা রাখলেন তিনি।

কিন্তু ২১ ওভার পর্যন্ত এ দুজন বোলিং করেও ড্যারিল মিচেল-গ্লেন ফিলিপসের প্রথম দিনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ভাঙন ধরাতে পারেননি। ফিলিপস তো উল্টো আক্রমণাত্মকই হয়ে উঠেছিলেন মিরাজের ওপর। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ডিপ পয়েন্ট দিয়ে চার মারার পর ১৬তম ওভারে মিরাজকেই বাউন্ডারি মেরেছেন দুটি। ১৮তম ওভারে ওই মিরাজকেই স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা।

আরও পড়ুন

নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে শরীফুলের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগপর্যন্ত ফিলিপস খেলে গেছেন এই খেলাটাই, যেটা কিছুটা প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের দু্ই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও জাকির হাসানের ব্যাটিংটার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। এই উইকেটে ঠুক ঠুক করে খেলা কঠিন, আক্রমণেই তাই বিপদমুক্ত থাকার চেষ্টা। ফিলিপস সেটা করে বেশ সফলও। প্রথম ইনিংসে দলের ১৮০ রানের মধ্যে তাঁর একারই ৮৭! ৯ বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন চারটি ছক্কাও। প্রথম দিন শেষের সঙ্গী মিচেলের সঙ্গে ৪০ রানের জুটির পর অষ্টম উইকেটে কাইল জেমিসনের সঙ্গে গড়েছেন ৫৫ রানের আরেকটি জুটি। ১৫ বলে ১৪ রান করা টিম সাউদির সঙ্গে তাঁর পরের জুটিতে এসেছে ২৮ রান।

ড্যারিল মিচেলকে তুলে নেন স্পিনার নাঈম হাসান
ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশ দিনের প্রথম সাফল্যটা পায় ২২তম ওভারে। মিচেল-ফিলিপস জুটি ভাঙতে মিরাজ-তাইজুলকে দিয়ে যখন হচ্ছিল না, নাজমুল বোলিংয়ে আনেন অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে। ২২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফিলিপসের হাতে বিশাল ছক্কা খেলেও নাঈম ওই ওভারেরই চতুর্থ বলে দিনের প্রথম ব্রেক থ্র্রুটা দেন ড্যারিল মিচেলকে ফিরিয়ে। মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে নেওয়া মিরাজের ক্যাচটাও ছিল দুর্দান্ত।

পরের ওভারে নাঈম ফিরিয়েছেন মিচেল স্যান্টনারকেও। বল স্যান্টনারের ব্যাট ছুঁয়ে ফার্স্ট স্লিপে জমা পড়ে নাজমুলের হাতে। অপর প্রান্তে পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট পড়তে দেখেও ফিলিপসের ব্যাটে আক্রমণের ধার কমেনি। ২৬তম ওভারে পরপর দুই বলে নাঈমকেই মেরেছেন ছয় ও চার, চার মেরেই ৩৮তম বলে পৌঁছে যান নিজের পঞ্চাশে।

আরও পড়ুন

নিউজিল্যান্ড এক সেশনের মধ্যেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলায় চার বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু ৮ ওভারের মধ্যেই ওপেনার মাহমুদুল ও তিনে নামা অধিনায়ক নাজমুলকে হারিয়ে আবারও চাপে স্বাগতিকেরা।

আউট হয়ে ফিরছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
ছবি: শামসুল হক

প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ মাহমুদুল। আরেক ওপেনার জাকির স্যান্টনারের করা পরের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে চাপটা সরাতে চাইলেন কিছুটা। ২৪ বলে ১৫ রানের ইনিংসে নাজমুলও মেরেছেন দুই বাউন্ডারি। কিন্তু খেলা বন্ধ হওয়ার ঠিক আগের বলেই সাউদির বলে কেইন উইলিয়ামসনের ক্যাচ হয়ে যান মিড অফে।

তৃতীয় দিন শেষে তাই ম্যাচে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডকেই এবং সেই কৃতিত্ব অবশ্যই গ্লেন ফিলিপসের। সঙ্গে মিরপুরের উইকেট তো আছেই।

আরও পড়ুন