যেখানে সূর্যের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ দল
গুণীজনেরা বলেন, টি–টোয়েন্টি চার–ছক্কার খেলা। কিন্তু বাংলাদেশের খেলা দেখলে তা কতটুকু বোঝা যায়?
ঠোঁটকাটা সমর্থক বলতে পারেন, হ্যাঁ, তা তো বোঝা যায় বৈকি! বাংলাদেশ দল যখন ফিল্ডিংয়ে, তখন কথাটা নির্মম সত্য হয়ে ওঠে। আর যখন ব্যাটিংয়ে তখন কথাটা মনে হয় রূপকথার গল্প। একটু বেশি বলা হলো?
হতেই পারে। আফিফ হোসেন একাই তো এ বছর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচে ১০ ছক্কা মেরেছেন। এ বছর এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে আফিফের ছক্কা সংখ্যাই সর্বোচ্চ। নুরুল হাসান (৯) ও লিটন দাস (৭) আসবেন তারপর।
এবার কিছু নাম বলা যাক—টনি উরা, মুহাম্মদ ওয়াসিম, ইকবাল হোসেন, কেসি ডি’সউজা, লেস ডানবার। ক্রিকেটের পাঁড়ভক্ত ছাড়া নামগুলো অচেনা লাগাই স্বাভাবিক। তাঁরা সবাই আইসিসির সহযোগী দেশের ক্রিকেটার। টনি উরা পাপুয়া নিউগিনির, মুহাম্মদ ওয়াসিম আরব আমিরাতের, ইকবাল হোসেন অস্ট্রিয়ার, কেসি ডি’সউজা বুলগেরিয়ার ও লেস ডানবার সার্বিয়ার ব্যাটসম্যান। তাঁরা সবাই আফিফের চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন।
কথাটা মোটেও আইসিসির টেস্ট খেলুড়ে দেশটির ক্রিকেটারকে খাটো করতে বলা হয়নি। স্রেফ সামর্থ্যের পার্থক্যটা বোঝাতে এই উদাহরণ। পাল্টা যুক্তি আসতে পারে, সহযোগী দেশ তো তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে, তাই ছক্কা মারাও সহজ। বটে! তাহলে ক্রিকেটের গুণীজনেরা যে বলেন, এই খেলায় সবচেয়ে বাজে ডেলিভারিকে সীমানাছাড়া করতেও সামর্থ্য এবং ‘পারফেকশন’ প্রয়োজন।
কিংবা চাইলে ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের একটি কথাও ভেবে দেখা যায়, ‘এমনকি একটা হাফ ভলি ডেলিভারিতেও বাউন্ডারি মারতে ভালো টাইমিং ও গ্যাপ বের করতে হয়।’ অর্থাৎ প্রতিপক্ষ যতই সহজ হোক, মাঠের সীমানা তো কমে না, আর সহজ প্রতিপক্ষের বাজে ডেলিভারিগুলোকে সীমানার বাইরে পাঠাতে একই রকম শক্তি ও কৌশলের দরকার হয়। তাই, উরা–ওয়াসিমদের ছক্কাবাজিকে খাটো করে দেখার উপায় নেই।
বরং বড় করেই দেখতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এ বছর ছক্কা মারার সংখ্যায় দুইয়ে টনি উরা (১২ ম্যাচে ৩৯টি), তিনে ওয়াসিম (১৩ ম্যাচে ৩৮টি), পাঁচে ইকবাল হোসেন (১২ ম্যাচে ৩৪টি), ছয়ে কেসি ডি’সউজা (১৭ ম্যাচে ৩১টি) ও আটে ডানবার (১১ ম্যাচে ২৯টি)। খেয়াল করলে দেখা যায়, এই তালিকায় শীর্ষ খেলোয়াড়টির নাম বলা হয়নি। পাশাপাশি চতুর্থ ও সপ্তম খেলোয়াড়টির নামও কাটা পড়েছে।
সেটি ইচ্ছে করেই। কারণ, এই তিন ব্যাটসম্যান টেস্ট খেলুড়ে দেশের—শীর্ষে ভারতের সূর্যকুমার যাদব (২২ ম্যাচে ৫০টি), চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোভম্যান পাওয়েল (১৭ ম্যাচে ৩৬টি) এবং সাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই নিকোলাস পুরান (১৮ ম্যাচে ৩১টি)। অর্থাৎ, ছক্কা মারায় সিদ্ধহস্ত ক্যারিবিয়ান হার্ড হিটারদেরও টেক্কা দিয়েছেন সহযোগী দেশের কিছু খেলোয়াড়। কিন্তু এই সময়ের সেনসেশন সূর্যকে কেউ টেক্কা দিতে পারেননি। এমনকি গোটা বাংলাদেশ দল মিলেও পারেনি!
কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। এ বছর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের ২৩ খেলোয়াড় মিলে মেরেছেন ৪৭টি ছক্কা। গত বছর মার্চে এই সংস্করণে অভিষিক্ত সূর্যকুমার একাই ২২ ম্যাচে মেরেছেন ৫০ ছক্কা। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এক বছরে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (৪২) পেছনে ফেলেছেন আগেই। পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২ বলে ৬১ রানের ইনিংসে ৫ ছক্কায় রেকর্ডটিকে নিয়ে যান ‘ফিফটি’তে, এর সঙ্গে ধরে ফেলেন অস্ট্রেলিয়াকেও।
টি–টোয়েন্টিতে এ বছর অস্ট্রেলিয়ার ২৪ খেলোয়াড় মিলে সূর্যকুমারের সমান ছক্কা মেরেছেন। অর্থাৎ বছরের এ সময় পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৫০টি ছক্কা মেরেছে অস্ট্রেলিয়া। দলগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াই সূর্যের আওতার মধ্যে। তাঁর সামনে জিম্বাবুয়ে (৬৮ ছক্কা), পাকিস্তান (৭৫ ছক্কা), শ্রীলঙ্কা (৭৮ ছক্কা), দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৯ ছক্কা) এবং নিউজিল্যান্ড (৮৮ ছক্কা)। এই দলগুলোকে সূর্যকুমার ধরতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। ইংল্যান্ড (১২৬ ছক্কা), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৪৭ ছক্কা) এবং নিজের দল ভারত (২২৯ ছক্কা) সূর্যের আওতার বাইরে।
ছক্কা মারার কথাই যেহেতু বলা হচ্ছে, তাই আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি এ বছর ছক্কা মারায় কিন্তু বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে আইসিসির বেশ কিছু সহযোগী দেশ।
ডেনমার্ক (৫৪ ছক্কা), মালয়েশিয়া (৯২ ছক্কা), পাপুয়া নিউগিনি (৯৪ ছক্কা) ও সিঙ্গাপুর (৬৭) এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছে। আর চোখ রাঙানি দিচ্ছে জিব্রাল্টার (৪৫ ছক্কা)।