স্ত্রীকে জয়ের গল্প শোনালেন বুমরা
কল্পনা করুন, মাঠে দলকে এইমাত্র জিতিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই মনটা খুশিতে উড়ু উড়ু। খেয়ালই করেননি, মাইক্রোফোন হাতে কেউ একজন এগিয়ে গেলেন। ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। আপনি খুশি মনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই আক্কেলগুড়ুম। ভ্রু কুঁচকে ভাবতে পারেন, এটা কেমন কাজ! সাক্ষাৎকার নিতে কেউ ঘরের বউকে পাঠায়!
কারও কারও এমন লাগতেই পারে। স্ত্রী তো শুধু ভালোবাসার নয়, কিছু ক্ষেত্রে ভীতির কারণও। পান থেকে চুন খসলেই শাসনের চোটে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী এক হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যশপ্রীত বুমরাকে ওসব শাসন-বারণ শুনতে হয়নি। স্বামী কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেলে স্ত্রীর খুশি হওয়াই স্বাভাবিক।
বুমরাও নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে কিছুক্ষণ আগে ভারতের জয়ে রেখেছেন সবচেয়ে বড় ভূমিকা। ভারতের মাত্র ১১৯ রানের পুঁজি জয়ের জন্য পর্যাপ্ত হয়ে উঠেছে তাঁর ১৪ রানে ৩ উইকেট নেওয়া বোলিংয়ে। পরশু রাতের এই ম্যাচ শেষে মাঠেই আইসিসিকে সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে বুমরাকে। আর সেই সাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজটি করেছেন বুমরারই স্ত্রী সঞ্জনা গণেশান।
মাইক্রোফোন হাতে সাদা পোশাকে চমৎকার লাগছিল সঞ্জনাকে। বুমরার গা থেকে ভারতের জার্সি তখনো নামেনি। স্ত্রী সঞ্জনাকে দেখে এতটুকু অপ্রস্তুত না হয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে নির্ভার আত্মবিশ্বাসী পুরুষের মতোই তাঁর সামনে দাঁড়ালেন।
ক্রীড়া সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা ও ক্রিকেট ম্যাচ সম্প্রচারে অভিজ্ঞ সঞ্জনাও মাইক্রোফোন হাতে বেশ সপ্রতিভ ছিলেন। মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও স্টার স্পোর্টসের খেলাধুলার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাজ করছেন আইসিসি ডিজিটাল ইনসাইডার টিমে। সেই সুবাদেই সামনে বউয়ের মাইক্রোফোন।
দুজনের আলাপটা হলো ক্রিকেট নিয়েই। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বুমরা বললেন, ‘দিনটা ভালো ছিল। উইকেট পাল্টেছে, শেষবার যে উইকেটে খেলেছিলাম, সেটায় (বোলারদের) অনেক সাহায্য ছিল। সকালে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, পরে সূর্য ওঠায় উইকেট শুকিয়ে ব্যাটিং–সহায়ক হয়ে ওঠে। সিম মুভমেন্ট ও সুইংও কম ছিল। কিন্তু আমরা চাপ ধরে রেখে ম্যাচ বের করতে পেরেছি। কোনো পর্যায়েই আমরা ভীত ছিলাম না।’
পঞ্চম ওভারে বাবর আজমকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে শুরুটা করেছিলেন বুমরাই। ৩১ রান করা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফেরান ১৫তম ওভারে। এরপরই ম্যাচের মোড় ঘুরতে শুরু করে। সঞ্জনাও বিশেষজ্ঞের মতো ম্যাচের ওই মুহূর্ত নিয়ে জানতে চান বুমরার কাছে।
ক্রিকেটের কঠিন ব্যাপারগুলো স্ত্রীকে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন বুমরা, ‘পরিস্থিতি বুঝতে হয়েছে। অন্য ব্যাটসম্যানদের নিয়েও ভাবতে হয়েছে। রান তোলা কঠিন করার চেষ্টা করেছি, বড় সীমানা দিয়ে মারতে বাধ্য করেছি। বল একটু নিচুও হয়েছে।’
সাক্ষাৎকার শেষে বুমরাকে ধন্যবাদ দিয়ে সঞ্জনা বলেন, শিগগিরই দেখা হচ্ছে। বুমরা উত্তরে যা বলেছেন, তা শুনে কোনো কোনো বিবাহিতের নিজের জীবনকে মনে পড়তে পারে। যেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, দ্রুতই ঘরে ফিরবেন—এমন একটা তাগিদ দেখিয়ে বুমরা বলেন, ‘৩০ মিনিটের মধ্যে দেখা হচ্ছে।’ সম্ভবত জীবনসঙ্গীর এমন প্রতিশ্রুতির সঙ্গে পরিচিত বলেই হো হো করে হেসে ফেলেন সঞ্জনা। প্রস্থানরত বুমরাকে পেছন থেকে ডেকে বলেন, ‘ডিনারে কী থাকছে?’
২০১৩ আইপিএলে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বুমরার সঙ্গে পরিচয় সঞ্জনার। সেখান থেকে বন্ধুত্ব, এরপর দুই বছরের প্রেম এবং ২০২১ সালে বিয়ে। প্রেমটা যে দুজনের মধ্যে এখনো আগের মতোই, সেটি বুঝে নিতে পারেন সঞ্জনার ডিনারের মেনু জানতে চাওয়া দেখেই।