‘বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যর্থতার দায় আমার’
চরম হতাশার এক বিশ্বকাপ কেটেছে ইংল্যান্ডের। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ভারতে গিয়ে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পয়েন্ট তালিকার ৭ নম্বরে থেকে। জস বাটলারের দল জিততে পেরেছে শুধু বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।
যে দলটি গত ৮ বছরে আধুনিক ক্রিকেটের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে, যে দলটিকে এবারের বিশ্বকাপেও অন্যতম ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল, সেই দলটির হঠাৎ অধঃপতন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেকেই ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়েছেন। তবে দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি সব দায় নিজের কাঁধে নিয়েছেন।
বাটলার–বেয়ারস্টোদের বাজে পারফরম্যান্সের ‘ময়নাতদন্ত’ করতে গত বুধবার ভারতে পৌঁছেছেন কি। কলকাতায় গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে সান্ত্বনাসূচক জয়টি মাঠে বসেই দেখেছেন। আর আজ সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন।
অধিনায়ক বাটলার ও সাদা বলের প্রধান কোচ ম্যাথু মটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে কি বলেছেন, ‘ভুলটা তাদের নয়। কাউকে যদি দোষারোপ করতে হয়, তাহলে আমাকে করুন।’
সব দায় কেন নিজের ওপর চাপালেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার, ‘জস বাটলার ও ম্যাথু মটের সমালোচনা আমি করতে পারি না। তাদের প্রতি কঠোর হওয়াও ঠিক হবে না। কারণ, দল ৫০ ওভারের সংস্করণকে বেশি গুরুত্ব দেবে নাকি টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিকে, এমন সব সিদ্ধান্ত আমি একাই নিয়েছি। আমি সব সময় টেস্ট ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। বিশ্বকাপের জন্য সেরা দলকে তাদের সঙ্গে প্রস্তুতির সুযোগ দিইনি।’
গত এক বছরে কোচ মট ও অধিনায়ক বাটলার পূর্ণশক্তির ওয়ানডে দল নিয়ে খেলতে পেরেছেন মাত্র একটি সিরিজে। সেটাও গত সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, যা বিশ্বকাপের আগে তাদের শেষ সিরিজ ছিল।
অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ সফরে পাঠিয়েছিল খর্বশক্তির দল। যেসব খেলোয়াড় তিন সংস্করণেই খেলে থাকেন, তাঁদের ওপর থেকে চাপ কমাতে গত এক বছরের বেশির ভাগ সময় শুধু টেস্ট খেলানো হয়েছে, ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টিতে দেওয়া হয়েছিল বিশ্রাম।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত ওয়ানডে খেলতে না দেওয়াও ইংল্যান্ডের ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন কি, ‘আমি অনেক ভুল করেছি। বিশেষ করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশিই ভেবেছি। ভুল করার পরও ভেবেছিলাম এখানে (ভারতে) আসার পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।’
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ছিটকে পড়ার পর আধুনিক ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। গত ৮ বছরে ইংলিশরা জিতেছে সাদা বলের দুই সংস্করণেরই বিশ্বকাপ। বাজবল দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকেও নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এ সময়ে দলটি বিশ্বের যেখানেই খেলতে গেছে, কোনো না কোনো সিরিজ জিতে এসেছে। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে শুধু ভারত থেকে।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এবারের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে ৩৮ ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে হেরেছে ২৪টি, জিতেছে ১৩টি, ড্র করেছে ১টি। জয়ের শতকরা হার মাত্র ৩৪.২১। এ ছাড়া গত ৮ বছরে ভারতে খেলা ছয়টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সব কটিতেই হেরেছে।
বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বের সব জায়গায় দাপট দেখালেও ভারতে এসে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ব্যাপারটা জানার পরেও ভারতের কন্ডিশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ইংলিশ টিম ম্যানেজমেন্ট।
কি ভেবেছিলেন, বাজবল খেলে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় বিশ্বকাপেও আক্রমণাত্মক খেলতে কোনো সমস্যা হবে না, ‘আমি একরকম ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ৫০ ওভারের ক্রিকেট যথেষ্ট না খেললেও আমরা এতটাই ভালো দল যে পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়া (আক্রমণাত্মক খেলা) কোনো ব্যাপার নয়।’