পাকিস্তানের পাঁড় ভক্তরাও হয়তো এই ম্যাচ দেখার পর মনে মনে বলছেন, যে দলের গ্রুপ পর্বেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা; সেই দল সুপার এইটে উঠতে না পারাতেই বরং ভালো হয়েছে!
ডালাসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে ও নিউইয়র্কে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ৬ রানে হারের পরই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়ে পাকিস্তান। লডারহিলে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র–আয়ারল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হলে বিদায় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের। সেই লড়ারহিলেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাবর–আফ্রিদিদের আজকের ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতার; তবে অন্তত আরেকটি জয় সঙ্গী করে দেশে ফেরার।
কানাডার পর পাকিস্তান আয়ারল্যান্ডকেও হারাল ঠিকই। কিন্তু আজ আইরিশদের হারাতে যে পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হলো, তাতে সমর্থকদের খুব একটা সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়।
আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১০৭ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একপর্যায়ে ৬২ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম একপ্রান্ত আগলে রাখলেও পরাজয়ের শঙ্কা কিছুটা হলেও উঁকি দিচ্ছিল। তবে দুই আফ্রিদি—আব্বাস আর শাহিন বাবরকে দারুণ সঙ্গ দেওয়ায় দ্রুতই শঙ্কা কেটে গেল। ৩ উইকেটের জয়ে হতাশাময় বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল পাকিস্তান।
অবশ্য পাকিস্তান সমর্থকেরা এই বিশ্বকাপে বাবর–আফ্রিদিদের যে আবারও খেলতে দেখতে পারলেন, সেজন্য নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন। লডারহিল যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেই দক্ষিণ ফ্লোরিডায় বন্যা সতর্কবার্তা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আবহাওয়া সংস্থা। রেকর্ড বৃষ্টিপাতে তো এই ভেন্যুতে আগের তিন ম্যাচে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি।
আজ পাকিস্তান–আয়ারল্যান্ড ম্যাচেও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় শেষ দুটি ম্যাচে জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারছে পাকিস্তান দল।
পাকিস্তানের মতো আগেভাগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়া আয়ারল্যান্ড আজ টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শাহিন আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির, হারিস রউফদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে।
৩২ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় আইরিশরা। তখন নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কা ভালোভাবেই জেঁকে বসে। তবে সপ্তম উইকেটে গ্যারেথ ডেলানি ও মার্ক অ্যাডাইড ৪৪ রানের জুটি গড়লে শঙ্কা দূর হয়।
ইনিংসের ১২তম ওভারে ডেলানিকে শাদাব খানের ক্যাচ বানিয়ে এই জুটি ভাঙেন ইমাদ ওয়াসিম। এরপর দ্রুত আরও ২ উইকেট শিকার করে আয়ারল্যান্ডকে ১০০–এর নিচে গুটিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা জাগান ইমাদ। তবে শেষ দিকে জশ লিটল ও বেন হোয়াইটের দৃঢ়তায় আইরিশরা পুরো ২০ ওভার খেলে ১০৬ রান তোলে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সহজ জয়ের দিকেই এগোচ্ছিল পাকিস্তান। দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাইম আইয়ুব আউট হওয়ার আগে সমান ১৭ রান করে করেন। ২ উইকেট হারালেও পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ ৫০ পেরিয়ে যায়।
এরপর হঠাৎ ম্যাচে নাটকীয় মোড়। ব্যারি ম্যাকার্থি আর কার্টিস ক্যাম্ফারের দারুণ বোলিংয়ে ৫২/২ থেকে ৬২/৬–এর দলে পরিণত হয় পাকিস্তান। বাবরকে আরেক প্রান্তে রেখে আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফখর জামান (৫), উসমান খান (২), শাদাব খান (০) ও ইমাদ ওয়াসিম (৪)।
তবে সপ্তম উইকেটে বাবরকে দারুণ সঙ্গ দেন আব্বাস আফ্রিদি। ১টি করে ছক্কা–চারে করেন ১৭ রান। জয় থেকে ১২ রান দূরে থাকতে আব্বাস আউট হলেও শাহিন আফ্রিদি ১৯তম ওভারে দুই ছক্কা মেরে বাকি কাজ সারেন। বাবর অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে। বল হাতে ৩ উইকেট আর ব্যাট হাতে ৫ বলে অপরাজিত ১৩ করে ম্যাচসেরা হন শাহিন আফ্রিদিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১০৬/৯
(ডেলানি ৩১, লিটল ২২*, অ্যাডাইর ১৫; ইমাদ ৩/৮, শাহিন আফ্রিদি ৩/২২, আমির ২/১১, রউফ ১/১৭)।
পাকিস্তান: ১৮.৫ ওভারে ওভারে ১১১/৭
(বাবর ৩২*, রিজওয়ান ১৭, আইয়ুব ১৭, আব্বাস আফ্রিদি ১৭, শাহিন আফ্রিদি ১৩*; ম্যাকার্থি ৩/১৫, ক্যাম্ফার ২/২৪, হোয়াইট ১/১১, অ্যাডাইর ১/২৪)।
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাহিন আফ্রিদি (পাকিস্তান)।