ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বহুসাংস্কৃতিক দূত কার্যক্রমে আমিনুলসহ বাংলাদেশের ৪

দূতের তালিকায় থাকা ৪ বাংলাদেশি (বাঁ থেকে) আমিনুল ইসলাম বুলবুল, কিশোয়ার চৌধুরী, কামরুল চৌধুরী ও স্বরূপ আফসারক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

বহুসাংস্কৃতিক দূত কার্যক্রম চালু করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। দেশটির ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য, খেলাধুলা, সংবাদমাধ্যম এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের পটভূমি ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫৪ ব্যক্তিকে দূত হিসাবে নিযুক্ত করেছে।

তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৪ জন—জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল, রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার রানারআপ কিশোয়ার চৌধুরী, কিশোয়ারের বাবা ও সমাজসেবী কামরুল চৌধুরী এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট স্বরূপ আফসার।

সিএ আজ তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের বহুসাংস্কৃতিক কর্ম পরিকল্পনার একটি মূল পদক্ষেপ হলো এই দূত কার্যক্রম। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরকে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের একত্রিত করে খেলাধুলা ও বৃহত্তর সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই সিএর লক্ষ্য।

সিএর আশা, দূতের তালিকায় থাকা সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, শিল্প ও সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বহুসাংস্কৃতিক কর্ম পরিকল্পনায় বৈচিত্র্য আনবেন এবং লক্ষ্যপূরণে সহায়তা করবেন।

দূতদের তালিকায় ওয়াসিম আকরাম ও রবি শাস্ত্রীও আছেন
ফেসবুক

দূতের তালিকায় সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে বাংলাদেশের আমিনুল ছাড়াও আছেন পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, ভারতের রবি শাস্ত্রী, শ্রীলঙ্কার রাসেল আরনল্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ড্যারেন গঙ্গা, অস্ট্রেলিয়া নারী দলের সাবেক অলরাউন্ডার লিসা স্টালেকাররা। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন উসমান খাজা, অ্যাশটন অ্যাগার, স্কট বোল্যান্ড, গুরিন্দার সান্ধু, তানভীর সাংহারা।

এ ব্যাপারে সিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিক হকলি বলেছেন, ‘আমরা বহুসংস্কৃতির দূতদের মতো গতিশীল ও বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীকে স্বাগত জানাতে পেরে রোমাঞ্চিত। তাঁদের সম্মিলিত নেতৃত্ব, দক্ষতা ও কর্মোদ্যম অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রিকেট সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করতে সহায়ক হবে।’

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের ওপেনার উসমান খাজা বলেছেন, ‘আমি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বহুসাংস্কৃতিক দূত কার্যক্রমের একজন হতে পেরে গর্বিত। আমি খেলাটিকে একটি সেতু হিসাবে দেখি, যা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করে এবং সবাইকে স্বাগত জানায়। সেই সঙ্গে সবার মধ্যে বোঝাপড়া, সম্মানবোধ ও একতা বাড়ায়।’

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল
ফেসবুক

আমিনুল বাংলাদেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৩৯টি ওয়ানডে খেলেছেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। বর্তমানে তিনি এশিয়ান অঞ্চলে আইসিসির উন্নয়ন ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন। এই দায়িত্বে থেকে আইসিসির ২০টি সহযোগী সদস্য দেশের ক্রিকেট উন্নয়ন তত্ত্বাবধান করছেন। আমিনুল পাঁচটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন—বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু ও ম্যান্দারিন।

কিশোয়ার চৌধুরী শুধু জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পীই নন; একই সঙ্গে লেখক ও টিভি উপস্থাপক। ২০২১ সালে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ত্রয়োদশ আসরে বাঙালি খাবার রান্না করে আলোচনায় আসেন কিশোয়ার। অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিত ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি শুভেচ্ছাদূত ছিলেন। বর্তমানে তিনি রান্নাঘরে লিঙ্গ এবং বৈচিত্র্যের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সরকার এবং করপোরেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন।

কিশোয়ার চৌধুরীর বাবা কামরুল চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের স্তম্ভ। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী। শিক্ষা, খেলাধুলা, কলা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধির জন্য ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ই তিনি বহুসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ছিলেন।

আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বরূপ আফসার একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট, দূরদর্শী উদ্যোক্তা এবং শিল্প উদ্ভাবক। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থে বসবাস করছেন। অল্প বয়সেই স্বরূপ শীর্ষ স্তরের ক্রিকেটও খেলেছেন। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০১৩ সালে রয়্যাল বেঙ্গল ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং ক্রিকেটের মাধ্যমে সব সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করেন।