২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয়ের গল্প

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর মুশফিক ও সাকিবএএফপি

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জয় ছিল না। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জিতে সেই অতৃপ্তি ঘুচেছে। একই মাঠে দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে সিরিজটাও জিতে নিয়েছে নাজমুল হোসেনের দল। তাতে টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য ছয় বছরের অপেক্ষারও অবসান হলো।

বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে। সেই সিরিজেও ক্যারিবীয়দের ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তান জয়ের আগে ছয় বছরে খেলা ১০টি টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজ ড্র করাই ছিল বাংলাদেশের সেরা সাফল্য।

সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম টেস্ট সিরিজ জয়, এর চারবারই প্রতিপক্ষ ধবলধোলাই হয়েছে। যে একটি সিরিজ জয়ে প্রতিপক্ষ ধবলধোলাই হয়নি, সেটি ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট জয়ের পর ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টটা ড্র করে সিরিজটাও জিতে নেয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পাঁচটি টেস্ট সিরিজ জয়ের স্মৃতি রোমন্থন তো করাই যায় এই উপলক্ষে—

২০০৫, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে
ফল: ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র
প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রথম টেস্ট জয়ের ইতিহাসটা লেখা হয়েছিল চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। আর সেই ইতিহাসের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৫৪ রানে অলআউট করে দলকে ২২৬ রানের জয় এনে দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ড্র হওয়া দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড়ও এনামুল। ম্যাচে মোট ১২ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪২ ওভার ব্যাটিং করে ম্যাচ বাঁচাতে বড় ভূমিকা ছিল ব্যাটসম্যানদের। ৩৫৫ বল খেলে ওপেনার নাফিস ইকবালের ১২১ রানের ম্যারাথন ইনিংসের বড় ভূমিকা ছিল ওই ড্রয়ে।

২০০৯, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ফল: ২ ম্যাচ সিরিজে ২-০
দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয় ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে
এএফপি

খেলোয়াড় বিদ্রোহে দল সাজাতেই মুশকিলে পড়ে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফ্লয়েড রেইফারকে অধিনায়ক করে দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়দের নিয়ে দল সাজাতে বাধ্য হয় ক্যারিবীয়রা। সুযোগটা দারুণভাবেই লুফে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ও অভিষিক্ত মাহমুদউল্লাহর ৫ উইকেটে সেন্ট ভিনসেন্টে প্রথম টেস্ট ৯৫ রান জিতে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট চলার সময়ই হাঁটুর চোটে ছিটকে পড়া অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বদলে দ্বিতীয় টেস্টে নেতৃত্ব পান তরুণ সাকিব আল হাসান। ২১৫ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৬৭ রানে ৪ উইকেট খোয়ানের পর উইকেটে নেমে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সাকিব। ৯৭ বলে অপরাজিত ৯৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে দলকে ম্যাচ ও সিরিজ জিতিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। টেস্ট শেষ করেন ছক্কা মেরে।

২০১৪, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে
ফল: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটের পর সাকিব
প্রথম আলো

ফেবারিট হিসেবে সিরিজ শুরু করা বাংলাদেশ জিতেছে দাপটের সঙ্গেই। মিরপুরে প্রথম টেস্টেই শুধু একটু শঙ্কায় পড়েছিল স্বাগতিকেরা। ১০১ রান তাড়া করতে নেমে কোনো রান করার আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ৩ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। খুলনায় ১৬২ রানে জেতা দ্বিতীয় টেস্টে তো ইতিহাসই গড়লেন সাকিব। সেঞ্চুরি ও ম্যাচে ১০ উইকেট, ইয়ান বোথাম ও ইমরানের খানের মতো কিংবদন্তির কীর্তি ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ জেতে ১৮৬ রানে।

২০১৮, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ফল: ২ ম্যাচ সিরিজে ২-০
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ
প্রথম আলো

টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট অফ স্পিনার নাঈম হাসানের। দ্বিতীয় ইনিংসে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ৬ উইকেট। বাংলাদেশের ৬৪ রানের জয়ে এই দুই বোলারের কেউ নন, ম্যাচসেরা হন প্রথম ইনিংসে ১২০ রান করা মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১২৫ রানে অলআউট হলেও বাকি কাজটা সারেন স্পিনাররা। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথমবার ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ১৩৬ রান ও সাদমান-সাকিবের ফিফটিতে ৫০০ ছাড়ায় বাংলাদেশ। দুই ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে দলকে ইনিংস ও ১৮৪ রানের জয় এনে দেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।

২০২৪, বিপক্ষ পাকিস্তান
ফল: ২-ম্যাচ সিরিজ ২-০
২৬ রানের ৬ উইকেট হারানোর পর ১৬৫ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েন মিরাজ ও লিটন
এএফপি

রাওয়ালপিন্ডির উইকেটের কথা ভেবে প্রথম টেস্টে চার পেসার নিয়ে দল সাজায় পাকিস্তান। বাসিত আলীর মতো সাবেক ক্রিকেটার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, বৃষ্টি ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না বাংলাদেশকে। কিন্তু সিরিজটা জিতল বাংলাদেশই, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে মাত্র দ্বিতীয়বার ধবলধোলাই উপহার দিয়ে। পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে ঘোষণা করেন প্রথম ইনিংস। মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসে ৫৬৫ রান করে ১১৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। স্পিনাররা পাকিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রান। বাংলাদেশের দুই ওপেনারই যা করে ফেলেন। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনটা খেয়ে নেয় বৃষ্টি। চার দিনের ম্যাচে পরিণত টেস্টটি বাংলাদেশ জিতেছে পেসারদের অসাধারণ বোলিং ও লিটন-মিরাজের রেকর্ড জুটিতে। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর লিটন ও মিরাজের ১৬৫ রানের জুটি ম্যাচে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার দারুণ বোলিংয়ে স্বাগতিকদের ১৭২ রানে অলআউট করে ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্যটা শেষ দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৬ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।