জ্বললেন গোলাপি বলের রাজা স্টার্ক, ম্লান ভারতের তারকারা
অ্যাডিলেড টেস্ট (প্রথম দিন শেষে)
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৪.১ ওভারে ১৮০।
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৩ ওভারে ৮৬/১।
কি ভাই, একটু বেশিই স্লো বল?
প্রশ্নটি কি যশস্বী জয়সোয়ালকে করেছেন মিচেল স্টার্ক! পার্থে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ রানের ইনিংস খেলা জয়সোয়াল স্টার্ককে স্লেজিং করেছিলেন এই বলে—একটু বেশিই স্লো বল! স্টার্ক তখন বলেছিলেন, ভারতীয় ওপেনারের কথা তিনি শোনেনি। তা সেই সময় শুনুন আর না–ই শুনুন, মাত্র ১৫ টেস্ট খেলা ২২ বছর বয়সী একজন ব্যাটসম্যানের তাঁর বোলিং নিয়ে কী ধারণা, সেটা তো জেনে গেছেন স্টার্ক।
অ্যাডিলেডে ক্যারিয়ারের ৯১তম টেস্ট খেলতে নামা স্টার্কের অহমে ধাক্কা না লেগে পারে না! এ কারণেই হয়তো স্টার্ক জবাবটা দিলেন অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম বলেই, দুর্দান্ত এক সুইঙ্গিং ডেলিভারিতে জয়সোয়ালকেই এলবিডব্লু করে। উইকেটটি পাওয়ার পর উদ্যাপনও বেশ অনেকক্ষণ ধরে করেছেন স্টার্ক। সেটা হতে পারে টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ তিনবার টেস্টের প্রথম বলে উইকেট নিতে পারায়। এর আগে এই কীর্তি ছিল শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার পেদ্রো কলিন্সের। তিনি অবশ্য একজন ব্যাটসম্যানকেই তিনবার প্রথম বলে আউট করেছেন, সেই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার হান্নান সরকার।
জয়সোয়ালকে স্টার্ক কিছু বলেছেন কি না, তা পরেই জানা যাবে। তবে প্রথম বলেই তাঁর জয়সোয়ালকে ফেরানো নিয়ে স্টার স্পোর্টসে কথা বলেছেন এই সিরিজে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ‘একটা জিনিস আমি খুব অল্প বয়সেই বুঝেছি, শেষ হাসিটা বোলাররাই হাসে। আপনি তো আউট হবেনই...এখানেও মিচেল স্টার্কই শেষ হাসি হাসল।’
শুধু জয়সোয়ালের সঙ্গে দ্বৈরথে শেষ হাসি হাসাই নয়, স্টার্ক আসলে টেস্টের প্রথম বলটি দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন পুরো দিনের সুর। এমনকি এ বলটা অ্যাডিলেড টেস্টেরই মূল আলাপের বিষয় হয়ে যেতে পারে। এমনিতে স্টার্ককে অনেকেই বলেন গোলাপি টেস্টের বোলিং-রাজা। সেটা তাঁর পারফরম্যান্সের কারণেই। অ্যাডিলেডে ক্যারিয়ারের ৯১তম টেস্ট খেলতে নেমেছেন স্টার্ক। এর মধ্যে ১৩টি টেস্ট তিনি খেলেছেন গোলাপি বলে। ১৭.৮১ গড়ে নিয়েছেন ৭২ উইকেট। সেরা ৪৮ রানে ৬ উইকেট, এটা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিংও। আর গড়? ক্যারিয়ারের গড়ের চেয়ে বেশি ভালো। ৯১ টেস্টে ২৭.৫৩ গড়ে তিনি মোট উইকেট নিয়েছেন ৩৬৭টি।
প্রথম বলে উইকেট হারানো ভারতের ইনিংসকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিল। কিন্তু গোলাপি বলের রাজা জ্বলে উঠলে কারই–বা কী করার থাকে। রাহুলকে ফিরিয়ে তিনি ভাঙলেন ৬৯ রানের জুটি। রাহুল অবশ্য স্কট বোলান্ডের বলে আগেই আউট হতে পারতেন। ৩৭ রান করে আউট হওয়া রাহুল যখন রানে ছিলেন, বোলান্ডের বলে প্রথম স্লিপে তাঁর ক্যাচ ছেড়েছেন উসমান খাজা।
রাহুলের পর দ্রুতই বিরাট কোহলিকেও তুলে নেন স্টার্ক। ৭৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। এরপর বোলান্ড ৬ রানের মধ্যে গিল ও রোহিত শর্মাকে ফেরালে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৮৭ রান। ঋষভ পন্ত পাল্টা আক্রমণকে অস্ত্র বানাতে গিয়েও পারেননি, আউট হয়ে ফিরেছেন ৩৫ বলে ২১ রান করে। পন্ত যেটা পারেননি, সেটাই করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন নীতীশ কুমার। তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৫৪ বলে ৪২ রান করেও অবশ্য ভারতের রানটা দুই শতে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
সেটা হয়নি ‘লেজ ছেঁটে ফেলায়’ বিশেষজ্ঞ স্টার্ক শেষ দিকে আবার জ্বলে ওঠায়। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে এসে তিনি ফেরান ২২ বলে ২২ রান করা রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও হর্ষিত রানাকে। এরপর কামিন্স এসে বুমরাকে তুলে নেওয়ার পর নীতীশ কুমারকে ফিরিয়ে শুরুর মতো শেষটাও করেন স্টার্ক।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে স্টার্ক এলোমেলো করে দেওয়ার পর আলোচনা ছিল একটাই—বুমরাকে কীভাবে সামলাবেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষত কথা হচ্ছিল মারনাস লাবুশেনকে নিয়ে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫২ বলে ২ রান করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৩ রান। এর পর থেকেই সমালোচকদের আতশ কাচের নিচে তাঁর ব্যাটিং। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে মাত্র ১২৩ রান করেছেন লাবুশেন। এর মধ্যে আবার ৯০ রান এসেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মার্চে এক ইনিংস থেকে। এ বছর টেস্টে তাঁর গড় এখন পর্যন্ত ২৪.৫০, আগের বছর ছিল ৩৪.৯১। ২০২৩ সালের আগের চার বছর এই লাবুশেনেরই গড় ছিল ৬০-এর ওপরে!
তবে দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম দিনের শেষবেলায় বুমরাকে ভালোই সামলেছেন লাবুশেন। বুমরা অবশ্য দ্রুতই ফিরিয়েছেন খাজাকে। ৩৫ বলে ১৩ রান করে তিনি আউট হয়েছেন দলের ২৪ রানে। এরপর আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে ১ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের প্রথম ইনিংসের চেয়ে পিছিয়ে আছে তারা ৯৪ রানে। ম্যাকসোয়েনি ৩৮ ও লাবুশেন ২০ রান নিয়ে উইকেটে আছেন। বুমরা অবশ্য আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন; কিন্তু ৩ রানে নাথান ম্যাকসোয়েনির ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটকিপার পন্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে এই নিয়ে বুমরার বলে নয়টি ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটকিপাররা। এর মধ্যে আটটিই ছেড়েছেন পন্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৪.১ ওভারে ১৮০ (নীতীশ ৪২, রাহুল ৩৭, গিল ৩১, অশ্বিন ২২, পন্ত ২১; স্টার্ক ৬/৪৮, কামিন্স ২/৪১, বোলান্ড ২/৫৪)।
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৩ ওভারে ৮৬/১ (খাজা ১৩, ম্যাকসোয়েনি ৩৮*, লাবুশেন ২০*; বুমরা ১/১৩, সিরাজ ০/২৯, হর্ষিত ০/১৮, নীতিশ কুমার ০/১২, অশ্বিন ০/০)।