এবারের অ্যাশেজের সবচেয়ে সেরা ইনিংসটিই কি খেলে ফেললেন জ্যাক ক্রলি?
ইংল্যান্ড দলের যতজন ব্যাটসম্যান আছেন, প্রত্যাশার দিক দিয়ে ক্রলি কিছুটা পিছিয়েই থাকবেন। ‘সত্যিকারের টেস্ট ক্রিকেট’ খেলা ক্রিকেটার তিনি কখনোই ছিলেন না। টেস্ট ক্রিকেটের ধরে খেলার যে ব্যাপারটি, সেটি বলতে গেলে নেই তাঁর ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ইংল্যান্ড দলের ‘বাজবল’ ঘরানার আক্রমণাত্মক স্টাইলে তিনি দারুণ ব্যাটসম্যান। কাল ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাজবল ব্যাটিংই করলেন ক্রলি। ১৮২ বলে ১৮৯ রানের এক ইনিংস।
কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ভরসা রেখেছিলেন ক্রলির ওপর। কালকের ইনিংস শেষে ক্রলি নিজেই বলেছেন সেই কথা। ক্রলিকে নিয়ে ম্যাককালামের মূল্যায়ন ছিল, ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান তিনি কখনোই নন। কিন্তু তাঁর মধ্যে আক্রমণাত্মক খেলার যে ব্যাপারটা আছে, সেটি বর্তমান ইংল্যান্ড দলের মানসিকতা ও দলীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে যায়। তিনি ‘অধারাবাহিক’ ক্রলির ওপর আস্থা রেখে তাঁর সেরাটিই বের করে আনতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁকে দিয়েছিলেন অবাধ স্বাধীনতা। টেস্ট ম্যাচে আক্রমণাত্মক শট খেলে আউট হওয়ার ‘বিলাসিতা’ দেখানোর সুযোগ তাঁকে করে দিয়েছিলেন। ম্যাককালাম জানতেন, ক্রলি যদি টিকে যান, তাহলে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন তাঁর ব্যাটিং দিয়ে। গতকাল ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেটিই করতে পেরেছেন এই ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান। ২১টি বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় সাজানো ক্রলির ইনিংসটিই এগিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে।
২০২১ সালে ১৬ ইনিংসে ১০ গড়ে মাত্র ১৭৩ রান করেছিলেন ক্রলি। গত বছর একটু উন্নতি করেছিলেন—২৯ ইনিংসে ৩০-এর বেশি গড়ে ৮৪৪ রান। এ মৌসুমে তাঁর আরও উন্নতি হয়েছে—এখন পর্যন্ত খেলা ১৩ ইনিংসে করেছেন ৫১৮, গড় ৪২। একজন ব্যাটসম্যানকে ‘নিজের মতো’ করে খেলতে দিলে যে তাঁর উন্নতি হবেই, ক্রলি সেটিই দেখিয়েছেন। এবারের অ্যাশেজে এখন পর্যন্ত ক্রলিই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যাশেজে তিনি ৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। সাত ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ৩৮৫, গড় ৫৫।
ক্রলি নিজের ওপর আস্থা রেখেছিলেন কিংবা ম্যাককালাম তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলেই এমন পারফরম্যান্স তাঁর—১৮৯ রানের ইনিংসটি খেলার পর ক্রলি বলেছেন সে কথাই, ‘আজকের দিনটা দারুণ ছিল। দল হিসেবে আমরা খুব ভালো জায়গায় আছি। আমি আজ (গতকাল) আমার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু এই ইনিংস খেলার পথে আমি বেশ কয়েকটি সুন্দর শট খেলেছি।’
নিজের অধারাবাহিকতায় একসময় নিজের ওপরই আস্থা হারিয়েছিলেন ক্রলি। কিন্তু সেই মনোভাব থেকে বের হয়েছেন এখন, ‘একটা সময় নিজের ওপর আস্থা হারিয়েছিলাম। তবে আমি আমার নিজের সামর্থ্যে আস্থা রেখেছি। আমি আমার মতো করে খেলে গেছি। আমি যেভাবে সব সময় খেলি, সেভাবেই খেলা চালিয়ে গেছি।’
কোচের আস্থার বড় একটা জায়গা দেখছেন নিজের ক্যারিয়ারে, ‘আমি অন্য কোনো দল হলে বাদ পড়ে যেতাম। কিন্তু কোচ ও অধিনায়ক আমাকে বলেছেন, মাঠে গিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করতে, নিজের ইনিংস দিয়ে দলে প্রভাব রাখতে। অনেক সময় অল্প রানে আউট হয়ে গিয়েছি। কিন্তু এবার রান পেলাম। আমি মনে করি, আমি ম্যানচেস্টারে দেখাতে পেরেছি, আমার এ পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা আছে। আমাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়, হবেও। কারণ, আমি ধারাবাহিক নই। আমি এই ইনিংসটা খেলতে পেরে আনন্দিত। এটাই আমার আসল সামর্থ্য। তবে এটা ঠিক, এমন ইনিংস ধারাবাহিকভাবে খেলা সম্ভব নয়।’