মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের জিততে তখন দরকার ২৪ বলে ২৫, সেঞ্চুরি পেতে সূর্যকুমার যাদবের চাই ১৯। তিলক বর্মা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করলেন, এ অবস্থা থেকে তিনি মেরে খেললে সূর্যকুমারের সেঞ্চুরি পাওয়া হবে না।
১৭তম ওভারের প্রথম বল থেকেই তিলক তাই সিঙ্গেল নিয়ে সূর্যকুমারকে স্ট্রাইকে আনায় মনোযোগী হলেন। প্যাট কামিন্সের করা ওই ওভারে সূর্য একটি সিঙ্গেল, দুটি চার আর এক ছক্কার সুবাদে ৯৬ রানে পৌঁছে গেলেন।
পরের ওভারের শুরুতে আবার স্ট্রাইকে তিলক। এবারও তিনি সিঙ্গেল নিয়ে বাকি কাজ সেরে ফেলার দায়িত্ব দিলেন সূর্যকে। থাঙ্গারাসু নটরাজনের করা ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ডিপ এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে সূর্যর ছক্কা—নিজের সেঞ্চুরি পূরণের পাশাপাশি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে জিতে গেল মুম্বাইও। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো!
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই অস্ট্রেলিয়ান ট্রাভিস হেডের শুরু আর প্যাট কামিন্সের শেষের ঝড়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান করেছিল হায়দরাবাদ। লক্ষ্য তাড়ায় সূর্যর ৫১ বলে অপরাজিত ১০২ রানের সুবাদে ৭ উইকেট আর ১৬ বল বাকি থাকতে জিতেছে মুম্বাই।
এ জয়ে আইপিএল পয়েন্ট তালিকার তলানি থেকে নয়ে উঠে এসেছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল। গুজরাট টাইটানসকে নামিয়ে দিয়েছে দশে। একইসঙ্গে প্লে–অফে খেলার আশা গাণিতিকভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে। ১২ ম্যাচ খেলে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট মুম্বাইয়ের। আজ হারের পরও ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে হায়দরাবাদ রয়ে গেছে চার নম্বরে।
এবারের আইপিএলে দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল গত ২৭ মার্চ। সেদিন ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখেছিলেন রেকর্ডের পর রেকর্ড। ঘরের মাঠ রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ২৭৭ রান করেছিল হায়দরাবাদ। জবাব দিতে নেমে মুম্বাই থেমেছিল ২৪৬ রানে। ৪০ দিন আগে হারের ‘প্রতিশোধটা’ আজ দারুণভাবে নিল মুম্বাই।
আইসিসি টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমারের এটি আইপিএলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। আগের সেঞ্চুরিটাও করেছিলেন আজকের ভেন্যু ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, গত বছর গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে। সে ম্যাচেও তিনি অপরাজিত ছিলেন। ৪৯ বলে করেছিলেন ১০২ রান। মুম্বাইয়ের হয়ে আইপিএলে দুটি সেঞ্চুরি সূর্য ছাড়া আছে শুধু রোহিত শর্মার।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে নিজেদের আগের ম্যাচের মতোই ‘ফ্লপ’ রোহিত শর্মা (৪), ঈশান কিষান (৯) ও নামান ধীর (০)। পাওয়ারপ্লেতেই নেই ৩ উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, কলকাতার বিপক্ষে ম্যাচের মতোই বুঝি পরিণতি হতে চলেছে মুম্বাইয়ের।
তবে সূর্যকুমার ও তিলক আজ মুম্বাইকে পথ হারাতে দেননি। শুরুর দিকে কিছুটা ধীরেসুস্থে খেলে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন। একটু থিতু হওয়ার পর সূর্য হাত খুলে খেলতে থাকেন আর তিলক ঠাণ্ডা মাথায় তাঁকে সঙ্গ দিয়ে যান। দুজন গড়েন ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, যা আইপিএল ইতিহাসে চতুর্থ বা এর নিচের উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২০ ওভারে ১৭৩/৮
(হেড ৪৮, কামিন্স ৩৫*, রেড্ডি ২০; পান্ডিয়া ৩/৩১, চাওলা ৩/৩৩, বুমরা ১/২৩)
মুম্বাই হায়দরাবাদ: ১৭.২ ওভারে ১৭৪/৩
(সূর্যকুমার ১০২*, তিলক ৩৭*, কিষান ৯; ভুবনেশ্বর ১/২২, কামিন্স ১/৩৫, ইয়ানসেন ১/৪৫)
ফল: মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব (মুম্বাই ইন্ডিয়ানস)।