আইসিএল দিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সম্মতির বাইরে হওয়ায় সেটি ছিল নিষিদ্ধ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। ২০০৭ সালে এই আইসিএলে নাম লিখিয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিলেন বেশ কিছু তারকা ক্রিকেটার। আইসিএলকে ঠেকাতেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড শুরু করে আইপিএল—সেই ২০০৮ সালে। বাকিটা ইতিহাস।
ক্রিকেটের দিগন্তরেখা বদলে দিয়েছে আইপিএল। গত ১৬ বছরে এটি পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি–টোয়েন্টি লিগে। আইপিএল এখন বাণিজ্যিক মূল্যে টক্কর দেয় ইউরোপীয় ফুটবল লিগগুলোর সঙ্গে। আইপিএল নিজেদের এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে ক্রিকেট দুনিয়ার অনেক তারকাই এটিকে নিজ দেশের জাতীয় দলের চেয়েও অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সম্প্রতি আইপিএলের প্রচারস্বত্ব বিক্রি হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যে।
এই আইপিএলের পথ অনুসরণ করে ক্রিকেট দুনিয়ায় এসেছে আরও অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। বাংলাদেশ চালু করেছে বিপিএল, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগ, পাকিস্তানে পিএসএল। অস্ট্রেলিয়া ঠিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আদলে না হলেও তাদের দেশে চালু রেখেছে জমজমাট টি–টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশ।
শ্রীলঙ্কাতেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ডে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটা ঠিক টি–টোয়েন্টি নয়, হচ্ছে ‘দ্য হানড্রেডস’; অর্থাং ১০০ বলের ক্রিকেট নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা এ বছর থেকেই শুরু করেছে নতুন মোড়কে টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ‘এসএ–টুয়েন্টি’। আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও শুরু হয়েছে টি–টোয়েন্টি লিগ ইন্টারন্যাশনাল টি–টোয়েন্টি।
বিশ্বব্যাপী এত ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট—আইপিএলের আদলে এই টুর্নামেন্টগুলোর ভবিষ্যৎ কী? ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী অবশ্য খুব একটা আশাবাদী নন এসব টি–টোয়েন্টি লিগ নিয়ে। তিনি মনে করেন, এই লিগগুলোর মধ্যে যেগুলো সঠিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে চলছে, টিকে থাকবে কেবল সেগুলোই।
একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়ে ভারতের বার্তা সংস্থাকে সৌরভ বলেছেন, ‘দুনিয়াজুড়ে এখন টি–টোয়েন্টি লিগ চলছে। কিন্তু আমি মনে করি, এর সব কটি টিকে থাকবে না। আইপিএলের কথা আলাদা। ভারতে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ইংল্যান্ডে আছে “দ্য হানড্রেডস”, দক্ষিণ আফ্রিকাতে শুরু হয়েছে এসএ–টুয়েন্টি। এই দেশগুলিতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা থাকায় এসব লিগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোতে তেমনটা নেই।’
হঠাৎ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা টি–টোয়েন্টি লিগগুলোকে নিয়ে মোটেও আশাবাদী নন সৌরভ, ‘শিগগির বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। খুব কম লিগই টিকে থাকবে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ভালোগুলোই টিকে থাকবে।’
সৌরভ এ বিষয়ে জিম্বাবুয়ের প্রসঙ্গ টেনেছেন, ‘অবকাঠামোর ওপর অনেক কিছু কিন্তু নির্ভর করে। আমরা যখন খেলা শুরু করি জিম্বাবুয়ে তখন ক্রিকেটের সমীহজাগানিয়া শক্তি। বড় বড় দলকে তারা হারিয়ে দেয়। কিন্তু এখন তাদের ক্রিকেটের মান কমে গেছে। মানুষের আগ্রহও কমে গেছে সে কারণে। অবকাঠামো যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল আর বিসিসিআইতে থাকার সময় খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।’