বাংলাদেশ বড় স্কোর মানেই মুশফিকের বড় সেঞ্চুরি
আরও একবার সেই মুশফিকুর রহিম।
টেস্টে বাংলাদেশ এক ইনিংসে ৫০০ রান তুলেছে, আর সেই ইনিংসে মুশফিক বড় ইনিংস খেলেননি, এমনটা হয়েছে খুব কমই। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টেও আরও একবার হাসল মুশফিকের ব্যাট। টেস্টে ১২ বারের মতো এক ইনিংসে ৫০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছে বাংলাদেশ।
আর মুশফিক খেলেছেন ১৯১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ৯ রানের জন্য পাননি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। মুশফিকের আগের তিনটি ডাবল সেঞ্চুরিতেও ৫০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এবার ৯ রানের জন্য রয়ে গেল আক্ষেপ, আফসোস!
ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়ায় আজকের ইনিংসটি নিয়ে মুশফিকের আক্ষেপ থাকতে পারে। তবে সব মিলিয়ে ৫০০ ছাড়ানো ইনিংসের নিজের অবদান দেখে মুশফিক কিছুটা সান্ত্বনা নিতেই পারেন।
৫০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তোলা ইনিংসে মুশফিকের ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে দুটি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে একটি ১৫৯ রানের ইনিংস, অন্যটি আজ ১৯১ রানের। ফিফটি আছে ৩টি, যার মধ্যে ৯২ রানের ইনিংসও আছে। ব্যর্থ যে হননি, তা–ও নয়। এই ১২ ইনিংসে মধ্যে মুশফিক একবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে, দুইবার ২০ রানের কমে। অর্থাৎ তিনটি ইনিংস তিনি ছিলেন ব্যর্থ। সংখ্যাটা আরেকটু বাড়বে যদি ৪৩ রানের একটি ইনিংসকে ব্যর্থ হিসেবে ধরা হয়।
মুশফিকের ৪৩ রানের ইনিংসটি খেলার দিনেই টেস্টে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম ৫০০ রান তোলে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেদিন মুশফিক নন, সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন নাঈম ইসলাম। ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন করেন ৯৬।
পরের বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে তো বাংলাদেশ একের পর এক অনেক রেকর্ডই গড়ে। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার ৬০০ (৬৩৮) রানের দেখা পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক পান ডাবল সেঞ্চুরি। মোহাম্মদ আশরাফুলও সেদিন ২০০ রানের মাইলফলক ছুঁতে পারতেন, তবে আউট হয়ে যান ১৯১ রানে। সে বছরই অক্টোবরে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবার ৫০০ রান তোলে বাংলাদেশ, মুশফিক করেন ৬৭ রান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিক আরও দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রথমটি ২০১৮ সালে (২১৯), এরপর ২০২০ সালে (২০৩) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিকের এই দুটি ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল হকও।
ওয়েলিংটনে ২০১৭ সালে মুশফিক তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলেন। সেদিনও ডাবল সেঞ্চুরি পেতে পারতেন। তবে শেষ পর্যন্ত আউট হন ১৫৯ রানে। মুশফিকের দুর্দান্ত এমন ইনিংসের দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। সেই ম্যাচে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই টেস্টেও হেরেছিল বাংলাদেশ।
মুশফিকের সব কটি বড় ইনিংসে একটি বিষয় স্পষ্ট। তিনি নিজে খেলেন, অন্যকেও খেলার সুযোগ দেন। পরিসংখ্যান বলছে, মুশফিকের খেলা বড় ইনিংসগুলোর দিনে অন্য ব্যাটসম্যানদেরও যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। তাঁদের অনেকেও খেলেছেন বড় ইনিংস। সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি থেকে আশরাফুলের ১৯১—এসব ইনিংসই এসেছে মুশফিকের জ্বলে ওঠার দিনে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে মুশফিক যখন উইকেটে আসেন, তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৪৭। সেখান থেকে মুশফিক উইকেটে থাকেন ৫২৮ রান পর্যন্ত। জুটি গড়েন সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে। এর মধ্য মিরাজের সঙ্গেই মুশফিক গড়েন ১৯৬ রানের জুটি। বাংলাদেশকে এনে দেন ১১৭ রানের লিড।
মুশফিকের বড় ইনিংস তাঁর জন্য ও দলের জন্য ভালো তো বটেই, অন্য ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো, এমনটা তো বলাই যায়।