ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ভুলে গেছে, তারা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। মনে তাদের ওয়ানডে সিরিজ হারের হতাশাটাই বাজছে বেদনার সুর তুলে। সেই সঙ্গে চলছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারের কাটাছেঁড়া। ওয়ানডেতে কোথায় সমস্যা, ব্যাটসম্যানরা কেন স্পিন খেলতে পারছেন না, বেশি বেশি টি-টোয়েন্টি খেলে ওয়ানডের অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না তো! ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে দলটাকে ঠিকঠাক দাঁড় করাতে কী করতে হবে?
বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা উল্টো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে হারের দুঃখ ওয়ানডে সিরিজ জেতায় এমনিতেই কমে গেছে গায়ানায়। সেটা অস্বাভাবিকও নয়। হারের মধ্য থাকা যেকোনো দলের জন্যই জয়ের সুবাতাস অক্সিজেনের মতো। দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে, সেটাই তো বেশি।
সেই স্বস্তি আজকের আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার শেষ ম্যাচে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও সুযোগ করে দিয়েছে। দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের পরই অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই ম্যাচে তাঁরা বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে চান। তবে কন্ডিশন ও টিম কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়তো একটু সীমিত পরিসরেই হবে।
কাল টিম হোটেলে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সেই আভাসই দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে, ‘বিজয়কে (এনামুল) খেলাতে পারলে আমারও ভালো লাগত। আমাদের ব্যাটিং লাইনআপে সে আরেকজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান, কিন্তু আমাদের আসলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দরকার। কাজেই সেদিন যে রকম বলেছিলাম, ততটা পরিবর্তন হয়তো করা সম্ভব হবে না। বিজয় ওয়ানডেতে এখনো কোনো ম্যাচ খেলেনি। কিন্তু ও ডানহাতি, আর আমরা চাই লাইনআপে যত বেশি সম্ভব বাঁহাতি রাখতে।’
তার মানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে সুযোগ পাওয়া টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এনামুল হককে দেশে ফিরতে হতে পারে কোনো ওয়ানডে না খেলেই! ডমিঙ্গোরও অবশ্য তাঁর জন্য সহানুভূতি আছে। এনামুলকে সান্ত্বনা দিতেই কিনা কোচ উদাহরণ টেনেছেন ইয়াসির আলীর। তিনিও অনেক দিন দলের সঙ্গে না খেলেই ঘুরেছেন। চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ না করে দেশে ফিরে গেলেও ইয়াসির এখন দলের নিয়মিত সদস্যই।
এনামুল না খেললে দলে পরিবর্তন শেষ পর্যন্ত একটাই হবে হয়তো—পেসার শরীফুল ইসলামের জায়গায় বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ডমিঙ্গোও বলছিলেন, এই উইকেটে একজন বাড়তি স্পিনার খেলানোটাই ভালো মনে হচ্ছে তাঁর কাছে।
মাত্র এক দিনের ব্যবধানে শেষ ম্যাচের দল নিয়ে এমন ‘ইউ টার্ন’ একটু অবাক করার মতোই। কারণ, এনামুল হঠাৎ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হয়ে যাননি আর প্রভিডেন্সের উইকেটও প্রথম দুই ওয়ানডেতেও স্পিনারদের দিকেই হাত বাড়িয়ে রেখেছিল। তারপরও তাইজুলের অন্তর্ভুক্তিটা ঠিক আছে, কিন্তু এনামুলের প্রতি একটু বোধ হয় অবিচারই করা হলো। একজন ক্রিকেটার যে সংস্করণের ক্রিকেটে ভালো খেলে আট বছর পর জাতীয় দলে ফিরলেন, তাঁকে দেখা হলো না সেই সংস্করণেই! তাহলে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর কোচ-অধিনায়ক মিলে যে ‘বেঞ্চে’র ক্রিকেটারদের দেখার কোরাস গাইলেন, সেটার দরকার ছিল কি?
ডমিঙ্গো যেমন হোটেলেই সংবাদ সম্মেলন সেরে নিয়েছেন, প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডের আগের দিন ক্রিকেটারদের সময়ও কেটেছে হোটেলেই। সকালের বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার শেষ ম্যাচের আগে অনুশীলন করতে যায়নি দল। হোটেলেই টিম মিটিং হয়েছে, টিম মিটিং শেষে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেছেন কোচিং স্টাফের সদস্যরা।
টেস্ট, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দ ভুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডের হার নিয়ে বেশি বিশ্লেষণমুখর। তবে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা উল্টো হবে কেন, সেই প্রসঙ্গে আসি। উল্টো হবে কারণ, ক্রিকেটাররা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও হয়তো এটাই ধরে নিয়েছে যে তাদের দল ওয়ানডেতেই ভালো খেলবে। সঙ্গে টেস্ট, টি-টোয়েন্টিটা চালিয়ে নিলেই হলো। এই দুই জায়গায় উন্নতির দৃশ্যমান কোনো চেষ্টা নেই বলেই কথাটা বলা।
ওয়ানডেতেও যে আছে, তা নয়। তবু প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের জন্য ৫০ ওভারের ক্রিকেটের চর্চাটা তো হয়। অর্থ, প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ক্লাবগুলোতে বোর্ড পরিচালকদের প্রভাবের যোগফলে সব ক্রিকেটারই চান লিগে খেলতে। সিরিজ জয়ের পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভালো করছে কেন প্রশ্নে অধিনায়ক তামিমও সেটাকেই একটা কারণ বলেছেন।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টির একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএল অনিয়িমত, হলেও অনেক ভুলত্রুটিকে সঙ্গী করে অনেকটা দায়সারাভাবেই হয়। আর টেস্টে দলটা যাঁদের নিয়ে গড়া হয়, সেই দলের অনেকেই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন না বা খেলার সুযোগ পান না।
এসব অভিযোগ-অনুযোগ অবশ্য বহুল চর্চিত। শুনতে ক্লিশে মনে হতেই পারে। কিন্তু গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে ফলের আশা করাটা যে বৃথা, সে কথা তো এখনো মিথ্যা হয়ে যায়নি।