কামিন্স সরে দাঁড়াবেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন ম্যাকডোনাল্ড
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে কামিন্স ও অস্ট্রেলিয়ার কঠোর সমালোচকদের একজন ছিলেন ভিক্টোরিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ ড্যারেন বেরি। কামিন্স এ সিরিজের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমনও বলেছিলেন তিনি। বেরির সমালোচনার কড়া জবাবই দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড। অন্যদিকে সাবেক অধিনায়ক টিম পেইন বলেছেন, বেরির এমন মন্তব্য অদ্ভুত মনে হয়েছে তাঁর কাছে।
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট বৃষ্টির সৌজন্যে ড্র হওয়াতে অ্যাশেজ ধরে রাখা নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এর আগে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে অসহায় হয়েও পড়া অস্ট্রেলিয়ার বেশ সমালোচনাই হয়। বিশেষ করে কামিন্সের অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল জোরাল। জ্যাক ক্রলিদের সামনে কামিন্সের অধিনায়কত্ব ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, বলা হচ্ছিল এমন। কামিন্সদের শর্ট বলের কৌশল ‘বিরক্তিকর ও দেখার অযোগ্য’ বলেছিলেন বেরি। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘দেখার অযোগ্য। আমাদের দারুণ এই খেলা ক্রিকেটের সব সমর্থককে শুভরাত্রি। এ খেলা নিয়ে কিছুটা ধারণা আছে, এমন কারও জন্যও এসব বাজে জিনিস দেখাটা অভাবনীয়। যথেষ্ট হয়েছে।’
এরপর আরেকটি টুইটে মার্ভ হিউজকে মেনশন করে তিনি লেখেন, ‘হ্যাঁ মার্ভ হিউজ, আমি বিছানায়, তবে ঘুমাতে পারছি না। আমার মত হচ্ছে, প্যাট কামিন্স দুর্দান্ত ক্রিকেটার নিঃসন্দেহে, তবে এ কথা মনে রেখো—সে অ্যাশেজ সিরিজের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি এরপর স্মাজের (স্টিভেন স্মিথ) কাছে ফিরে যাবে নাকি (ট্রাভিস) হেড বা (মিচেল) মার্শের দিকে এগোবে? অ্যাশটন টার্নার টি-টোয়েন্টি (অসম্পূর্ণ বাক্য)।’
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পাওয়া কামিন্সের বরাবরই সমর্থক কোচ ম্যাকডোনাল্ড। বেরির সঙ্গেও ব্যক্তিগত ইতিহাস আছে তাঁর। ভিক্টোরিয়ায় বেরি তাঁর অধিনায়ক ছিলেন, পরে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় কোচও ছিলেন। অ্যাশেজ শেষে কামিন্স সরে দাঁড়াবেন, বেরির এমন মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড, ‘আমি ড্যারেনের এমন মন্তব্য দেখেছি। ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। এতটুকু বলতে পারি, নেতৃত্বের অনেক আকার ও রূপ আছে। আর আমরা যদি শুধু কৌশলকেই বাঁচামরা হিসেবে নিই, তাহলে হয়তো আমাদের কিছু কৌশল ও এর বাস্তবায়নের সমালোচনা ন্যায্য ও যুক্তিসংগত।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘তবে অধিনায়ক সিরিজের পর পদত্যাগ করবে, এমন বলাটা বাড়াবাড়ি। কোনো কোনো মন্তব্যকে আমরা সম্মান করি, কোনোটিকে করি না।’ এসব ব্যাপারে সাবেক অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা বলেননি ম্যাকডোনাল্ড।
এদিকে ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ অ্যাশেজ সিরিজের অধিনায়ক পেইন বেরির মন্তব্যে অবাকই হয়েছেন। এসইএন টেসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সে (বেরি) কখনোই বড় কথা বলতে পিছপা হয় না। তবে প্যাট বা তার খুব ঘনিষ্ঠ কারও কাছ থেকে নিজে যদি কোনো মেইল না পেয়ে থাকে, তাহলে এ মন্তব্যটি অদ্ভুত। হয়তো প্যাটকে দেখে তার ক্লান্ত মনে হয়েছে, হয়তো সে কোনো একভাবে বুঝেছে সে (কামিন্স) চালিয়ে যেতে চায় না। তবে আমার মনে হয় না এটি ঠিক, আমি জানি, এটি ঠিক নয়। সে সরে দাঁড়ালে আমি খুবই অবাক হবো।’
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টটি অবশ্য বোলার কামিন্সের জন্য ভালো যায়নি মোটেও। এক ইনিংস বোলিং করে ১ উইকেট নিতে ১২৯ রান খরচ করেছিলেন তিনি, ক্যারিয়ারে কখনোই এক ইনিংসে এত রান দেওয়ার রেকর্ড নেই তার। বৃষ্টির কারণে ড্র করতে পারলেও এর আগের তিন দিন যে ভালো কাটেনি অস্ট্রেলিয়ার জন্য, ম্যাকডোনাল্ড অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন তা, ‘আমরা পরিকল্পনা নিয়ে আবার ভাবব, যেভাবে এগিয়েছি, বাস্তবায়নে যাদের দায়িত্ব ছিল। দিন তিনেক বেশ হতাশাজনক ছিল। আমরা সেটি অস্বীকার করছি না, এর দায় আমাদেরই।’
কামিন্সের অধিনায়কত্বে এখন পর্যন্ত ১১টি টেস্ট জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, হেরেছে ৪টি। অ্যাশেজের আগে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও জিতেছে তারা। ফলে শুধু ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের পরই অস্ট্রেলিয়ার সমালোচনা করাকে ঠিক মনে করছেন না ম্যাকডোনাল্ড, ‘যেভাবে জ্যাক (ক্রলি) আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে, প্রতিপক্ষকেও একটু কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে সর্বশেষ আট মাসে এ দলটি দারুণ কিছু ক্রিকেট খেলেছে। শুধু তিন দিনের ওপর ভিত্তি করে বিচার করাটা তাই বেশ কঠোর হয়ে যায়।’
ওভালে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি শুরু হবে ২৭ জুলাই। এ ম্যাচে আবারও সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকছে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত কামিন্সরা সেটি করতে পারলে ২০০১ সালের পর প্রথম অস্ট্রেলিয়ান দল হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জিতবে তারা।