অ্যান্ডারসনের পরও জীবন আছে, মনে করিয়ে দিলেন স্ট্রাউস
ব্যাপারটি ভাবলেই অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের নাকি কেমন যেন লাগে।
২০০৪ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল স্ট্রাউসের। ১০০ টেস্টের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন ১২ বছর আগে। অথচ তাঁর এক বছর আগে অভিষেক করা অ্যান্ডারসন খেলছেন এখনো!
আগামী জুলাইয়ের পর অন্তত ‘অ্যান্ডারসন এখনো খেলছেন’, সেটা ভেবে খারাপ লাগবে না স্ট্রাউসের। ২১ বছরের ক্যারিয়ারের যে ইতি টানছেন ইতিহাসের সফলতম পেসার। সাবেক সতীর্থকে ‘ইতিহাসের অন্যতম সেরা’ আখ্যা দেওয়া স্ট্রাউস বলছেন, অ্যান্ডারসনের সরে যাওয়ার এটিই ঠিক সময়।
অ্যান্ডারসনকে ৪২টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্ট্রাউস। ক্যারিয়ারের দুটি স্মরণীয় সিরিজ অ্যান্ডারসনের কেটেছে তাঁর নেতৃত্বেই। ২০১০-১১ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন অ্যান্ডারসন, পরের বছর ভারতের মাটিতে ৪ টেস্টে নিয়েছিলেন ২১ উইকেট। এ দুটি দেশে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ সিরিজ জয় ছিল সে দুটি। স্ট্রাউসের অধীনে ইংল্যান্ড উঠেছিল টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে, ওই দলের অবিচ্ছেদ্য অংশও ছিলেন অ্যান্ডারসন। স্ট্রাউসের মতে, ‘সে আসলে বেশি ভরসাযোগ্য একজন ছিল।’
অ্যান্ডারসনের প্রশংসা করতে গিয়ে স্ট্রাউস বলেছেন, ‘প্রতিবারই তার কাছ থেকে কী পেতে যাচ্ছেন, সেটি আপনি জানতেন—সে আসলে এমন একজন বোলার ছিল। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার দারুণ একটা মনোভাব ছিল, স্কিলও অসাধারণ। যেকোনো অধিনায়কই তাকে দলে পেতে চাইবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, সে ফিট থেকেছে। খুবই কম সময় গেছে, সে চোটে পড়েছে। এটা ভাবলেই কেমন লাগে, তার ইংল্যান্ড অভিষেক আমার আগে। আর আমি ১২ বছর হলো অবসরে গেছি!’
ভিন্ন ভূমিকায় ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে ফিরেছিলেন স্ট্রাউস। এখন রব কির যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভূমিকা, স্ট্রাউস ছিলেন একই রকম পদে। সে সময় তাঁর নেওয়া অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিল অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে বাদ দেওয়া। সে সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে তাকিয়ে স্ট্রাউস বলেছেন, ‘তার দুজনই দারুণ পারফরমার ছিল, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটেই তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটি পাওয়ার ছিল। আর বোলারদের নিয়ে আপনাকে সব সময়ই ভাবতে হবে, যেন আপনি তাদের মেরে না ফেলেন। আমার এটা ভাবতে ভালো লাগে যে এটি তাদের ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করেছে।’
কি, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের এখন অ্যান্ডারসনকে দেওয়া ‘সময় শেষের’ বার্তাটাও তাই বুঝতে পারছেন স্ট্রাউস, ‘অমন অবস্থানে থাকলে বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে মেলাতে হয়। আর ভুল হোক বা ঠিক, আমরা আমাদের টেস্ট দলকে অ্যাশেজ সিরিজ দিয়েই বিচার করি।’
২০২৫-২৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটির ওই অ্যাশেজে অ্যান্ডারসনের খেলা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলে মনে করেন স্ট্রাউস। অ্যান্ডারসন-ব্রডের শূন্যস্থান পূরণ করা সহজ কথা নয়, তবে সেটির প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময় বলেও মনে হচ্ছে তাঁর। স্ট্রাউসের মতে, ‘তারা বেশ নির্ভরযোগ্য আর সিনিয়র বোলার ছিল, ফলে আপনাকে সময় আর প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করতে হবে, অন্যদেরও নেতৃস্থানীয় পদে এগিয়ে আসতে হবে। ফলে আমার মনে হয়, এটিই ঠিক সময়। অনেক সময়ই কোনো কিছু না খোয়া গেলে সেটির মর্যাদা হয়তো বোঝা যায় না। কিন্তু জেমস অ্যান্ডারসনের পরও তো জীবন আছে।’
স্ট্রাউসের আশা, লর্ডসে প্রাপ্য বিদায়ী সংবর্ধনাটি পাবেন অ্যান্ডারসন, ‘এ মুহূর্তটার কথা কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে একদিক থেকে ভাবলে। আমরা তো এমন ভাবতে চাইতাম, কখনোই এটি ঘটবে না। অসাধারণ এক ক্যারিয়ার। সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা সহজ কাজ নয়, আর বোলিং তো আরও কঠিন। সে সর্বকালেরই অন্যতম সেরা বোলার।’