একেই বুঝি বলে কপাল!
শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিসদের মতো কিংবদন্তিরা লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজেদের নাম লেখাতে পারেননি। সেদিক থেকে বেন ডাকেটকে পরম সৌভাগ্যবানই বলতে হয়।
গত জুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি করে নাম তুলেছিলেন অনার্স বোর্ডে। সেঞ্চুরি হতে হতেও হয়নি লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে। আউট হয়েছিলেন ৯৮ রানে।
তবে এবার ক্রিকেট বিধাতাই বোধ হয় চাচ্ছেন পয়মন্ত ভেন্যুতে আরেকবার তিন অঙ্কের দেখা পেয়ে যান ডাকেট। নয়তো কি আর হাফ–সেঞ্চুরি তুলতেই তিন–তিনবার ‘জীবন’ পান!
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের বলে ডাকেটের ক্যাচ ছাড়েন ক্যামেরন গ্রিন। তৃতীয় ওভারে সেই স্টার্কের বলেই রিভিউ নিয়ে টিকে যান। আর ফিফটি তুলে নেওয়ার পরের ওভারে গ্রিনের বলে ফাইন লেগে স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন। আউট ধরে নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটাও ধরেছিলেন। তখনই মাঠের আম্পায়াররা তাঁকে ফিরে আসতে বলেন। স্টার্ক ক্যাচটা নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে গিয়ে বলসহ হাতটা রেখেছিলেন মাটিতে। তাঁর এই অসতর্কতায় শুধু ডাকেট নন, ইংল্যান্ডও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে!
কাল চতুর্থ দিনের পড়ন্ত বিকেলে ডাকেট আউট হলে যে আজ শেষ দিনের রোমাঞ্চ বলতে তেমন কিছু থাকত না। অধিনায়ক বেন স্টোকসকে করতে হতো ২০১৯ অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টের পুনরাবৃত্তি। আপাতত স্টোকসকে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে হচ্ছে না ডাকেট শেষ পর্যন্ত টিকে আছেন বলেই।
নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে নেমে নতুন বলে স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের তোপে একসময় ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। তবে পঞ্চম উইকেটে দুই ‘বেন’ ডাকেট–স্টোকসের ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সিরিজে সমতা ফেরোনোর আশা ভালোভাবেই জিইয়ে রেখেছে। স্বাগতিকরা আর কোনো উইকেট না খুইয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে ১১৪ রানে। জিততে হলে আজ শেষ দিন তাদের দরকার আরও ২৫৭ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৬ উইকেট।
এর আগে উসমান খাজার ফিফটিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। স্টুয়ার্ড ব্রড নেন ৪ উইকেট। তবে ঘটনাবহুল দিনে সবচেয়ে আলোচিত নাম নাথান লায়ন। লর্ডস টেস্ট এমনিতেই লায়নের জন্য মাইলফলকের। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়েছেন ঐতিহাসিক ভেন্যুতেই। তবে বিশেষ ম্যাচটিই তাঁর পথচলায় বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। পরশু ফিল্ডিংয়ের সময় বাউন্ডারি লাইনে বেন ডাকেটের একটি শট আটকাতে গিয়ে পায়ের মাংসপেশিতে চোট লাগে। ফিজিওর কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়ার পর অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারের অ্যাশেজ বুঝি শেষ।
কিন্তু কাল চতুর্থ দিন বিকেলে সবাইকে চমকে দিয়ে লর্ডসের লংরুম ধরে সিঁড়ি বেয়ে ব্যাট হাতে যখন নেমে এলেন, করতালি দিতে দিতেই দর্শকেরা হয়ে যান বিস্ময়ের ঘোরে বন্দী। টিভি পর্দার দর্শকেরা হয়তো আরও বেশি অবাক হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে নবম উইকেট পতনের পরই যে ধারাভাষ্যকার বলে ফেলেছিলেন, ইংল্যান্ডের সামনে ৩৫৬ রানের লক্ষ্য। কিন্তু লায়নকে নামতে দেখে কথা ফিরিয়ে নিতে হয়েছে ধারাভাষ্যকারেরও।
না, চোট নিয়ে ব্যাট করতে নামা লায়ন অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি। তবে স্টার্কের সঙ্গে শেষ উইকেট জুটিতে যে ১৫ রান যোগ করেছেন, তাতেই ইংল্যান্ডকে তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পেরেছে সফরকারীরা। এর চেয়ে বেশি লক্ষ্য তাড়া করে একবারই জিতেছে তারা। সেটা বাজবলের আবির্ভাবের পরেই; গত বছর ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টনে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৭৮ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে।
দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলায় এবার কাজটা বেশ কঠিন। তবে ‘বাজবল’ মন্ত্রে দীক্ষিত ইংলিশদের জন্য অসম্ভব বলে তো কিছু নেই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৪১৬ ও ২৭৯
(খাজা ৭৭, স্মিথ ৩৪; ব্রড ৪/৬৫, রবিনসন ২/৬৮)
ইংল্যান্ড : ৩২৫ ও ৩১ ওভারে ৪/১১৪
(ডাকেট ৫০*, স্টোকস ২৯*; কামিন্স ২/২০, স্টার্ক ২/৪০)
* চতুর্থ দিন শেষে