ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন নিয়ে যে যুক্তি দিলেন সাকিব
ওয়ানডে বিশ্বকাপটা যখন রান–বন্যায় ভাসছে, তখন বাংলাদেশ দলকে ভোগাচ্ছে তাদের ব্যাটিং। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২৫৬। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে ৩টিতেই হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। আর এই ম্যাচগুলোয় হারের কারণ হিসেবে বারবার সামনে আসছে ব্যাটিং ব্যর্থতা। আগামীকাল বাংলাদেশ দল খেলবে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ব্যাটিং স্বর্গ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। ছোট বাউন্ডারি ও ব্যাটিং উইকেট সহায়ক উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রান করেছে। এবার সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই আগামীকাল মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই কথা হয়েছে ব্যাটিং নিয়ে। দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে বলা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এভাবে, ‘আরও ৫টা ম্যাচ আছে, যদি মত দিতেই হয়, টুর্নামেন্ট শেষ হলে দেওয়াই ভালো।’ ব্যাটিংয়ের আলোচনায় মেহেদী হাসান মিরাজের নামও এল। লোয়ার অর্ডার থেকে তাঁকে টপ অর্ডারে জায়গা দিতে গিয়ে টপ অর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানের জায়গা অদলবদল করতে হচ্ছে।
মিরাজকে টপ অর্ডারে খেলানোর কারণ জানতে চাইলে সাকিবের উত্তর ছিল এমন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে যখন এশিয়া কাপে এক শ করল, তখন থেকেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে আবার সে ওপরের দিকে ব্যাটিং করবে। এর ভেতরে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করেছে। আফগানিস্তানের সঙ্গেও রান করেছে। স্বাভাবিকভাবেই আপনার একজন ব্যাটসম্যান যখন ছন্দে আছে, তখন আপনি চেষ্টা করবেন তাকে বেশি সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সেই চিন্তা থেকেই তাকে ওপরে ব্যাটিং করানো হয়।’
সে জন্য যে দলের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের নিচে খেলতে হচ্ছে? এতে অবশ্য সাকিব কোনো সমস্যা দেখছেন না। তাঁর যুক্তি, ‘আমাদের যারা ভালো ব্যাটসম্যান, তারা হয়তো পরের দিকে ব্যাটিং করছে, আমরা ভাবছি। আমার কাছেও সেটা মনে হয় একটু পরের দিকে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা যদি একটু উল্টোভাবে চিন্তা করি, তারা ওপরে আসল। কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে তারা রান করবে। যদি তারা না করে, তখন কি মনে হবে তারা আগের জায়গায়ই ভালো ছিল। এগুলো আসলে অনেক অনেক জটিল, ট্রিকি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হয়। কখনো সফল হই, কখনো ব্যর্থ হই।’
ব্যাটসম্যানদের দিকে আঙুল তুলে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার তো মনে হয়, পরের দিকে ব্যাটিং করলেও আমাদের ২৮০-২৯০ করার সুযোগ ছিল। প্রতিটা ম্যাচেই। ইংল্যান্ড বলেন, ইন্ডিয়া ম্যাচে বলেন, নিউজিল্যান্ড বলেন। আপনি যদি প্রতিটা ম্যাচেই দেখেন রিয়াদ ভাই ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান তো ছিল না, যে শেষ পর্যন্ত খেলেছে। সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সেটা ঠিক না। রিয়াদ ভাইকে যে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে সেটা তিনি খুব ভালোভাবে পালন করেছেন। আমরা যদি তাকে ওপরে নিয়ে আসি, তাকে যদি তার দায়িত্ব থেকে বাইরে নিয়ে আসি, তিনি যদি খারাপ করে, তখন তারও খারাপ লাগবে, আমাদেরও। তখন আপনারাও এটা নিয়ে কথা বলবেন।’
বিশ্বকাপের আগে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দারুণ ছন্দে ছিলেন নাজমুল হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাট থেকে বড় রান পায়নি বাংলাদেশ দল। সাকিবকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তরুণ ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই কথা বললেন, ‘দেখুন, আমরা পরিকল্পনা করে এসেছি যে সর্বনিম্ন ৯টা ম্যাচ, বেশি হলে ১১টা ম্যাচ খেলব। ৪টা ম্যাচের পরিকল্পনা করে তো আসিনি। আর একটা খেলোয়াড় সব ম্যাচ ভালো খেলবে না, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু যখন সে খেলোয়াড়টা রান করা শুরু করে বা ভালো করা শুরু করবে, সে যদি পরবর্তী ৫টা ম্যাচেও করে তাহলে পারফরম্যান্স মোটামুটি একটা ভালো অবস্থায় চলে যাবে। এ কারণেই বলি, এখনই খুব বেশি মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আশা করি আমরা সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো করব।’