এমন চাপের ম্যাচ আগে কখনো খেলেননি নাজমুল

বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনপ্রথম আলো
স্নায়ুক্ষয়ী এক ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুভসূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। রিশাদ হোসেন–মোস্তাফিজুর রহমানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে লঙ্কানদের ১২৪ রানেই আটকে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জয়টা ঠিকই আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের তৃপ্তির কথা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। বলেছেন, এমন চাপের ম্যাচ তিনি আগে কখনো খেলেননি। পাশাপাশি এই জয় পরের ম্যাচগুলোতেও আত্মবিশ্বাসের জোগান দেবে বলে মনে করেন নাজমুল। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কথার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো—

শ্রীলঙ্কার পারফরম্যান্স

শ্রীলঙ্কা খুব ভালোভাবে শুরু করেছিল। কিন্তু আমরা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসি। তবে বোলিংয়ে তারা খুব ভালো করেছে। তারা বেশ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তাদের ফিল্ডাররা সব উজাড় করে দিয়েছে। কিন্তু তারা রান কিছুটা কম করেছে।

ম্যাচের আগে অনেক বেশি চাপে ছিলেন কি না

আমার তেমনই মনে হয়েছে। ম্যাচের আগেও বোধ হচ্ছিল, এমনকি দুই দিন আগে থেকে সবাই এটা জানতাম। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এমন চাপের ম্যাচ এর আগে আমি খেলিনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে, আলহামদুলিল্লাহ, খেলাটা দিন শেষে জিততে পেরেছি।

আরও পড়ুন

ম্যাচ জেতার পর অনুভূতি

সবাই জানতাম এই ম্যাচটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার মনে হয়, বোলিংয়ে শুরুটা ভালো করিনি। এরপরও সবাই শান্ত ছিল। পাশাপাশি মিডল ওভারে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি, বিশেষ করে বোলাররা, এমনকি ফিল্ডাররাও (তা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে)। সবাই নিজেদের দৃঢ়তা দেখিয়েছে।

ব্যাটিংটা অবশ্য ভালো হয়নি। এ ধরনের চাপের ম্যাচে এমনটা হয়; কারণ, ম্যাচটা ওদের (শ্রীলঙ্কা) জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওরা অনেক চেষ্টা করেছে। দিন শেষে আমরা দুইটা পয়েন্ট পেয়েছি, এ জন্য ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন

জয়ের গুরুত্ব নিয়ে

এ জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরের তিনটা ম্যাচও খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। সেই ম্যাচের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করে আবার আসতে হবে। যেটা বলছিলাম, ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া উপায় নেই। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা সবাই যদি অবদান রাখতে পারি, তাহলে পরের ম্যাচেও ভালো কিছু করতে পারব।

দারুণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ
আইসিসি

জয়ের কৃতিত্ব কার

প্রথমত এই জয়টা পুরো বাংলাদেশ দলের। ১৫ জন খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদেরও, সবাই মিলেই খেলাটা জিতেছি। ব্যাটসম্যানদের আলাদা কোনো বার্তা দেওয়া ছিল না। উইকেট দেখে খেলার স্বাভাবিক পরিকল্পনা নিয়েই সবাই মাঠে নেমেছে। আমরা স্কোরবোর্ড দেখে কোনো পরিকল্পনা করিনি।

আত্মবিশ্বাস বেড়েছে কি না

এ ধরনের ম্যাচ জিতলে সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে। যেহেতু এ ম্যাচটা আমরা জিততে পেরেছি, সবার বাড়তি আত্মবিশ্বাস তো থাকবেই। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে হবে। আর অবশ্যই এ জয়টা কাজে দেবে।

আরও পড়ুন

রিশাদের বোলিং নিয়ে

সে অসাধারণ বোলিং করেছে। আমার মনে হয় গত কয়েকটা সিরিজ ধরেই সে ভালো বল করছে। সে যেভাবে অনুশীলন করে (দারুণ) এবং তার প্রস্তুতি খুবই ভালো। আমাদের সব সময় একজন লেগ স্পিনার না থাকার হতাশা ছিল। সে জায়গা আমাদের পূরণ হয়েছে। আশা করব সামনের ম্যাচগুলোতেও সে ধারাবাহিক থাকবে।

ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তা

মনে হয় না চিন্তার খুব বেশি কারণ আছে। এ জন্য কথাটা বলছি যে ম্যাচটা খুবই চাপের ছিল। দিন শেষে আমরা জিততে চেয়েছি। ফলের কথা যদি বলি, দুইটা পয়েন্ট আমরা পেয়েছি। ব্যাটসম্যানরা সবাই জানে যে আমরা হয়তো ভালো ব্যাটিং করিনি। আর সবাই প্রতিদিন ভালো খেলবে না। যেমন হৃদয় খুবই ভালো ব্যাটিং করেছে, রিয়াদ ভাই খেলাটা শেষ করল। লিটন অনেক দিন পর সুন্দর একটা শুরু এনে দিল। কিছু কিছু জায়গায় ভালো হয়েছে। আমি আশা করব যে যেদিন ভালো খেলবে, সে যেন খেলাটা জেতায়। এমন না যে সাতটা ব্যাটসম্যানই ভালো খেলবে।

আরও পড়ুন

ওপেনারদের ওপর প্রত্যাশা

খেলাটা শুধু ওপেনারের না। যে সাতজন ওপরে ব্যাটিং করি, সবারই দায়িত্ব। আমি আশা করব, পরের ম্যাচে ওপেনাররা ভালোভাবে শুরু করবে এবং খেলাটা শেষ করে আসবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা

আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। মনে হয় না, খেলোয়াড়েরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক বেশি অনুসরণ করে। আর এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা ভাবছি নিজেরা যে জিনিসটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, সেটা নিয়ে। আমরা নিজেদের প্রতি কতটা সৎ এবং প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিই কি না! এ ছাড়া দলকে জেতানোর জন্য শতভাগ চেষ্টা করছি কি না, এ জায়গাগুলো নিয়েই আমরা ভাবছি। এখানে যে ১৫–১৭ জন খেলোয়াড় আছে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং প্রতিদিন ভাবে যে আমি দলকে জেতাব।

দারুণ বোলিং করেছে রিশাদ
এএফপি

টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত

টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পর ওরা খুব ভালো শুরু করে। কিন্তু আমার একবারও সন্দেহ হয়নি (নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে)। খেলাটাই এমন যে দুই–একটা (উইকেট) পড়লে যেকোনো সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আর আমাদের বোলাররা যে অবস্থায় আছে এবং শেষ কয়েকটা সিরিজে যেভাবে বল করেছে, সে কারণে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সেটা ওরা করেও দেখিয়েছে।

পরের ম্যাচের উইকেট নিয়ে

নিউইয়র্কের উইকেট নিয়ে বলব, টিভিতে আমরা খেলা দেখেছি। শ্রীলঙ্কা–দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের দিন আমরা অনুশীলন করিনি, সেদিন পুরো দল একসঙ্গে বসে ম্যাচটা দেখেছি এবং পরিকল্পনা করেছি যে কীভাবে খেলা উচিত। তারপর ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আছে। সেটা দেখার সুযোগ হবে। ছোটখাট কিছু ধারণা তো পেয়েছি। কিন্তু নির্দিষ্ট উইকেটটা কেমন থাকে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের ব্যাটিং–বোলিং দুটিই করতে হবে।

আরও পড়ুন