শুধু সাকিবই অধিনায়ক, নাকি লিটনও

অদূর ভবিষ্যতে সাকিবকে শুধু সাদা বলে এবং লিটনকে লাল বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিতে দেখা যেতে পারেছবি : এএফপি

তবে কি আবারও তিন সংস্করণেই অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান? প্রশ্নটা উঠছে কারণ, পরশু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সরাসরিই বলে দিয়েছেন, ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সাকিব তাঁদের প্রথম পছন্দ

আগে থেকেই টেস্ট এবং টি–টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে থাকা সাকিবেরও নাকি ওয়ানডে দলের দায়িত্ব নিতে আপত্তি নেই। বাংলাদেশ দলকে তিন সংস্করণে নেতৃত্ব দেওয়াটা তাঁর জন্য নতুন কিছুও নয়।

অবশ্য বিসিবি সাকিবকে ওয়ানডের নেতৃত্ব দিয়ে টেস্টের নেতৃত্ব অন্য কাউকে দেয় কি না, সেই প্রশ্নও আলোচনায় ভালোভাবেই আছে। বিসিবির একটা ধারণা যে বয়স ৩৬ হয়ে যাওয়া সাকিব হয়তো টেস্ট ক্রিকেটটা আর নিয়মিত খেলবেন না। বোর্ডের কারও কারও দাবি, সাকিবই নাকি এটা তাঁদের বলেছেন।

ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের টেস্ট খেলার কথা ১৪টি। ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি তো আছেই; সাকিবের জন্য এর সঙ্গে যোগ হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে নিয়মিত টেস্ট খেলাটা তাঁর পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, সে একটা প্রশ্ন তো বটেই। আর টেস্ট ক্রিকেট তো আরও আগে থেকেই তিনি খেলছেন বেছে বেছে।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকে চান
ছবি : প্রথম আলো

বিসিবির ভাবনা হলো, সাকিব যদি টেস্ট নিয়মিত না–ই খেলেন, তাহলে তাঁকে নেতৃত্ব দিয়ে কয় দিন পরপর বিকল্প অধিনায়ক খোঁজার ঝামেলা পোহানো কেন! সে ক্ষেত্রে সাদা বল ও লাল বলের ক্রিকেটের জন্য দুজন আলাদা অধিনায়ক বেছে নেওয়াই ভালো মনে করছে বোর্ড। ওয়ানডে এবং টি–টোয়েন্টির অধিনায়ক হতে প্রস্তাব দেওয়া হবে সাকিবকে। টেস্টের নেতৃত্ব দেওয়া হতে পারে বর্তমান সহ–অধিনায়ক লিটন দাসকে। সে ক্ষেত্রে টেস্টের সহ–অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্বের দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজের।

তবে এসবই এখন পর্যন্ত আলোচনা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের কাঠামোটা কেমন দাঁড়াবে, তা নির্ভর করছে সম্ভাব্য অধিনায়কদের সঙ্গে বিসিবির আলোচনা এবং পরবর্তী সময়ে বোর্ড পরিচালকদের সভার ওপর। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান আজ–কালের মধ্যে নিজেই ফোনে কথা বলবেন সম্ভাব্য অধিনায়কদের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কায় থাকা সাকিবের পরিকল্পনা জেনে প্রয়োজনে কথা বলবেন কানাডায় থাকা লিটনের সঙ্গেও। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামীকালই অধিনায়কত্ব নিয়ে নতুন ঘোষণা দিতে পারেন বোর্ড সভাপতি। ঘোষণা হয়ে যাওয়ার কথা ২০–২২ সদস্যের দলটাও। এরপর পরশু থেকে শুরু হবে অনুশীলন।

আরও পড়ুন

তিন সংস্করণের খেলায় বাংলাদেশ দলে এত দিন লাল বল–সাদা বলের ক্রিকেট মিলিয়েই নেতৃত্বের বণ্টন করা ছিল। সাকিব যেমন টেস্টের অধিনায়ক, আবার সাদা বলের ক্রিকেট টি–টোয়েন্টির নেতৃত্বও তাঁরই কাঁধে। টি–টোয়েন্টিতে তাঁর কোনো ডেপুটি নেই, তবে টেস্টে আছেন লিটন।

নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের সঙ্গে আলোচনায় আছেন লিটনও
ছবি : আইসিসি

সাদা বলের আরেক সংস্করণ ওয়ানডেতে অধিনায়ক ছিলেন তামিম। তাঁরও কোনো ডেপুটি ছিল না। তবে সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে অলিখিতভাবে লিটনকে ওয়ানডে দলেরও সহ–অধিনায়ক করা হয়েছিল। প্রথম ওয়ানডের পর তামিমের অবসর–কাণ্ডে শেষ দুই ওয়ানডেতে তিনিই নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশকে।

তামিম ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছাড়ার পর পুরো ব্যাপারটাতেই একটা ওলটপালট আসতে পারে বলে আলোচনা। সেটি হতে পারে তিন সংস্করণেই এক অধিনায়কের পথে হেঁটে অথবা সাদা বলের ক্রিকেটে দেখা যেতে পারে এক অধিনায়ক, লাল বলে আরেকজন। সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই আছেন সাকিব। বিসিবি অধিনায়ক নির্বাচনে কোন পথে যাবে, সেটি নির্ভর করছে সাকিব অধিনায়ক হিসেবে কোন সংস্করণে কতটা সময় দিতে পারবেন, তার ওপর। আবার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ব্যাপারে কিছু শর্ত থাকতে পারে সাকিবেরও।

মিরাজকে টেস্ট দলের সহ–অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে
ছবি : এএফপি

অধিনায়কত্ব নিয়ে বিসিবির আরেক চিন্তা, তিন সংস্করণেই অধিনায়ককে তারা দায়িত্ব দিতে চায় লম্বা সময়ের জন্য। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে কারণেই ক্যারিয়ার নিয়ে সাকিবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে জানা প্রয়োজন। তাঁকে কি তিন সংস্করণেই নিয়মিত পাওয়া যাবে? পাওয়া গেলে সেটা কত দিন?

আরও পড়ুন

সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ভূমিকায় বদল আসাটা নিশ্চিত। হয় তিনিই তিন সংস্করণের অধিনায়ক হবেন, অথবা টেস্ট বাদ দিয়ে শুধু ওয়ানডে আর টি–টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দেবেন। এ বছর এবং আগামী বছর মিলিয়ে সাদা বলের দুটি বিশ্বকাপই ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টির অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকে প্রথম পছন্দ ভাবার মূল কারণ। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে অধিনায়ককে শুধু মাঠে দল পরিচালনা করলেই হয় না, মাঠের বাইরেও অনেক দায়িত্ব পালন করার থাকে। সাকিবের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ক্রিকেটের মুখ হয়ে ওঠাটাকে এখানে গুরুত্ব দিতে চায় বিসিবি।

ওয়ানডের নেতৃত্ব ছাড়ার পর এখন অনেকটাই চাপমুক্ত তামিম
ছবি : ইনস্টাগ্রাম

তামিমের ক্ষেত্রেও এই চিন্তাই ছিল তাদের। সে জন্যই এত কিছুর পরও বিসিবি চেয়েছিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত তামিমই ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব করুন। তামিম নেতৃত্ব ছাড়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সর্বশেষ সভাতেও বিসিবির কর্মকর্তারা চেষ্টা করেছেন তাঁর সিদ্ধান্ত বদলানোর। কিন্তু চাপমুক্ত হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন তামিম, যেটা বিসিবির জন্যও হয়ে এসেছে একটা বিস্ময়ের মতো।

আরও পড়ুন