- অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের কাছেও হার
- সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার ম্যাচ
- প্রতিপক্ষ যখন ভারত
- টপ অর্ডারে দেখা যাবে পরিবর্তন?
- টস ও একাদশ
- দুই প্রান্তেই স্পিন
- খরুচে শুরুর পর সফল সাকিব
- পাওয়ারপ্লেতে ৫৩/১
- বাংলাদেশের কৌশলে বিস্মিত ভন
- কোহলি বোল্ড
- ছক্কার পর আউট সূর্যকুমার
- মোস্তাফিজের ওপর চড়াও পন্ত
- রিশাদের শিকার পন্ত
- দুবে-পান্ডিয়া চুপচাপ (এখনো)
- মেহেদীর শেষ ওভারে ১৪
- এগোচ্ছে ভারত
- রিশাদের শিকার দুবেও
- পান্ডিয়ার ৫০, ভারতের ১৯৬
- ৩ ওভারশেষে অবিচ্ছিন্ন লিটন-তানজিদ
- আউটই হলেন লিটন
- ঘটনাবহুল ওভারে শেষ পাওয়ারপ্লে
- ১৪ রানের ওভার, এরপর আউট তানজিদ ।
- ২ ওভারে কুলদীপের ২ এলবিডব্লু
- শেষে এসে কুলদীপের তৃতীয়
- থামলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, এরপর জাকের
- পার্থক্য—রিশাদের সঙ্গে বাকিদের
- ৫০ রানে হারল বাংলাদেশ
- ম্যাচসেরা পান্ডিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পর ভারতের কাছেও হার
অ্যান্টিগায় সুপার এইটে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হারল বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে হার এল কীভাবে, সেটি পড়ুন নিচে—
সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার ম্যাচ
বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, সুপার এইটে ওঠা প্রথম লক্ষ্য ছিল তাঁদের। এরপর যা হবে সবই বোনাস। যদিও শেষ আটে উঠে শেষ চারের স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক। সে স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে গেলে আজ ভারতের বিপক্ষে জেতার খুব একটা বিকল্প নেই বাংলাদেশের। অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে প্রতিবেশীদের মুখোমুখি বাংলাদেশ দল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস খুব একটা সুবিধার নয়, তবে বৃষ্টি এসে পুরো ম্যাচ ভেসে নিয়ে যাবে এমন শঙ্কাও খুব একটা নেই। ভারতের টপ অর্ডার তেমন ফর্মে নেই, অন্যদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ওই টপ অর্ডারকে ঘিরেই। যশপ্রীত বুমরাদের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জটা আরও বড় বাংলাদশের জন্য। এ মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিও খেলেছে বাংলাদেশ, নর্থ সাউন্ডে কিছুক্ষণ পর টস। তার আগে প্রথম আলো লাইভে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি সাইফুল্লাহ্ বিন আনোয়ার।
প্রতিপক্ষ যখন ভারত
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি সেই ২০০৭ সালে। বৈশ্বিক আসরে দুই দলের লড়াইয়ের ইতিহাশে মিশে আছে বেশ কয়েকটি বিতর্কও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ দুটি ম্যাচও বেশ আলোচিত—২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ১ রানে। জেতা ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ল্যাসিক উদাহরণ হিসেবে যেটিকে ব্যবহার করা হয় এখনো। সর্বশেষ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ৫ রানে, অ্যাডিলেডের বৃষ্টিবিঘ্নিত সে ম্যাচেও ছিল বিতর্ক।
টপ অর্ডারে দেখা যাবে পরিবর্তন?
ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন প্রথম আলোয় লেখা কলামে বলেছেন—
প্রথম পর্ব থেকে অর্জিত আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ দেখতে না পাওয়া ছিল হতাশাজনক। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে লড়াইটা তখনই করা যাবে, যখন শুরু থেকে ইতিবাচক খেলা যাবে। সেটি করার উপায় মনে হচ্ছে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনা। প্রথম ম্যাচ ওভাবে হেরে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে অনেকটাই। ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক কোনো ফল না এলে সেমিফাইনালের স্বপ্নটাও বাদ দিতে হবে।
টপ অর্ডারের সেই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে লিটনকে বাইরে রাখার কথা বলেছেন তিনি। যদি খেলাতেই হয়, তাহলে টপ অর্ডার থেকে সরিয়ে অন্য কোনো পজিশনে এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে খেলানোর মত তাঁর।
টস ও একাদশ
ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালের উপস্থিতিতে টসে জিতেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ মাঠে আগে খেলা তাঁদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলেও মনে করেন তিনি। উইকেটে দেখে ১৫০-১৬০ রানের স্কোরকে ভালো বলেছেন তিনি।
একাদশে একটিই পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। দলের সহ-অধিনায়ক ও পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় ফেরানো হয়েছে জাকের আলীকে।
বাংলাদেশ একাদশ
তানজিদ হাসান, লিটন দাস (উইকেটকিপার), নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
অপরিবর্তিত ভারত একাদশ
ভারত একাদশ বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), ঋষভ পন্ত, সূর্যকুমার যাদব, শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, অর্শদীপ সিং, কুলদীপ যাদব ও যশপ্রীত বুমরা।
দুই প্রান্তেই স্পিন
রোহিতের বাঁহাতি পেসের বিপক্ষে সম্প্রতি দূর্বলতা ফুটে উঠেছে। তবে বাংলাদেশ দুই প্রান্তেই এনেছে স্পিন। অফ স্পিনার মেহেদী হাসানের পর এসেছেন সাকিব আল হাসান। মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, এ ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে আছেন মাত্র দুজন পেসার। মেহেদীর বোলিংয়ে স্লিপ রাখা হলেও সাকিবের বোলিংয়ে তা ছিল না। প্রথম ওভারের শেষ বলে টপ-এজে চার পেয়েছিলেন রোহিত। পরের ওভারে সাকিব দিয়েছেন ১৫ রান। প্যাডের ওপর পেয়ে সুইপ করে চার মারেন রোহিত, কোহলি ছক্কা মারেন লং অন দিয়ে। ২ ওভারে ২৩/০। এরই মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি পেয়ে গেছে ভারত। আগের সর্বোচ্চ ২২ রান এসেছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
খরুচে শুরুর পর সফল সাকিব
প্রথম ওভারে ১৫ রান দেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম ৩ বলে সাকিব দিয়েছিলেন ১০ রান। লেংথ কমিয়ে আনলেন এরপর। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে খাড়া ওপরে তোলেন রোহিত। মিড অফে অনেকটা সময় পেয়ে ক্যাচটি নিয়েছেন জাকের আলী। ৩৯ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে ভারত।
পাওয়ারপ্লেতে ৫৩/১
সিমের ওপর হাত ঘুরিয়ে করেছিলেন মোস্তাফিজুর। টেনে ওয়াইড লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন কোহলি। পাওয়ারপ্লের শেষটাও ভারতের জন্য হলো ইতিবাচক, মোস্তাফিজের প্রথম ও ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এসেছে ১১ রান। সর্বশেষ ওভারে ৩ রান দিয়েছিলেন মেহেদী। ফিফটি পেরিয়ে গেছে ভারত, ৬ ওভারে ৫৩/১।
বাংলাদেশের কৌশলে বিস্মিত ভন
কোহলি বোল্ড
তিনে আসা ঋষভ পন্ত প্রথম বাউন্ডারি মেরেছেন দশম বলে গিয়ে। সাকিবের মতো রিশাদের করা প্রথম ওভারেও এসেছে ১৫ রান, প্রথম বৈধ বলে সাইটস্ক্রিন বরাবর ছক্কা মেরেছিলেন কোহলি। অন্য প্রান্তে মেহেদী হাসানের বিপক্ষে সতর্ক থেকেছেন ভারত ব্যাটসম্যানরা, তাঁর সর্বশেষ ২ ওভারে এসেছে মাত্র ৬ রান। ৮ ওভারে ৭১/০।
এবং বোল্ড কোহলি! তানজিমকে সামনে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে গেছেন কোহলি। থেমেছেন ২৮ বলে ৩৭ রানে। নবম ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। কোহলিকে বোল্ড করার পর তানজিমের উদ্যাপন ছিল বেশ ক্ষীপ্র।
ছক্কার পর আউট সূর্যকুমার
নেমে প্রথম বলেই হুক করে ছক্কা সূর্যকুমার যাদবের। পরের বলে কট বিহাইন্ড! শর্ট লেংথের বলে ড্যাব করতে গিয়েছিলেন। আউটসাইড-এজের পর ধরা পড়েছেন লিটনের হাতে। লিটন ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। সূর্যকুমারও হাঁটা ধরেছেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আসার পর। ৩ বলের মধ্যে কোহলি আর সূর্যকুমারের উইকেট নিলেন তানজিম!
মোস্তাফিজের ওপর চড়াও পন্ত
দুই বাঁহাতি পন্ত ও দুবের বিপক্ষে আনা হয়েছিল অফ স্পিনার মাহমুদউল্লাহকে। তাঁর প্রথম ওভারে ৩ রানের বেশি আসেনি। মানে অফ স্পিনারের করা শেষ ৩ ওভারে এসেছে ৯ রান।
প্রথম ১৫ বলে ঋষভ পন্ত করেছিলেন ১২ রান। এরপর চড়াও হলেন মোস্তাফিজের ওপর। প্রথমে অফ সাইড দিয়ে টেনে চার। এরপর মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা, যেদিকে তিনি পেয়েছেন বাতাসের সহায়তাও। মোস্তাফিজ এরপর মিস করেছেন লাইন, লেগ স্টাম্পের বাইরে ফুলটস পেয়ে সদ্ব্যবহার করেছেন পন্ত। পন্ত ২০ বলে ২৬। ১১ ওভারে ভারত ৯৭/৩।
রিশাদের শিকার পন্ত
পন্ত ঝড় তুলছিলেন। শেষ ৮ বলে করেছিলেন ২৪ রান। মোস্তাফিজের পর চড়াও হয়েছিলেন রিশাদের ওপর। ছক্কার পর মেরেছিলেন চার। এরপর করতে গেলেন রিভার্স সুইপ। তাতে শর্ট থার্ডে ক্যাচ গেছে তানজিমের হাতে। মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেওয়ার পর রিশাদের উদ্যাপন, ‘কাম অন!’ বলতেই হবে, দারুণভাবে স্নায়ু ধরে রেখেছেন তিনি। ২৪ বলে ৩৬ রান করে থামলেন পন্ত। আগের ম্যাচে আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। ১০৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ভারত।
দুবে-পান্ডিয়া চুপচাপ (এখনো)
পন্ত পড়ার পরের ২ ওভারে এসেছে মাত্র ১০ রান। শিবম দুবে এখনো খোলসবন্দী, বাউন্ডারি মারেননি এখনো। সেটি মারেননি ৭ বল খেলা হার্দিক পান্ডিয়াও। ১৪ ওভারে ১২০/৪।
মেহেদীর শেষ ওভারে ১৪
মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী—দুই অফ স্পিনারের প্রথম ৫ ওভারে এসেছিল মাত্র ২২ রান। ১৫তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে এসে পান্ডিয়ার কবলে পড়লেন তিনি, ছক্কার পর চার মেরেছেন পান্ডিয়া। শেষ ওভারে মেহেদী দিয়েছেন ১৪ রান, আগের ৩ ওভার মিলিয়ে যে রান দিয়েছিলেন তিনি। ভারত আবার গিয়ার বদলানোর চেষ্টায়। ৫ ওভার বাকি থাকতে ১৩৪/৪।
এগোচ্ছে ভারত
মাঝে মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজের ২ ওভারে ১০ রান এলেও এরপর থেকে ছুটছে ভারত। সর্বশেষ ৩ ওভারে এসেছে ৩৫ রান। খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছেন দুবে। পান্ডিয়ার সঙ্গে জুটিতে ৩২ বলে উঠেছে ৪৭ রান।
রিশাদের শিকার দুবেও
ছক্কা। এরপর আউট। আগের বলে ছক্কা খেলেও রিশাদ সামনে করার মতো সাহস দেখিয়েছেন। টার্ন করে একটু ভেতরে ঢোকা বল মিস করে বোল্ড দুবে। ২৪ বলে ৩৪ রান তাঁর। ১৭.২ ওভারে ১৬১/৫।
পান্ডিয়ার ৫০, ভারতের ১৯৬
টসের সময় নাজমুল হোসেন বলেছিলেন, এ পিচে ১৫০-১৬০ রানের স্কোর ভালো। তবে ভারত এখানে তুলল ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান। ২৭ বলে ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন পান্ডিয়া। ইনিংসের শেষ বলে মোস্তাফিজকে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি।
নবম ওভারে ৩ বলের মধ্যে ২ বলে কোহলি ও সূর্যকুমারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করেন তানজিম। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা পন্তকে ফেরান রিশাদ। কিন্তু মাঝে শিবম দুবে ও হার্দিক পান্ডিয়ার ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটি ভারতকে এগিয়ে নেয়। সেটি শেষ করেন পান্ডিয়া।
দিনে বাংলাদেশের সেরা বোলার তানজিম, ২ উইকেট নিতে তিনি দেন ৩২ রান। রিশাদ খরুচে হলেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট নিয়েছেন। দুই অফ স্পিনার মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদীর ৬ ওভারে এসেছে ৩৬ রান। কিন্তু মোস্তাফিজ ছিলেন বেশ খরুচে, ৪ ওভারে দেন ৪৮ রান। ৩ ওভারে ৩৭ রানে ১ উইকেট সাকিবের।
পিচটা যে ১৫০-১৬০ রানের নয়, সেটি এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা নাজমুলের।
৩ ওভারশেষে অবিচ্ছিন্ন লিটন-তানজিদ
৩ ওভারে ১৬/০। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি এটিই। এর আগে প্রথম উইকেটে ১০ রানের জুটিও ছিল না। লিটন অবশ্য ৬ বল খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ২ রান। তানজিদ মেরেছেন ৩টি চার।
আউটই হলেন লিটন
প্রথম ৭ বলে ৩ রান। এরপর অক্ষর প্যাটেলকে ক্রিজে একটু নাচতে নাচতে মারা চার। এরপর হার্দিক পান্ডিয়াকে পুল করে ছক্কা। লিটন আভাস দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু তিনি আউট হলেন ঠিক তাঁর মতো করেই। অফ স্টাম্পের বাইরে সরে গেলেন। পান্ডিয়ার স্লোয়ার বলটি ছল প্রায় ওয়াইড লাইনে। সেটিকে ঘুরাতে গেলেন। শটটা যে পুরোদমে খেলেছেন, তাও না। তাতে উঠল ক্যাচ। ডিপ মিডউইকেট থেকে ছুটে এসে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন সূর্যকুমার যাদব।
ঘটনাবহুল ওভারে শেষ পাওয়ারপ্লে
প্রথম ওভারে ২ রান দেওয়া যশপ্রীত বুমরাকে ষষ্ঠ ওভারে আনা হয় আবার। প্রথম বলটি ফুলটস, সহজেই নো হতে পারত। তবে সেটি দেননি আম্পায়ার। ডাবলস নিয়ে স্ট্রাইকে ফেরা তানজিদ এরপর ক্যাচ তোলেন উইকেটের পেছনে। পন্ত রাখতে পারেননি মোটামুটি সহজ সুযোগটি। পঞ্চম বলে বড়সড় আউটসাইড-এজ হয়েছিল নাজমুলের। এবার তা গেছে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের নাগালের বাইরে দিয়ে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারটি ঘটনাবহুল। ৬ ওভারে উঠেছে ৪২ রান। এ সময়ে ভারতের স্কোর ছিল ৫৩/১। অবশ্য এ সময়ে বাংলাদেশ একটিই উইকেট হারিয়েছে, সেটিই হয়ত ইতিবাচক।
১৪ রানের ওভার, এরপর আউট তানজিদ ।
ইনিংসের প্রথমভাগে উইকেট ধরে রেখে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ, তবে প্রয়োজনীয় রানরেট বাড়ছিলই শুধু। পাওয়ারপ্লের পরের ২ ওভারে আসে মাত্র ৮ রান। অবশেষে শেকল ভাঙার ইঙ্গিত নাজমুলের। পান্ডিয়াকে লেগ সাইড দিয়ে দুই ছক্কা মেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, সব মিলিয়ে নবম ওভারে আসে ১৪ রান। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। কুলদীপ যাদবের টার্ন করে ভেতরের দিকে ঢোকা বল ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে যান তানজিদ। আম্পায়ার দেন এলবিডব্লু। রিভিউ করেছিলেন। একবার রিপ্লে দেখার পরই ভারতীয়রা যে যার জায়গায় ফিরে যান। হতে পারে, আউটের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা। অথবা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওভাররেটের কারণে আগেই প্রস্তুত ছিলেন। শরীরী ভাষা দেখে মনে হয়েছে পরেরটিই। সেটি যাই হোক না কেন, তানজিদ হয়েছেন আউট। বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, বেশ টার্ন করা বলটিও লাগত লেগ স্টাম্পে। ৩১ বলে ২৯ রান করে থেমেছেন তানজিদ। ১০ ওভারে ৬৭ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এ সময়ে ভারতের স্কোর ছিল ৮৩/৩। পরের ১০ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ১৩০ রান
২ ওভারে কুলদীপের ২ এলবিডব্লু
খোলা চোখে আগেরটি নিয়ে সংশয় থাকলে এটি নিয়ে তেমন ছিল না। বড় শট খেলতে গিয়ে একেবারেই মিস করে যান তাওহিদ হৃদয়। আম্পায়ার মাইকেল গফ আবার দিয়েছেন আউট। হৃদয়ও নেন রিভিউ। কিন্তু কাজে আসেনি সেটি। বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, সেটি লাগত অফ-মিডলে। কুলদীপের পরপর ২ ওভারে নেই ২ উইকেট। দুটিই এলবিডব্লু। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলল দুটি রিভিউও।
শেষে এসে কুলদীপের তৃতীয়
প্রথম বলে ছক্কা। শেষ বলে গিয়ে চার। জাদেজার করা ১৩তম ওভার ছিল এমন। পরের ওভারে কুলদীপ করতে এলেন তাঁর শেষটি। দ্বিতীয় বলে দারুণ টাইমিংয়ে সোজা বরাবর ছক্কা মারার পর আবার তুলে মারতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান সাকিব। কাভারে রোহিত নেন সহজ ক্যাচ। সাকিবের হতাশা ছিল স্পষ্ট। কুলদীপ বোলিং শেষ করেছেন ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। ১৪তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে ১০০ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
থামলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, এরপর জাকের
৩টি ছক্কা মেরেছেন, সঙ্গে ১টি চার। ৪০ রানের ইনিংসে নাজমুলের স্ট্রাইক রেট ১২৫। সেটি শেষ হয়েছে বুমরাকে তুলে মারতে গিয়ে। বাংলাদেশ হারিয়েছে পঞ্চম উইকেট। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই বাংলাদেশের ব্যাটিং হয়ে দাঁড়িয়েছে পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর। সেটি কতটুকু কমে, দেখার বিষয় সেটিই। পরের ওভারের প্রথম বলে অর্শদীপকে তুলে মেরেছিলেন জাকের আলী। স্লোয়ার বল বোঝেননি, শটে নিয়ন্ত্রণও ছিল না। ষষ্ঠ উইকেটও নেই। বাংলাদেশ এখন অলআউট হওয়ার পথে।
পার্থক্য—রিশাদের সঙ্গে বাকিদের
অর্শদীপ সিংকে চার মেরে শুরু। এরপর ছক্কা। অক্ষর প্যাটেলের বলে রিশাদ মারেন আরও দুটি ছক্কা। অবশ্য বুমরার সঙ্গে পেরে উঠলেন না আর। রিশাদের ইনিংস থেমেছে ১০ বলে ২৪ রানে। যেমন ইনিংস বাংলাদেশের দরকার ছিল আরও অ-নে-ক আগে। রিশাদ ব্যাটিং করেছেন ২৪০ স্ট্রাইক রেটে। তার আগপর্যন্ত ২০ রানের ও ১২০-পেরোনো ইনিংস ছিল একটি।
৫০ রানে হারল বাংলাদেশ
টসের সময় নাজমুল বলেছিলেন, এ উইকেটে ১৫০-১৬০ রানের স্কোর ভালো হওয়ার কথা। বাংলাদেশ সেখানে থামল ৮ উইকেটে ১৪৬ রানে। তবে ঝামেলা হলো, ভারত আগেই করে বসেছে ১৯৬ রান। অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের রান তাড়া গতি পায়নি কোনো পর্যায়েই। এ ম্যাচে দলের সহ-অধিনায়ক ও পেসারকে বসিয়ে রেখে অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যানকে খেলিয়েছে বাংলাদেশ। সেই জাকের আলী সাতে নেমে করেছেন ৪ বলে ১ রান। অবশ্য বলা যায়, ম্যাচ শেষ তার আগেই। শুরুতে উইকেট ধরে রাখার কৌশলে এগিয়েছে বাংলাদেশ, কিন্তু লক্ষ্য যখন ১৯৬ রান, তখন শুরুতে দ্রুত রান না এলে শেষদিকে উইকেট রেখেও খুব বেশি কিছু করার থাকে না। রিশাদ হোসেন শেষ দিকে খেলেছেন ১০ বলে ২৪ রানের ক্যামিও। সে পর্যন্তই। মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। কুলদীপ যাদব ১৯ রানে নিয়েছেন ৩টি।
এ ম্যাচে কার্যত সেমিফাইনালের দৌড় থেকে অনেকটাই ছিটকে গেল বাংলাদেশ। আজ ভোরে যদি আফগানিস্তানকে হারায় অস্ট্রেলিয়া, তাহলে সেটিও নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে তখন সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের।
ম্যাচসেরা পান্ডিয়া
২৭ বলে ৫০ রানের ইনিংসের পর ১টি উইকেটও নিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাঝের ওভারে দ্রুত উইকেট হারিয়ে একটু চাপে ছিল ভারত। পান্ডিয়ার ইনিংস এরপর তাদের নিয়ে যায় বড় স্কোরের পথে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে গেয়েছিলেন। আরেকটি সংস্করণের বিশ্বকাপে সেই বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচসেরা পান্ডিয়া।