ওয়ানডের মাহমুদউল্লাহ যেখানে আলাদা
আলোচনাটা কদিন আগে শুরু হয়েছিল রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে। ‘জেন–জি’র ফ্যাবুলাস ফোরের একজন রবীন্দ্র ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত করেছেন পাঁচটি সেঞ্চুরি, পাঁচটিই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে। সেটাও মাত্র ১৪ ইনিংসে। এখন একই ধরনের আলোচনায় আসছে মাহমুদউল্লাহর নাম। মাহমুদউল্লাহরও চার ওয়ানডে সেঞ্চুরির চারটিই যে আইসিসি টুর্নামেন্টে!
হঠাৎ এমন আলোচনার কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে এক পোস্টে মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের জার্সিতে আর কখনো খেলবেন না।
টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি নাটকীয়ভাবে বিদায় বলে দিয়েছেন সেই ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন গত বছর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষে। বাংলাদেশের জার্সিতে শুধু ওয়ানডেটাই খেলে যাচ্ছিলেন। আজ এই সংস্করণকেও বিদায় বলে দেওয়ায় তিনি এখন বাংলাদেশের সদ্য সাবেক ক্রিকেটার। সে কারণেই তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসগুলোকে আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া।
চার সেঞ্চুরির চারটিই যেহেতু আইসিসি ইভেন্টে, ওয়ানডেতে তাঁর সর্বোচ্চ চারটি ইনিংসই যে তাই, সেটা আর না বললেও চলছে। তিনটি সেঞ্চুরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে, একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। এখানেও অভিজ্ঞতা অম্লমধুর। কারণ, তাঁর দুটি সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে জিতিয়েছে, দুটিতে থাকতে হয়েছে পরাজিত দলে।
১০৩
৯ মার্চ ২০১৫, অ্যাডিলেড
এক দশক আগের সেই ইনিংসটি মাহমুদউল্লাহর জন্য তো বটেই, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেই বিশেষ হয়ে রয়েছে। বিশ্বকাপে সেটিই যে ছিল বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাডিলেড ওভালে তাঁর সেঞ্চুরির সুবাদেই বাংলাদেশ ২৭৫ রান করেছিল। পরে বোলারদের নৈপুণ্যে ১৫ রানে ম্যাচটা জিতে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। ৯৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর জিমি অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, মঈন আলীদের নিয়ে গড়া ইংলিশ বোলিং আক্রমণ মাহমুদউল্লাহ যেভাবে সামলেছিলেন, তা বিশ্বমঞ্চে দারুণ একটা বার্তাই ছড়িয়ে দিয়েছিল।
১২৮*
১৩ মার্চ ২০১৫, হ্যামিল্টন
মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি উপহার দেন পরের ম্যাচেই। ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখানোয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই ম্যাচটি ছিল নির্ভার হয়ে খেলার। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্রামে থাকায় সেদিন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় ৩ উইকেটে। কিন্তু বোলিং–বান্ধব উইকেটে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংসটি ছিল মনে রাখার মতো। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, ড্যানিয়েল ভেট্টোরিদের মতো বোলারদের স্বচ্ছন্দে খেলেছেন। চার মেরেছেন ১২টি, ছক্কা ৩টি।
১০২*
৯ জুন ২০১৭, কার্ডিফ
পরিস্থিতির বিচারে মাহমুদউল্লাহর এই ইনিংসটাকেই হয়তো সবার ওপরে রাখতে হয়। তাঁর অপরাজিত ১০২ রানের সৌজন্যেই তো বাংলাদেশ বৈশ্বিক আসরে সবচেয়ে গৌরবের গল্প লিখতে পেরেছিল। পরে ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়া হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো উঠেছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেদিন সাকিব আল হাসানকে নিয়ে রূপকথার জন্ম দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিউইদের দেওয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৩ রানেই প্রথম চার ব্যাটসম্যান আউট। এরপর সাকিবকে নিয়ে তাঁর ২২৪ রানের মহাকাব্যিক জুটি, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জয় থেকে ৮ রান দূরে থাকতে সাকিব আউট হলেও মোসাদ্দেককে নিয়ে বাকি কাজ অনায়াসে সেরেছেন মাহমুদউল্লাহ।
১১১
২৪ অক্টোবর ২০২৩, মুম্বাই
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পূরণের পর মাহমুদউল্লাহর সেই লাফের কথা নিশ্চয় মনে আছে! মাহমুদউল্লাহর ১১১ রানের এই ইনিংস অবশ্য শুধুই ব্যক্তিগত অর্জন হয়ে থাকবে বলে তখনই নিশ্চিত হয়ে গেছে। প্রোটিয়াদের করা ৩৮২ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে এই ইনিংস শুধু বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। কিন্তু দল থেকে বাদ পড়ার পর বিশ্বকাপে যাওয়াটাই ছিল মাহমুদউল্লাহর জন্য বড় এক অর্জন। দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনেও তাই উদ্যাপন না করে থাকতে পারেননি।
তা মাহমুদউল্লাহ যেহেতু বাংলাদেশের ‘আইসিসি ইভেন্ট বিশেষজ্ঞ’, তাই এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তাঁর কাছে বড় কিছুর প্রত্যাশা করেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের ধারেকাছেও যেতে পারেননি।
সে কারণেই ‘বুড়ো’ মাহমুদউল্লাহর অবসরের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। ৩৯ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ আজ তাঁদের দাবি মেটালেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই।