আকরাম–ফ্লাওয়ারের নজরকাড়া গুস জন্মভূমিকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিলেন
ইনিংসের চতুর্থ ওভার। শেলডন কটরেলকে ছক্কা মারলেন ৩টি। এরপর এলেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তাঁর বিপক্ষে সেই ইনিংসে ১৬টি বল খেলে রান করলেন ৩২। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরকেও ছাড় দেননি। ইনিংসে ১৬তম ওভারে এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে করা বলটি টেনে মিড উইকেটে ছক্কা মারলেন। যেই ছক্কা দেখে ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘ও আমেরিকায় কী করছে? ওকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে বলো।’
যাঁর গুণকীর্তন এতক্ষণ করা হলো তিনি আন্দ্রিস গুস। চলতি বছর ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে ডেজার্ট ভাইপার্সের বিপক্ষে আবুধাবি টি-টোয়েন্টি লিগে নাইট রাইডার্সের হয়ে ৫০ বলে ৯৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। লেখার শুরুতে সেই ইনিংসের কথাই বলা হয়েছে। এটি ছিল এই টুর্নামেন্টে এ বছর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। যে ইনিংসে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন ওয়াসিম আকরমাকেও।
আকরামের কথা অবশ্য তিনি রাখতে পারেননি। জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে গুসের খেলা হয়নি। আকরামের চোখ যত দিনে গুসের ওপর পড়েছে, তত দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটার হয়ে গেছেন। শুধু মাঠে নামাই বাকি ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ছেড়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন সেই ২০২১ সালেই। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মাঠে নামতে পেরেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কানাডার বিপক্ষে সিরিজে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা হয়নি। তবে তাদের বিপক্ষে খেলেছেন। শুধু খেলেছেন বললে বোধ হয় ভুল হবে। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রীতিমতো নিজ দেশকে হারিয়েই দিচ্ছিলেন! সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে অ্যান্টিগায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন গুস।
৩৩ বলে ফিফটি করা গুস কাল ইনিংসের ১৮তম ওভারে তাব্রেইজ শামসির শেষ দুই বলে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। শেষ দুই ওভারে তাদের তখন প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। সমীকরণটা তিনি মেলাতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলের হয়ে যে রাবাদার সঙ্গে তিনি একসঙ্গে টেস্ট খেলেছেন।
শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই যে রান করেছেন তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষেও ৬৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সব মিলিয়ে ৪ ইনিংসে ৬০ গড়ে ১৮২ রান করে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলা গুস মোটেই নতুন কেউ নন। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০১২ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। লিস্ট এ ক্রিকেটের শুরুটা ২০১৩ সালে, খেলেছেন ৫৭টি ম্যাচ।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলার স্বপ্নটা ফিকে হয়েছিল বলেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। হয়তো চেয়েছিলেন অন্য কোনো দেশের হয়ে হলেও তাঁর ক্রিকেট–প্রতিভা সারা বিশ্ব দেখুক। এটাই যদি তাঁর উদ্দশ্যে হয়, তাহলে গুস সফল। আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, মেজর লিগ ক্রিকেট খেলেছেন, এবারের বিশ্বকাপের পর হয়তো আরও নতুন লিগেও তাঁকে দেখা যাবে। তাঁর ব্যাটিং দেখে এমন মনে করছেন জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার।
ইএসপিএনক্রিকইনফোতে বলেছেন, ‘গুসকে দেখে দারুণ খেলোয়াড়ই মনে হচ্ছে। ও অল্প কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলেছে। আমার মনে হয় বিশ্বকাপের পর গুস আরও কিছু সুযোগ পাবে। পেসের বিপক্ষে ভালো, স্পিনটাও ভালো খেলে। গুস এই পারফরম্যান্সে গর্ব করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৮০ রানের ইনিংস, দারুণ প্রচেষ্টা।’
ওয়াসিম আকরামের প্রশংসা আগেই পেয়েছেন। গতকাল ফ্লাওয়ারের মুখেও নিজের নামটা হয়তো শুনেছেন। কিছু বার্তা সরাসরিও পেতে পারেন। এত কিছুর পর কি গুসের দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে না খেলতে পারার আফসোসটা হয়? গত জানুয়ারিতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মাঠে নামার আগেই গুস ক্রিকবাজকে জানিয়েছিলেন, তাঁর কোনো আফসোস নেই। এখন নতুন অনেক সতীর্থ পেয়েছেন, নতুন পরিচয় পেয়েছেন, দলও ভালো করছে। এখনো গুসের আফসোস না করারই কথা!