রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের দাপট চলছেই
রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের দাপট—পাকিস্তান সফরে এখন পর্যন্ত গল্পটা এমনই। এ শহরে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইতিহাস গড়া ১০ উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টেও নাজমুলদের শুরুটা হলো দাপুটে। বৃষ্টির কারণে গতকাল প্রথম দিনের খেলা ভেসে যাওয়ার পর আজ দ্বিতীয় দিন টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ২৭৪ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জয়ের মঞ্চ গড়ে দেওয়া সেই মেহেদী হাসান মিরাজ ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে ধস নামান। তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। দিন শেষে ২ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে করেছে ১০ রান। সাদমান ইসলাম ৬ রানে অপরাজিত আছেন, জাকির হাসান কোনো রান করতে পারেননি ৩ বল খেলে।
দিনের শুরুতে সুর ধরিয়ে দিয়েছেন এক বছরের বেশি সময় পর টেস্ট খেলতে নামা তাসকিন আহমেদ। শরীফুল ইসলামের কুঁচকির চোটে সুযোগ পাওয়া তাসকিন দিনের প্রথম ওভারে দেখিয়েছেন—টেস্ট ক্রিকেট তিনি কতটা মিস করছিলেন। পাকিস্তানের ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে প্রথম ওভারের প্রথম পাঁচ আউট সুইংয়ের পর শেষ বলে ইনসুইংয়ে বোল্ড করে স্টাম্প ভাঙেন তাসকিন। টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো ব্যাটসম্যানকে দুর্দান্ত সেটআপের উদাহরণ ছিল সেটি।
প্রথম ওভারের সেই স্বপ্নের শুরুর পরও প্রথম সেশনটা বাংলাদেশের দখলে ছিল, তা বলা যাবে না। তাসকিন ও আরেক পেসার হাসান মাহমুদ সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, বারবার শান মাসুদ ও সাইম আইয়ুবের আউটসাইড এজ ঘেঁষে গেছেন। হাসান অবশ্য ভালো বলের পাশাপাশি করেছেন বাজে বলও। আরেক পেসার নাহিদ রানাও চাপ ধরে রাখতে পারেননি। মাসুদ ও সাইম জুটি যার সুবিধা নিয়ে ওভারপ্রতি চারের আশপাশে রান তুলেছেন। ফিফটি করে বড় ইনিংসের চোখরাঙানি দিচ্ছিলেন দুই বাঁহাতি।
বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম সেশনের ভুলটা দ্বিতীয় সেশনে শুধরে নেয়। উইকেটের পেছনে না ছুটে রান থামিয়ে চাপ বাড়ানোর কৌশলে যায় বাংলাদেশ। উপহারও এসেছে দ্রুত। দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারেই পাকিস্তান অধিনায়কের প্যাড খুঁজে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬৯ বলে দুটি বাউন্ডারিতে ৫৭ রান করে থামে মাসুদের ইনিংস, ১০৭ রানের জুটিও ভাঙে তাতে। মিরাজ ও বাংলাদেশের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার শুরু তখন থেকেই। ৪৩তম ওভারে তালগোল পাকিয়ে আউট হন সাইমও। মিরাজকে ক্রিজ ছেড়ে লেগের দিকে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি, ৫৮ রানে থামে তাঁর ইনিংস।
মিরাজের সঙ্গে তখন জুটি বেঁধে বোলিং করছিলেন নাহিদ রানা। সদ্য ক্রিজে আসা সৌদ শাকিলকে তিনি ০ রানে থামাতে পারতেন। নাহিদের গতিময় বল ব্যাকফুট খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন তিনি, কিন্তু মিরাজ দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি। শাকিল অবশ্য সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। তাসকিনের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা বাড়তি বাউন্স মেশানো বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি, ১৬ রানে থামে শাকিলের ইনিংস।
উইকেটশিকারিদের তালিকায় যোগ দিয়েছেন সাকিবও। ৫৪তম ওভারে থিতু হওয়া বাবর আজমের উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৩১ রান করে দারুণ খেলতে থাকা পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান সাকিবের সেই চিরচেনা আর্ম ডেলিভারি ব্যাকফুট থেকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু ফাঁদে পড়েন তিনি। একই ওভারে আউট হতে পারত সালমান আলী আগা। সাকিবের আর্ম বলে ব্যাট ছুঁইয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ তোলেন সদ্য ক্রিজে আসা সালমান। কিন্তু জাকির হাসান ক্যাচ ধরতে পারেননি। তবে বাবরসহ চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ে দ্বিতীয় সেশনে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের নাটাই নিজেদের দখলে নেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের রান তখন ৫ ওভারে ১৮৩ রান।
তৃতীয় সেশনের শুরুটাও দারুণ হয় বাংলাদেশের। পাকিস্তানের আরেক অভিজ্ঞ মোহাম্মদ রিজওয়ানকে গতি দিয়ে আউট করেছেন নাহিদ। ৬৫তম ওভারে লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল লেগের দিকে সরে দিয়ে খেলার চেষ্টা করেন রিজওয়ান। বাড়তি বাউন্সে পরাস্ত হয়ে স্লিপে নাজমুল হাসানের হাতে ক্যাচ তোলেন তিনি। আগের ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি করা রিজওয়ান আউট হয়েছেন ২৯ রানে। অভিজ্ঞ রিজওয়ান আউট হলেও ০ রানে জীবন পাওয়া সালমান টিকে ছিলেন ৮৫তম ওভার পর্যন্ত। নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ছোট ছোট জুটি গড়েছেন, টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি করে পাকিস্তানের রানটাকে আড়াই শর ওপারে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সাকিবের দুর্দান্ত ক্যাচে থামে সালমানের ইনিংস।
তবে পাকিস্তানের লোয়ার অর্ডারে মূল ধসটা নামান মিরাজ। খুররম শেহজাদ, মোহাম্মদ আলীর পর আবরার আহমেদকে আউট করে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ম পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। মিরাজের ৫ উইকেট নিয়েছেন ৬১ রানে। ৫৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। নাহিদ ও সাকিবের শিকার ১টি করে উইকেট। পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে শেষ বেলায় দুই ওভারের জন্য ব্যাট করতে নেমে ১০ রানে কোনো উইকেট না হারিয়ে দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। প্রথম বলেই সাদমানের তোলা ক্যাচ ছেড়েছেন সৌদি শাকিল। তবে অবিচ্ছিন্ন থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরায় দিনটাকে বাংলাদেশের বলাই যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮৫.১ ওভারে ২৭৪ (সাইম ৫৮, শান ৫৭, সালমান ৫৪, বাবর ৩১, রিজওয়ান ২৯; মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭, সাকিব ১/৩৪, রানা ১/৫৮)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২ ওভারে ১০/০ (সাদমান ৬*, জাকির ০*)।
(২য় দিন শেষে)