সৌদি আরবের পরিকল্পনায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট লিগ
উপসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট লিগ আয়োজনের কথা ভাবছে সৌদি আরব। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে আইপিএলের মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী টি-টোয়েন্টি চালুর পরিকল্পনা থেকে আইপিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদল।
বিভিন্ন দেশের সিনিয়র ক্রিকেট প্রশাসক, কোচ ও খেলোয়াড়েরা সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও দ্য এজকে বলেছেন, বছরখানেক আগেই দুই পক্ষের এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কথা তাঁরা জেনেছেন। তবে কেউ-ই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।
ভারতের খেলোয়াড়েরা প্রস্তাবিত এ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিসিসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভারতের কোনো ক্রিকেটার বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিতে পারবেন না। আর যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে আইসিসি ও সদস্যদেশগুলোর অনুমোদনও লাগে।
আইসিসি চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে সৌদি আরবের ক্রিকেটে আগ্রহী হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেলাধুলায় বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব সরকার। ২০৩০ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হতে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের ইমেজ বাড়ানোর চেষ্টা করছে আরব দেশটি।
বার্কলে মনে করেন, ওই অঞ্চলে ক্রিকেটের উন্নয়নে সৌদির লিগ আয়োজন হবে ‘যৌক্তিক’ পরবর্তী পদক্ষেপ, ‘তারা অন্য যেসব খেলার সঙ্গে জড়িত, সেসব দেখে বোঝা যায়, ক্রিকেটটা আগ্রহ তৈরি করবে। খেলাধুলায় তারা যেভাবে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তাতে ক্রিকেট সৌদি আরবের জন্য মানাসই হবে। খেলাধুলায় তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং আঞ্চলিকভাবে তাদের অবস্থান যেমন, তাতে ক্রিকেটই সম্ভাবনাময়।’
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জন্য পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চায় সৌদি আরব। দেশটি আইসিসির সহযোগী সদস্য হলেও ভালো স্টেডিয়াম নেই ক্রিকেটের জন্য। গত মাসে আরব নিউজকে সৌদি আরব ক্রিকেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান প্রিন্স সৌদ বিন মিশাল আল-সৌদ বলেছেন, ‘আমরা টেকসই অবকাঠামো বানাতে চাই, যেন বৈশ্বিক ক্রিকেটের কেন্দ্রবিন্দু হয় সৌদি আরব।’
খেলাধুলায় বিপ্লব আনার চেষ্টা করছে সৌদি আরব। এরই মধ্যে ফর্মুলা ওয়ান আয়োজন করেছে দেশটি। তাদের সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কিনেছে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো মহাতারকা খেলছেন সৌদির ঘরোয়া লিগে। গুঞ্জন আছে, লিওনেল মেসিকেও নাকি বছরে চার হাজার কোটি টাকার লোভনীয় পারিশ্রমিকে কিনতে চায় সৌদির ক্লাব আল-হিলাল। আর সৌদি সরকারি মালিকানাধীন তেল-গ্যাসের প্রতিষ্ঠান আরামকোর সঙ্গে আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের স্পনসর চুক্তিও আছে। গত ফেব্রুয়ারিতে আইপিএলের সঙ্গে পার্টনারশিপ চুক্তিও করেছে সৌদি পর্যটন কমিশন।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদলকে ভারতীয় ক্রিকেটে দেখা গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন নিয়ে সৌদি আরব যে পরিকল্পনা করছে, তা দেখে আইপিএলে দলগুলোর মালিক এবং বিসিসিআই নাকি বেশ চমকে গেছে। সৌদির পরিকল্পনার সঙ্গে টক্কর দিতে পারে নাকি একমাত্র আইপিএলই। গত বছর আরব আমিরাতে শুরু হয়েছে নতুন টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ (আইএলটি২০)। প্রচুর বিদেশি ক্রিকেটার সেখানে খেলেছেন।
তবে এ টুর্নামেন্ট নিয়ে বিতর্কও হয়েছে আইসিসির সদস্যদেশগুলোর মধ্যে। কারণ, আরব আমিরাতের ঘরোয়া ক্রিকেট অত শক্তিশালী নয়। এদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রধান নিক হকলি জানিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোর লক্ষ্য হলো ওই অঞ্চলে ক্রিকেটের আরও প্রসার ঘটানো। আর তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের জন্য কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে আইপিএলের সঙ্গে সৌদি পর্যটন কমিশনের চুক্তির পর বিসিসিআই সচিব জয় শাহ বলেছিলেন, ‘সৌদি আরবে ক্রিকেট চালুতে এই পার্টনারশিপ দারুণ ভূমিকা রাখবে।’
পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম গত ফেব্রুয়ারিতেই সৌদি আরবে সফরে গিয়ে সেখানে ক্রিকেট লিগ চালু করা নিয়ে কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। পাকিস্তানের ক্রিকেটও নাকি সৌদি আরবের সঙ্গে হাত মেলাতে চায়। ওয়াসিম আকরাম তখন বলেছিলেন, ‘প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলো। আমরা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি এবং শিগগিরই এখানে সৌদি লিগ দেখতে চাই।’