সময় শেষ—যেভাবে অ্যান্ডারসনকে বার্তা দিয়েছিলেন স্টোকস-ম্যাককালামরা
২১ বছরের বেশি সময়, ১৮৭ টেস্ট। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুলাইয়ে ১৮৮তম টেস্টটিই হতে যাচ্ছে জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শেষ। লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবেন ইতিহাসের সফলতম পেসার।
আগামী জুলাইয়ে ৪২ পূর্ণ করবেন অ্যান্ডারসন। এমন একজনের অবসর খুব স্বাভাবিক হওয়ারই কথা। তবে তিনি অ্যান্ডারসন বলেই অবসরের ঘোষণাটা নাড়িয়ে দিয়েছে ক্রিকেট–বিশ্বকে। তাঁর অবসরের ব্যাপারটি কীভাবে এগিয়েছে, এবার তা খোলাসা করেছেন ইসিবির পুরুষ ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি। তিনি, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং অধিনায়ক বেন স্টোকস মিলে ম্যানচেস্টারের একটি হোটেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনায় অ্যান্ডারসনকে বার্তাটি দিয়েছিলেন—‘সময় শেষ, এবার সামনে এগোনোর পালা।’
গত শুক্রবার প্রথম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে অ্যান্ডারসনের অবসরের সংবাদটি আসে। সামনের গ্রীষ্মেই এ পেসারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ হতে যাচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়। এরপর শনিবার এক বিবৃতিতে অ্যান্ডারসন জানান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট দিয়েই বিদায় বলবেন তিনি।
এমনিতে পর্যালোচনার জন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ হয়ে থাকে কির। তবে এমন আলোচনা সামনাসামনি করা দরকার বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল পডকাস্টে কি বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর আমাদের মনে হয়েছে, ঠিক আছে, আমাদের এখন জিমির সঙ্গে দেখা করে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ করতে হবে। ব্রেন্ডন এরপর মনে করেছে, তার (নিউজিল্যান্ড থেকে) ইংল্যান্ডে উড়ে আসাটাই হবে ঠিক কাজ।’
‘আমরা তিনজন তার সঙ্গে দেখা করি—আমি, লন্ডন থেকে ট্রেন ধরা ব্রেন্ডন এবং পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাতে যাবে বলে আগে থেকেই ম্যানচেস্টারে থাকা স্টোকসি। আমরা জিমির সঙ্গে স্টেশনের পাশে একটা হোটেলে দেখা করি এবং আমাদের আলাপ চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। যেটিতে নেতৃত্ব দেয় বাজ (ম্যাককালাম)। আমার মনে হয় না, জিমি এটি আশা করছিল। কিন্তু আমার এটাও মনে হয় না, একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল।’
শেষ একটি ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত অ্যান্ডারসন নিজেই নেন বলেও জানান কি, ‘সে জানত, সময়টা আসছে। আমরা বিভিন্ন ব্যাপারে আলোচনা করেছি, খেলা ছাড়ার পর জিমির ভবিষ্যৎ…এমন কিছু বলিনি যে তাকে তখনোই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর খুব বেশিক্ষণ হয়নি, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে লর্ডসই তার শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে।’
অ্যান্ডারসনের সঙ্গে আলোচনার ধরনটাও বলেছেন কি, ‘আমরা শুধু বলেছি, দেখো, এখন আমাদের সামনে এগোনোর সময়। আমরা এমন একটা পর্যায়ে যাচ্ছিলাম, যখন ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হতো। অন্যদের এখন নতুন বলে কীভাবে বোলিং করতে হয়, টেস্টের একটা দিন পার করতে কী করতে হয়, পরের দিন কী করতে হয়—সেসব শেখার সুযোগ দরকার। এখনোই বাকিদের এটা শেখা শুরু করে দেওয়ার সময়।’
সর্বশেষ অ্যাশেজের শেষ টেস্ট দিয়ে অবসর নেন স্টুয়ার্ট ব্রড, এবার যাচ্ছেন অ্যান্ডারসনও। অ্যান্ডারসনকে ছাড়া সামনে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ বেশ অনভিজ্ঞ হয়ে পড়বে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্রড। তবে নতুনদের নিয়ে কি বেশ রোমাঞ্চিতই, ‘এটা আসলে কোনো কৌতুকশিল্পীকে অনুসরণ করার মতো যে সবাইকে হাসাতে পারে, সবাই তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা আসলে অন্য কারও জন্য সুযোগও।’
অ্যান্ডারসন যাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ক্রিস ওকস ও মার্ক উডের। এর বাইরে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পেসার হিসেবে আছেন গাস অ্যাটকিনসন, ব্রাইডন কার্স, ম্যাথু পটস, জশ টাং ও ওলি রবিনসন। এর আগে টেস্ট খেলেছেন জেমি ওভারটন, ম্যাথু ফিশার ও সাকিব মেহমুদ। এর বাইরে কি উল্লেখ করেছেন ডিলন পেনিংটন, ওলি স্টোন ও স্যাম কুকের কথাও। অবশ্য চোট কাটিয়ে সম্প্রতি সীমিত ওভারের দলে ডাক পাওয়া জফরা আর্চারকে এ মৌসুমে দীর্ঘ সংস্করণে বিবেচনা করা হবে না।