৩-০ এর চেয়েও বড় যা পেল মেয়েরা
বিশাল বড় কিছুর জন্য সামনে বড় লক্ষ্য থাকা চাই। তাতে লক্ষ্য পূরণ হোক বা না হোক, অন্তত একটু বেশি পথ এগোনো যায়। আয়ারল্যান্ড নারী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের ওয়ানডে সিরিজটার কথাই ধরুন। আজ ৩-০তে জেতা এই সিরিজ বাংলাদেশ শুরু করেছিল সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি দেখতে দেখতে। সে স্বপ্ন পূরণ করতে আরও দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে নিগার সুলতানার দলকে। তবে এটাও তো ঠিক, বিশ্বকাপ খেলার অনুপ্রেরণা আয়ারল্যান্ড সিরিজে কিছুটা হলেও তাঁতিয়ে দিতে পেরেছিল তাদের। হয়তো সেটারই ফল ৩-০!
সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক নিগার বলেছিলেন, বিশ্বকাপ অনেক পরে। তার আগে এই সিরিজটা তারা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চান। আয়ারল্যান্ডের মেয়েদের ধবলধোলাইয়ের পর এখন তিনি দাবি করতেই পারেন, তাঁরা সফল। সামনে এখন জানুয়ারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। ম্যাচ ধরে ধরে খেলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তিনটি ম্যাচই জিতে যাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের অন্তত দুটি জিতলেই আগামী বছর জুলাইয়ে ভারতে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ।
মিরপুরে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের মতো আজ শেষ ম্যাচটাও বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে সহজে। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক গ্যাবি লুইসের ফিফটির (৭৯ বলে ৫২) সৌজন্য ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে ১৮৫ রান করেছিল আইরিশ মেয়েরা। জবাবে বাংলাদেশ নারী দল ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে ৭৫ হাতে রেখেই। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে ওপেনার ফারজানা হক আর শারমিন আক্তার যেভাবে খেলছিলেন, জয়টা কেন ৯ উইকেটেই এল না, সে আফসোস থাকতেই পারে বাংলাদেশের।
সিরিজের তিন ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েদের বড় প্রাপ্তি ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। এমনিতে ব্যাটিংটাই এই দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। বড় শট খেলার সামর্থ্যই বলুন বা এক-দুই করে রান বাড়ানো, কোনোটাই খুব একটা সুবিধার নয়। তার ওপর গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের তিন ম্যাচে একবারও তিন অঙ্ক দেখেনি বাংলাদেশের মেয়েদের ইনিংস। ৯৫, ৯৭, ৮৯—এই ছিল অবস্থা।
এরপরের সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ করে ফেলল ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর ২৫২ রান। ম্যাচ জিতল ১৫৪ রানে, যা কিনা নিজেদের সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ডও। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের ১৯৩ তাড়া করে ৬.১ ওভার বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় সিরিজ জয়ই। এরপর আজ ৭ উইকেটের জয়ে হলো ৩-০। তিন ওয়ানডের সিরিজে প্রতিপক্ষকে বাংলাদেশ নারী দল এর আগে একবারই ধবলধোলাই করেছিল। ২০২১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে নারী দলের বিপক্ষে এসেছিল সেই জয়।
ব্যাটিংয়ের কথা যেহেতু আলাদা করে বলাই হচ্ছে, শারমিন আক্তারের কথাটা বিশেষভাবে না বললেই নয়। প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৩ এবং মিরপুরে আজ শেষ ম্যাচে ৮৮ বলে ৭২ রান।
ম্যাগুইয়ারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার আগে মেরেছেন ১১ বাউন্ডারি। ব্যাট হাতে শারমিনের ধারাবাহিকতাকে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বদলে যাওয়া ধারার সঙ্গে মেলাতে পারেন। অথবা বিষয়টা এভাবেও দেখা যায় যে, শারমিন বদলে গেছেন বলেই বদলে গেছে বাংলাদেশ নারী দলের ব্যাটিং।
২০২২ সালের পর ফর্মের অভাবে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন । মাঝে গত বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে ভারত নারী দলের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়ে শারমিন করেছিলেন ০ আর ২। মাঝে কিছুদিন বর্তমানে জাতীয় দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। এরপর এই সিরিজে দলে ফিরে শারমিন ফিরে পেলেন নিজেকেও।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা ফিরে পাওয়ায় কৃতিত্ব দিতে হবে ওপেনার ফারজানা হক এবং অধিনায়ক নিগারকেও। সিরিজের তিন ম্যাচে ফারজানার রান ৬১, ৫০ ও ৬১। আজ ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনিং সঙ্গী মুর্শিদা খাতুনকে হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে শারমিনের সঙ্গে ফারজানার ১৪১ রানের জুটিতেই জয়ের কাছে চলে যায় বাংলাদেশ নারী দল।
এরপর অবশ্য এক ওভারের ব্যবধানে বিদায় নিয়েছেন শারমিন, ফারজানা দুজনই। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের জয়টা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়ের ব্যাপার। প্রথম দুই ম্যাচে ২৮ ও ৪০ রান করা নিগার আজ অপরাজিত ১৮ বলে ১৮ রান করে। সোবহানা মুশতারিকে নিয়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন তিনিই।
ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফিরে পাওয়ার বৃত্তান্তে মারুফা-নাহিদাদের বোলিং কৃতিত্বটা কি হারিয়ে যাচ্ছে? বোলিংটাই কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েদের শক্তির জায়গা এবং এবারও সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বোলাররা। ঘরের মাঠের কন্ডিশনে আইরিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে শৃঙ্খল পরিয়ে রাখতে আজও সফল তিন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান, ফাহিমা খাতুন ও স্বর্ণা আক্তার।
প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও আজ ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাহিমাই সবচেয়ে সফল। আর কৃপণ বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে অফ স্পিনার সুলতানা খাতুন ২ উইকেট নিয়েছেন ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ১৮৫ (লুইস ৫২, প্রেন্ডারগাস্ট ২৭, হান্টার ২৩; ফাহিমা ৩/৪৩, সুলতানা ২/২৯, নাহিদা ২/৫৫)। বাংলাদেশ: ৩৭.৩ ওভারে ১৮৬/৩ (শারমিন ৭২, ফারজানা ৬১, নিগার ১৮*; ম্যাগুইর ২/৩৮)। ফল: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ৭ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: শারমিন আক্তার সিরিজ: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল তিন ম্যাচের সিরিজে ৩–০ ব্যবধানে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: ফারজানা হক