বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র, আমি যে দুই দলেরই

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দল ডালাসে অবিশ্বাস্য সমর্থন পাবে বলে আমার বিশ্বাস। এই ম্যাচের সব টিকিট আরও আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখানে অনেক শ্রীলঙ্কানও আছে, কিন্তু সংখ্যায় বাংলাদেশিদের মতো নয়। ২৭০–২৮০ ডলারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দাঁড়িয়ে খেলা দেখবে, ওই টিকিটের দামই ২০০ ডলার!

বাংলাদেশ দলের সাবেক পেসার গোলাম নওশেরসংগৃহীত

বিসিবির নির্বাচকের চাকরি ছেড়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসি ২০০৭ সালে। আসার পর থেকেই আছি টেক্সাসের হিউস্টনে, এখানেই থিতু হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিলাম। কিন্তু আট বছর ব্যবসা করার পর মনে হলো, আমি মাঠের মানুষ, মাঠে ফিরে যাই। এর পর থেকেই আবার ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। উপমহাদেশের শিশুদের খেলা শেখাতে শুরু করে হয়ে যাই পুরোদস্তর কোচ। এখন তো যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছি। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি দুই বছরের বেশি হলো।

৮–৯ বছর ধরে স্থানীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থেকে যে আনন্দ পেয়েছি, এবার তা বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশ দল যুক্তরাষ্ট্রে আসছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। যে বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রও খেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট–সংস্কৃতিটা মূলত এখানকার অভিবাসীদের নিয়েই তৈরি। আমি এখনো যে শিশুদের কোচিং করাই, সেখানে সব ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু। বেশির ভাগই ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের। বাংলাদেশেরও অনেকে আছে। তবে অন্যদের তুলনায় কম। আসলে এখানকার ক্রিকেট সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশিরা এখনো সেভাবে জানে না। আমার বিশ্বাস, এই বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের অভিভাবকেরাও উৎসাহী হবেন তাঁদের বাচ্চাদের মাঠে পাঠাতে।

নিউইয়র্কে প্রচুর বাংলাদেশি দল আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দল আছে, পাকিস্তানি দল আছে। সেখানেও প্রচুর ক্রিকেট হয়। এটা অভিবাসীদের দেশ। সবাই প্রায় বাইরের মানুষ। তবে বাইরে থেকে আসা যা, এখানকার স্থানীয়রাও তা। আমার ধারণা, শুধু বাংলাদেশের খেলা নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচেরই আর টিকিট অবশিষ্ট নেই।

এখানে আমি শুধু শিশুদেরই কোচিং করাই। তিন–চারটা দলের সঙ্গে আছি। আর যে দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছি, সে দলে আছি আট বছর ধরে। হিউস্টনে ১০টির মতো ক্লাব আছে, যারা বাচ্চাদের ক্রিকেটে খেলে। প্রতি শনি ও রোববার বাচ্চাদের লিগের খেলা হয়। অনূর্ধ্ব–১১, ১৩, ১৫ ও ১৭ পর্যায়ের ক্রিকেট, যার সবই হয় ক্রিকেট বলে।

যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডে থাকায় স্বার্থের সংঘাত এড়াতে আমি বড়দের কোচিং করাই না। ক্রিকেট অপারেশনসের একজন সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দল ও বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য কোচ নিয়োগ করা, নির্বাচক নিয়োগ করা, খেলাগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কি না দেখা, টুর্নামেন্ট আয়োজন করা—এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয় আমাকে। এখানে অনেক টুর্নামেন্ট হয়, যেখানে বাইরের খেলোয়াড়েরা খেলতে আসেন। টুর্নামেন্টগুলোর জন্য স্থানীয় বোর্ডের অনুমতি লাগে। সেগুলোও আমরা দেখি।

ডালাসে গত বছর মেজর লিগ হলো। বিশ্বের বড় বড় খেলোয়াড় এসে খেলে গেছেন তাতে। মানের দিক দিয়ে খুবই ভালো ছিল টুর্নামেন্টটা। মাঠটাও অসাধারণ এখানে। ডালাসের উইকেটে রান হয় অনেক। মেজর লিগের ফাইনালে ২০০–এর কাছাকাছি রান হয়েছে। নিকোলাস পুরান সেঞ্চুরী করেছে, কুইন্টন ডি ককও খুব ভালো ব্যাটিং করলেন। উইকেট ভালো না হলে এটা হতো না। এ মাঠের দায়িত্বে আছেন একজন অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর।

দর্শকদের কথা যদি বলি, টেক্সাসে উপমহাদেশের মানুষ প্রচুর। প্রচুর ক্রিকেট খেলা হয়। শুধু হিউস্টনেই ৩০টির মতো মাঠ আছে। যেখানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খেলতে আসবে, সেখানে ৭টি মাঠ আছে, ৪টি ইনডোর আছে, ৯০ একরের ওপর জমি। ডালাসেও টুর্নামেন্ট করার মতো ২৫–৩০টি মাঠ আছে, ইনডোর–সুবিধা আছে। প্রতিটি মাঠে শিশুদের প্রচুর টুর্নামেন্ট হয়। ছুটির দিনগুলোতে বাবা–মায়েরা বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের নিয়ে আসে। শুধু নিবন্ধন তালিকা দেখলেও যুক্তরাষ্ট্রে সাত হাজারের মতো শিশু ক্রিকেট খেলছে এখন।

ডালাসের আবহাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। বিশ্বকাপের সময় আশা করি ৩২–৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে তাপমাত্রা। ডালাস থেকে ঘণ্টা তিনেকের ড্রাইভ হিউস্টনেও একই রকম। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এখানে বাংলাদেশ যে তিনটা ম্যাচ খেলবে বিশ্বকাপের আগে, এতে তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হবে। বাংলাদেশ আগে এসে ক্যাম্প করছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপে যেটা খুব কম দলই করবে বলে জানি।

শুধু হিউস্টনেই ৫০ হাজার বাংলাদেশি থাকে। তার ওপর শনিবার খেলা। ডালাস, হিউস্টন তো আছেই; ফ্লোরিডা, আটলান্টা, নিউইয়র্ক—বিভিন্ন জায়গা থেকেই বাংলাদেশিরা আসবেন খেলা দেখতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দল ডালাসে অবিশ্বাস্য সমর্থন পাবে বলে আমার বিশ্বাস। এই ম্যাচের সব টিকিট আরও আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখানে অনেক শ্রীলঙ্কানও আছে কিন্তু সংখ্যায় বাংলাদেশিদের মতো নয়। ২৭০–২৮০ ডলারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দাঁড়িয়ে খেলা দেখবে, ওই টিকিটের দামই ২০০ ডলার!

নিউইয়র্কে প্রচুর বাংলাদেশি দল আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দল আছে, পাকিস্তানি দল আছে। সেখানেও প্রচুর ক্রিকেট হয়। এটা অভিবাসীদের দেশ। সবাই প্রায় বাইরের মানুষ। তবে বাইরে থেকে আসা যা, এখানকার স্থানীয়রাও তা। আমার ধারণা, শুধু বাংলাদেশের খেলা নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচেরই আর টিকিট অবশিষ্ট নেই।

স্থানীয় লোকজনও ক্রিকেটের খবরাখবর রাখেন। ক্রিকেট যারা খেলে না, এখন খেলাটা এখানে তাদের কাছেও পরিচিত। ক্রিকেট নিয়ে একসময় তাদের একটা অনাগ্রহ ছিল। সারা দিন ধরে খেলা হয়, টেস্ট হয় পাঁচ দিনের। ওরা এত লম্বা সময় ধরে খেলা পছন্দ করে না। তাদের মধ্যে তাই একটা ভয়ের মতো ছিল ক্রিকেটটা। এখন যখন সাড়ে তিন ঘণ্টার খেলা এসে গেল, তারাও জানে ছোট সংস্করণের খেলাও আছে। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তাদেরও ধারণা জন্মেছে।

বিশ্বকাপে নিউইয়র্কে ড্রপ ইন উইকেট হচ্ছে। শুনেছি, অস্ট্রেলিয়ান পদ্ধতিতেই এই উইকেট বানানো হয়েছে। তবে এটা নতুন কিছু নয়। এ ধরনের উইকেট সম্পর্কে আমরা অনেক আগে থেকেই জানি। আশা করি, বিশ্বকাপের জন্য ভালো উইকেটই বানাবে আইসিসি। টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট যেহেতু, রান তো হতে হবে। এটার তত্ত্বাবধানও অস্ট্রেলিয়ানরা করছেন।

তবে নিউইয়র্কে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকবে। অবশ্য খেলা তো সাড়ে তিন ঘণ্টার। আশা করি, ঠান্ডা–গরম কোনোটাতেই সমস্যা হবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বৃষ্টি হলে সমস্যা হবে, এ–ই যা। নইলে আশা করি, বাংলাদেশের জন্য কন্ডিশনটা ভালো হবে।

আমার মতো যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সব বাংলাদেশিই এখন বাংলাদেশের খেলা দেখার অধীর অপেক্ষায়। তবে আমার রোমাঞ্চটা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র—আমি যে দুই দলেরই খেলা দেখব!

লেখক: বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের সদস্য

লেখক: বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক নির্বাচক