কোহলি-জয়সোয়ালের সেঞ্চুরির পর বুমরা-সিরাজের ২০ বলের তোপ
হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ছিলেন ভারতীয় দলের সবাই। মাঠ ছাড়ায় নেতৃত্ব দিতে রাহুল-পন্তরা সামনে ঠেলে দিলেন বিরাট কোহলিকে, সারা দিনে সবচেয়ে বেশি রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। কিন্তু ক্যারিয়ারজুড়ে এমন মুহূর্ত অনেক পেয়েছেন কোহলি, তিনি সামনে পাঠাতে চাইলেন যশস্বী জয়সোয়ালকে। ১৬১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যাচটা ভারতের অনুকূলে এনে দিয়েছেন তো ২২ বছরের এই তরুণই।
শেষ পর্যন্ত সমাধান দিলেন অধিনায়ক। জয়সোয়ালের সঙ্গে কোহলিকেও সামনে এগিয়ে দিলেন যশপ্রীত বুমরা। কিছুক্ষণ আগে এই বুমরাই ১৪ বলের ছোট্ট এক স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার নাড়িয়ে দিয়েছেন, এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে তুলে নিয়েছেন মারনাস লাবুশেন ও নাথান ম্যাকসুয়েনির উইকেট।
দিনের শেষে ভারতীয় দলের মাঠ ছাড়ার এই দৃশ্যেই আছে পার্থ টেস্টে তৃতীয় দিনের খেলার সারাংশ। জয়সোয়ালের দেড় শ আর কোহলির সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৮৭ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৩৪ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে ভারত।
যা তাড়া করতে নেমে শেষ বেলায় ২০ বলের মধ্যেই ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের লক্ষ্য আরও ৫২১ রান দূরে, যা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ম্যাচের বাকি আরও দুই দিন, এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় একরকম লেখাই হয়ে গেছে।
তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়া যে মিনিট বিশেকের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল, তাতে বুমরার শিকার ২ উইকেট, সিরাজের ১। তবে ম্যাচটাকে পুরোপুরিই ভারতের বানিয়ে ফেলার মূলে আসলে জয়সোয়াল ও কোহলি। আগের দিন ৯০ রানে অপরাজিত থাকা জয়সোয়াল সকাল থেকে আরও স্বচ্ছন্দে খেলে যোগ করেছেন আরও ৭১ রান।
তাঁর ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুল অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬২ রান নিয়ে দিন শুরু করা রাহুল আর ১৫ রান যোগ করে মিচেল স্টার্কের শিকার হন দিনের ষষ্ঠ ওভারে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওপেনিংয়ে ভারতীয় রেকর্ড জুটিটি ভাঙে ২০১ রানে। এরপর উইকেটে থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি দেবদূত পাড়িক্কাল (২৭)।
এর মধ্যেই হ্যাজলউডের বাউন্সারে র্যাম্প শটে ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম আর ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জয়সোয়াল। দ্বিতীয় পানি পানের বিরতির আগে পৌঁছে যান দেড় শতেও। জয়সোয়ালের ১৫ চার ৩ ছয়ে গড়া ১৬১ রানের ইনিংসটি থামে মিচেল মার্শের বলে কাট করতে গিয়ে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর অবশ্য ছোটখাটো একটা বিপর্যয়ও শুরু হয় ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে। জয়সোয়াল ফেরার পরের ১৬ বলের মধ্যে ফেরেন ঋষভ পন্ত ও ধ্রুব জুরেলও। ২ উইকেটে ৩১৩ থেকে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৩২১।
এখান থেকে ভারতের রান পাঁচ শর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বটা কোহলির। ষষ্ঠ উইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে ৮৯ আর অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে নীতিশ রেড্ডিকে নিয়ে গড়েন ৭৭ রানের জুটি। কোহলি তাঁর ৩০তম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান লাবুশেনকে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করে। টেস্টে ১৫ ইনিংস আর তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৯ ইনিংস পর কোহলির সেঞ্চুরি আসতেই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন বুমরা। ৫৩৩ রানে এগিয়ে থাকা ভারত এর অনেক আগে থেকেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ১০৪ ও ১২/৩ (খাজা ৩*; বুমরা ২/১, সিরাজ ১/৭)।
ভারত: ১৫০ ও ৪৮৭/৬ ডিক্লে. (জয়সোয়াল ১৬১, কোহলি ১০০*, রাহুল ৭৭, নীতিশ ৩৮*, ওয়াশিংটন ২৯; লায়ন ২/৯৬, হ্যাজলউড ১/২৮)।
(তৃতীয় দিন শেষে)