বাংলাদেশকে রণহুংকার শোনাচ্ছে ইংল্যান্ড

ম্যাচের ট্যাগলাইন—জয়ের টনিকে উজ্জীবিত বাংলাদেশ বনাম পরাজয়ে হতভম্ব ইংল্যান্ড। তবু ইংল্যান্ড শিবির থেকে রণহুংকারই শোনা যাচ্ছে।

অনুশীলনে ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুটছবি: এএফপি

প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের হেরে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হলো না খারাপ! প্রশ্নটা কি কেমন কেমন লাগছে?

যেকোনো দলের জন্যই সবচেয়ে বড় টনিকের নাম জয়, পরাজয় মানেই আত্মবিশ্বাসে আঁচড়। তার ওপর সেই পরাজয় যদি আবার এমন হয়, তাহলে সেটি আর শুধু আঁচড় থাকে না। আত্মবিশ্বাসে তা একটু হলেও ধাক্কা দেয়। প্রথমে ব্যাটিং করে মাত্র ২৮২ রান, ইংল্যান্ডকে এটা মানায় নাকি! এই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা তো ওটাই। সাড়ে তিন শ করে হারলেও কথা ছিল। 

আগামীকাল ধর্মশালার ম্যাচের ট্যাগলাইনও তাই খুব সহজ। জয়ের টনিকে উজ্জীবিত বাংলাদেশ বনাম পরাজয়ে হতভম্ব ইংল্যান্ড। কিসের হতভম্ব? ইংল্যান্ড শিবির থেকে তো বরং রীতিমতো রণহুংকার শোনা যাচ্ছে। এ কারণেই প্রশ্নটা উঠছে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের হেরে যাওয়াটা ভালো হলো না খারাপ!

ইংলিশ অলরাউন্ডার লিয়াম লিভিংস্টোন এমনও দাবি করেছেন, ওই পরাজয়ের কারণে ইংল্যান্ড দল এখন ‘দ্বিগুণ রোমাঞ্চিত’। ‘ডাবল এক্সাইটেড’-এর আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ তো এটাই হয়। রোমাঞ্চিত কথাটাকে অবশ্য আক্রমণাত্মকে বদলে নেওয়া যায়। কারণ, লিভিংস্টোন এরপরই বলেছেন, এই ইংল্যান্ড দল যতবার হেরেছে, ততবারই পরের ম্যাচে নেমেছে দ্বিগুণ আক্রমণাত্মক মেজাজে। এবারও যে তা-ই নামবে, সেটা বলার আর প্রয়োজন পড়েনি। 

হেরে গেলেও তা থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজতে হয়। সেটিও খুঁজে নিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার, ‘এমন একটা পরাজয় প্রথম ম্যাচে হয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো।’ যে পরাজয়ের পর ম্যাচে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্কোরার জো রুট সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইংল্যান্ডের এই দলটা কত ভালো। ওয়ানডে ক্রিকেটকেই তারা কেমন বদলে দিয়েছে। 

আরও পড়ুন

কথাগুলো সবই সত্যি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ২০১৫ বিশ্বকাপ–পূর্ববর্তী রক্ষণশীলতার চেহারায় নেবে, এটাও ঠিক আশা করা যাচ্ছে না। এ কারণেই প্রশ্নটা উঠছে, ইংল্যান্ডের পরাজয়টা বাংলাদেশের জন্য ভালো হলো না খারাপ!

অনুশীলনে ফুটবল খেলে গা–গরম করছেন যশ বাটলার
ছবি: এএফপি

খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কেন, এটা তো এরই মধ্যে বুঝে ফেলার কথা। এবার আসুন, ভালো দিক খুঁজি। প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে গেলে তা নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ধরে রাখার স্বপ্নকে বড় ধাক্কা দেবে। মুখে যতই বড় বড় কথা বলুন না কেন, দ্বিতীয় ম্যাচটায় খেলতে নামার আগে এটা কি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মনে একটুও অস্বস্তি জাগাবে না! তার ওপর এমন একটা দলের সঙ্গে খেলা, যাদের কাছে গত তিনটি বিশ্বকাপের দুটিতেই হারতে হয়েছে। এটা বলার পর অবশ্য একটা টীকা লাগে।

২০১১ আর ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল, সেই ইংল্যান্ড আর এই ইংল্যান্ড এক নয়। বহুচর্চিত বলে এটা মনে করিয়ে দিতে একটু বাধো বাধো লাগছে যে ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের রূপান্তরের মূলেও ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই পরাজয়।

আরও পড়ুন

রুট আর লিভিংস্টোনের কথাগুলোকে উদ্বোধনী ম্যাচে ঘুমিয়ে থাকা ইংল্যান্ডকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা বলেও ধরতে পারেন। লিভিংস্টোনের অমন যুদ্ধংদেহী মেজাজের আরেকটা কারণ থাকতে পারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা ধর্মশালার এইচপিসিএ মাঠে বলে একটা সুখস্মৃতির ফিরে আসা। গত আইপিএলে এই মাঠেই পাঞ্জাবের হয়ে ৪৮ বলে ৯৪ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। ৯টি ছক্কা মেরে বুঝেছেন, এই মাঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে বলে বল বাতাসে খুব দ্রুত উড়ে যায়।

সেই বোঝাটা হয়তো এখনো ঠিক আছে। তবে ভারতের এই মাঠটাই ইংল্যান্ডের কোনো মাঠের সবচেয়ে কাছাকাছি বলে যে মন্তব্যটা করেছেন, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ তা নিয়ে একটু হলেও সংশয় জাগিয়েছে। ইংল্যান্ডসুলভ বলতে লিভিংস্টোন অবশ্যই উইকেটের পেস, বাউন্স আর সুইংপ্রিয়তার কথা বুঝিয়েছেন। অথচ সেদিন বাংলাদেশের স্পিন যেভাবে রাজত্ব করেছে, তাতে তো উপমহাদেশের মাঠই মনে হলো এটিকে। যা আরও বেশি মনে করাল আউটফিল্ডের দুর্দশা। ধর্মশালায় বিশ্বকাপের অনেকগুলো ম্যাচ, আইসিসিকে তাই বিবৃতি দিয়ে এ নিয়ে আশ্বস্তও করতে হলো সবাইকে।

আরও পড়ুন

আউটফিল্ড সেদিনের মতোই থাকুক না থাকুক, বাংলাদেশ শুধু চাইছে, উইকেটটা যেন সেদিনের মতোই থাকে। আসলেই যে চাইছে, তা অবশ্য ক্রিকেটীয় বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে বলা। বাংলাদেশ শিবির থেকে এখনো ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে কোনো কথা শোনা যায়নি। 

কাল বাংলাদেশের অনুশীলনও ছিল না। সকালে ছয় ক্রিকেটার স্টেডিয়ামে এসেছিলেন শুধু জিম করতে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি কেউ। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের পাওয়া বলতে মুশফিকুর রহিমের সৌজন্যে পানির বোতল। প্রচণ্ড গরমে যেটি জীবন বাঁচানোর কাজ করেছে বলে রসিকতা করলেন এক সাংবাদিক।

ও হ্যাঁ, লিয়াম লিভিংস্টোন এখানেও মনে হয় একটা ধাক্কা খাবেন। ধর্মশালায় এখন যে গরম, তাতে দিনের এই ম্যাচে এইচপিসিএ স্টেডিয়ামকে আরও ইংল্যান্ডসুলভ মনে হবে না।

আরও পড়ুন