এই বাংলাদেশ যে কারণে দুর্বল নয়—ভারতের সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ
পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার টাটকা স্মৃতি নিয়ে ভারত সফরে গেছে বাংলাদেশ। সেখানে নাজমুল হোসেনের দল দুটি টেস্ট ও তিনটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে। ভারতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের দুটি ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে এলেও এবার বাংলাদেশ দলকে নিয়ে সেখানে হচ্ছে ব্যাপক আলোচনা। ভারতের ক্রিকেট মহল থেকে সমীহও পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এসবের মূল কারণ আসলে বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়।
বাংলাদেশ দলের শক্তি–দুর্বলতা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলছেন ভারতের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট–পণ্ডিতেরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও করছে বাংলাদেশ দলের বিশ্লেষণ। সে রকমই একটি বিশ্লেষণ টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে তাদের অনলাইন সংস্করণে। বিশ্লেষণটির শিরোনাম এ রকম—‘ভারত বনাম বাংলাদেশ: কেন এই বাংলাদেশ দল দুর্বল নয়।’ এই বিশ্লেষণে বাংলাদেশ দল নিয়ে সংবাদমাধ্যমটি কী লিখেছে, দেখে আসা যেতে পারে—
লড়াইয়ের চেতনা
পাকিস্তান সিরিজে দলের অবস্থা যখনই খারাপ হয়েছে বা ম্যাচের কোনো একটা সময়ে বাজে অবস্থা যাচ্ছিল, বাংলাদেশ দল তখনই হাল না ছাড়ার মানসিকতা দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেরা উদাহরণ রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্ট।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাব দিতে গিয়ে ২৬ রানে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফেলার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্কোরবোর্ডের চেহারা বদলে দেয় (নাজমুল হোসেন) শান্তর নেতৃত্বাধীন দলটি। এমনকি প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশ কখনো হাল ছাড়েনি; ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ঘোষণা করার পরও তারা ১০ উইকেটে জিতেছে ম্যাচটি।
চেন্নাইয়ে তাদের এমন লড়াকু চেতনা দেখাতে হবে। শান্ত তাদের কাছে যা চায়, সেটা এটাই। ‘আমরা পাঁচ দিনই ভালো খেলতে চাই, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা টেস্টের শেষ সেশনে ফল চাই। এটা হলে ম্যাচ যেকোনো দিকে ঝুঁকতে পারে। এটা একটা সুযোগ, আমরা জয়ের জন্যই খেলব’—ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে বলে এসেছেন শান্ত।
এ ক্ষেত্রে এটা মনে করা যেতে পারে যে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে (ভারতের বিপক্ষে) ঘরের মাঠে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশ (জয়ের) কতটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।
স্পিন শক্তি
চিপকে (চেন্নাইয়ের যেখানে এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের অবস্থান) টার্নিং উইকেট বানানোর পরিকল্পনা করলে ভারতকে দুবার ভাবতে হবে। প্রতিপক্ষ দলের স্পিন শক্তি বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের তিনজন কার্যকর স্লো বোলার আছে—সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। কন্ডিশন পক্ষে পেলে তাঁদের প্রত্যেকেরই উইকেট উৎসবে মেতে ওঠার সামর্থ্য আছে।
বাংলাদেশের পেস আক্রমণ সর্বোচ্চ মানের নয়। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে তারা যে পারফর্ম করেছে, তা থেকে আত্মবিশ্বাস নিতে পারে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেটের সব কটিই ফাস্ট বোলাররা নিয়েছে। ‘স্পিন ও পেস, বোলিং আক্রমণের দুই জায়গাতেই আমরা ভালো অবস্থানে আছি। অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমাদের পেসাররা তাদের (ভারতের ফাস্ট বোলারদের) চেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু আমাদের স্পিন আক্রমণ তাদের কাছাকাছিই। তারা যেকোনো কন্ডিশনেই বোলিং করতে পারে। আমি যেটা বলতে পারি, আমরা শতভাগ দেব’—বলেছেন শান্ত।
অভিজ্ঞতা
চাপে পড়লে বাংলাদেশ সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দিকে তাকিয়ে থাকবে। চাপের মুহূর্ত সামাল দেওয়ার জন্য দলের অন্য সদস্যদেরও যথেষ্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ‘আমরা যখন দল হিসেবে খেলব, তখনই শুধু পার্থক্য গড়তে পারব। পুরো দলকে এক হয়ে খেলতে হবে। সাকিবের প্রসঙ্গে আমি বলতে পারি, তিনি ভালো খেলবেন। তাঁর কাছে প্রত্যাশা আগের মতোই। বল হাতে তিনি দারুণ ছন্দে আছেন’—বলেছেন শান্ত।
চেন্নাইয়ের কন্ডিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অপরিচিত নন। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলটির মূল সদস্যররা এখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে।