রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের গিয়ার পাল্টাচ্ছে ভারত
১৯৪.৬৪—গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা সঞ্জু স্যামসনের ইনিংসের স্ট্রাইক রেট। এত কিছুর পরও স্যামসনের কিছুটা মন খারাপ হতে পারে। কারণ, কালকের ম্যাচে ভারতের যে ৩ জন ব্যাটিং করেছেন, সেখানে স্যামসনের স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে কম। বাকি দুজনের স্ট্রাইক রেটই ২০০ বা এর চেয়ে বেশি।
তিলক বর্মা করেছিলেন ৪৭ বলে ১২০। স্যামসন, তিলক—দুজনেই ছিলেন অপরাজিত। আরেক ওপেনার অভিষেক করেন ১৮ বলে ৩৬। এমন ‘হাতুড়িপেটা’র পর রান যা হওয়ার তেমনটাই হয়েছে—২০ ওভারে ১ উইকেটে ২৮৩।
ভারতের এই ২৮৩ শুধু একটা সংখ্যা নয়, একটা ইঙ্গিতও। সেই ইঙ্গিতটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গিয়ার পরিবর্তনের আর তার নেতৃত্বেও বোধ হয় ভারত। যদিও টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ সংগ্রহটা জিম্বাবুয়ের, সেটা তারা করেছে গত ২৩ অক্টোবর, গাম্বিয়ার বিপক্ষে।
এর ৪ দিন আগে সেশলসের বিপক্ষে সিকান্দার রাজার দল করেছিল ২৮৬, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জিম্বাবুয়ের এই দুটি ম্যাচ আন্তর্জাতিক হলেও অসম প্রতিপক্ষের কারণে জিম্বাবুয়ে নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়েই থাকবে।
ভারত কাল করেছে ২৮৩। সেটা আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে। কাল দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন মার্কো ইয়ানসেন। যিনিও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১০ রানের বেশি করে। এর আগে গত মাসেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৯৭ রান করে ভারত। আর বড় ৪টি সংগ্রহই এসেছে গত ৩৫ দিনের মধ্যে।
কাল ভারত ছক্কা মেরেছে ২৩টি। টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে ভারতের সর্বোচ্চ ছক্কা এটি, সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ভারতের চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছে শুধু জিম্বাবুয়ে ও নেপাল। জিম্বাবুয়ে যা করেছিল গাম্বিয়ার সঙ্গে আর নেপাল মঙ্গোলিয়ার। এর আগে সর্বোচ্চ ২২টি ছক্কা ভারত মেরেছিল গত অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এবার এই দুই ম্যাচকেন্দ্রিক আলোচনাকে পাশে সরিয়ে রাখা যাক। পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলেও ভারতকেই রাখতে হবে নেতৃত্বে।
এ বছরে ভারত ২০০ রান বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছে ৯ বার, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ। চলতি বছরে ভারত ম্যাচ খেলেছে ২৪টি। তাতে ওভারপ্রতি রান তুলেছে ৯.৫৫ করে, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চও ছিল ভারতের। ২০২৩ ও ২০২২ সালে ভারত রান তুলেছিল ওভারপ্রতি যথাক্রমে ৯.২৩ ও ৯.২০ করে। মানে টানা দুই বছর ভারত নিজেদের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ল।
ভারত টি-টোয়েন্টিতে ২৫০ বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছে তিনবার। ছাড়িয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র ও জাপানকে, তারা ২ বার করে ২৫০ রান ছোঁয়া সংগ্রহ তুলেছে। ভারতের সমান ৩ বার ২৫০ বা এর চেয়ে বড় রানের সংগ্রহ আছে শুধু সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও সারের। ভারতের খেলোয়াড়েরা টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ২৩টি সেঞ্চুরি করেছেন, যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ১১টি বেশি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সেঞ্চুরি আছে ১১টি।
একা স্যামসনই সর্বশেষ ৫ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন ৩টি। তিলক সেঞ্চুরি করলেন টানা দুই ম্যাচে। অর্থাৎ, টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করাকেও অনেকটা ধারাবাহিক করে ফেলছেন ভারতের ক্রিকেটাররা।
ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এমন হলে দল কীভাবে খারাপ করে? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ভারতই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে। ১৬৫ জয়ের বিপরীতে হেরেছে ৭০টিতে। হারের বিপরীতে তাদের জয়ের হার ২.৩৬—যা সর্বোচ্চ।