মিরাজ–সাকিবরা পাকিস্তানে পেরেছেন, ভারতেও কি পারবেন
পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে বাংলাদেশ দলের জন্য একটা জয়ই ছিল উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু নাজমুল হোসেনের দল শান মাসুদদের প্রথম টেস্টে হারিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, স্বাগতিকদের হারিয়ে দিয়েছে পরের টেস্টেও। পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ২–০ ব্যবধানে হারানোর পর এবার বাংলাদেশের সামনে ভারত সফর।
পাকিস্তানে অভাবনীয় সাফল্যের পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের ভারত সিরিজ নিয়ে উৎসাহী ক্রিকেটপ্রেমীর সংখ্যা বেড়েছে। আলোচনা হচ্ছে, নাজমুলরা যে ‘রেসিপি’তে পাকিস্তানকে হারিয়েছেন, সেই একই পথে রোহিত শর্মাদেরও হারানো যাবে কি না।
বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের বিপক্ষে যা সম্ভব হয়েছে, সেটি বিরাট কোহলি–রোহিতদের বিপক্ষেও সম্ভব কি না, এই প্রশ্নে প্রথমেই দেখা দরকার বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে কীভাবে জিতেছে। সিরিজের দুটি ম্যাচই হয়েছিল রাওয়ালপিন্ডিতে। প্রথম ম্যাচে নাজমুলরা জিতেছিলেন ১০ উইকেটে, পরেরটিতে ৬ উইকেটে। জয়ের ব্যবধান বলে দিচ্ছে দুই টেস্টের ফলে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের বোলিং। প্রথম টেস্টে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। তবে অলআউট হয়েছে পরের তিন ইনিংসে। সব মিলিয়ে দুই টেস্টের চার ইনিংসে পাকিস্তানের ৩৬ ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
দেখা যাক, এই উইকেটগুলো কারা নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ১০ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ উইকেট হাসান মাহমুদের। এ ছাড়া নাহিদ রানা ৬, সাকিব আল হাসান ৫ ও তাসকিন আহমেদ ৪ এবং শরীফুল ইসলাম ৩টি উইকেট নিয়েছেন।
বোলিংয়ের ধরন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব মিলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। আর চার পেসার হাসান, নাহিদ, তাসকিন ও শরীফুলদের শিকার ২১ উইকেট। এখানে বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে, রাওয়ালপিন্ডির উইকেট।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ উইকেটই পেসবান্ধব, রাওয়ালপিন্ডি একটু বেশি। সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তান তো একাদশে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারও রাখেনি। মূলত পিচের কারণেই পুরো সিরিজে বাংলাদেশ দল স্পিনারদের তুলনায় পেসারদের দিয়ে বেশি বল করিয়েছে (স্পিনাররা করেছেন ৭৯০ বল, পেসাররা ১০১৮)। তবে ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া সিরিজে স্পিনারদেরই হাত বেশি ঘোরাতে হতে পারে। এই সিরিজে খেলা হবে চেন্নাই ও কানপুরে, যেখানকার উইকেট স্পিনবান্ধব হিসেবে পরিচিত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের স্পিনাররা কি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আটকাতে পারবেন? ভারতের নির্বাচকেরা এখনো বাংলাদেশ–সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেননি। তবে ভারতের প্রথম সাতে কারা ব্যাট করতে পারেন, সেটা একপ্রকার ঠিকই হয়ে আছে। রোহিত ও যশস্বী জয়সোয়ালের পর থাকবেন শুবমান গিল, কোহলি, লোকেশ রাহুল/ঋষভ পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজারা। এখন দেখা যাক, ভারতের ব্যাটসম্যানরা স্পিনারদের বিপক্ষে গত ক’বছরে কেমন খেলেছেন। এটা আবার দুইভাবে দেখা যেতে পারে। সাকিবের মতো বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে কেমন, মিরাজের মতো অফ স্পিনারের বিপক্ষে কেমন।
পরিসংখ্যান বলছে, বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে ডানহাতি ব্যাটসম্যানরা বেশি আউট হয়েছেন, ডিসমিসালস প্রতি রানও খুব বেশি নয়। এক কোহলিই গত তিন বছরে বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে ২৭২ রান করতে খেলেছেন ৬৮৬ বল, আউট হয়েছেন ৯ বার। গিল আর রোহিতও বাঁহাতির বলে আউট যথাক্রমে ১০ ও ৮ বার। অন্যদিকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জয়সোয়াল, পন্ত ও জাদেজারা বাঁহাতিদের বিপক্ষে আউট হয়েছেন কম।
ডিসমিসালের বিপরীতে রানও ডানহাতিদের তুলনায় বেশি। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতের ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ভোগানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে সাকিবের। এমনকি এই কারণে তাইজুল ইসলামকেও একাদশে রাখতে পারে বাংলাদেশ।
অফ স্পিনারদের বিপক্ষে ভারতের ব্যাটসম্যানদের ফর্ম অবশ্য দলটির জন্য চিন্তার বিষয়ই। জয়সোয়াল আর পন্ত ছাড়া বাকিদের ডিসমিসাল প্রতি রানের পরিমাণ কম। আবার অফ স্পিনারের বিপক্ষে বাঁহাতিদের আউট হওয়ার প্রবণতাও কম নয়। গত তিন বছরে জাদেজা আউট হয়েছেন ১১ বার, পন্ত ৮ বার। যদিও ডানহাতি কোহলিই আবার অফ স্পিনারদের বিপক্ষে ফিরেছেন ১১ বার। আরেকটি বিষয় হচ্ছে অফ স্পিনারদের বিপক্ষে যে ব্যাটসম্যানরা (জয়সোয়াল ও পন্ত) বেশি রান করেছেন, তাঁরা মূলত আক্রমণাত্মক ধাঁচে ব্যাট করেন।
আধুনিক ক্রিকেটে সব দলই তথ্য–উপাত্ত নিয়ে কাজ করে। ডাটা অ্যানালিস্টের দায়িত্বই প্রতিপক্ষের শক্তি–দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেদের সেরা একাদশটি তৈরিতে সাহায্য করা। বাংলাদেশ, ভারত দুই দলের সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে নিশ্চয়ই কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, মাঠের ক্রিকেটে সেই বিশ্লেষণের প্রভাব কতটা পড়ে। দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হবে ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে, কানপুরে পরের টেস্ট শুরু ২৭ সেপ্টেম্বর।