হ্যাজলউড কেন আইপিএল খেলছেন, বুঝতে পারছেন না ক্লার্ক
‘এটা ভারত। পাগল হয়েছেন! ভারতকে কেউ না বলে না।’
কথাটা মাইকেল ক্লার্কের। বলেছেন জশ হ্যাজলউডের আইপিএল খেলা নিয়ে। এতক্ষণে অনেকে হয়তো দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিয়েছেন। আগামী মাসেই অ্যাশেজ সিরিজে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। সেই প্রস্তুতিই চলছে এখন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ক্লার্কের প্রশ্ন, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ প্রস্তুতিতে যোগ না দিয়ে হ্যাজলউড কেন আইপিএলে খেলছেন?
চোটের কারণে চার মাস মাঠের বাইরে থাকার পর গত সোমবারই প্রথম মাঠে নেমেছিলেন হ্যাজলউড। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে সে ম্যাচে ভালো বোলিংও করেছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের এই পেসার। বোলিং দেখে মনে হয়েছে ছন্দ হারাননি এবং ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও নেন। কিন্তু ক্লার্ক তাতে খুশি হতে পারেননি।
১৬ জুন শুরু হবে অ্যাশেজ। তার আগে হ্যাজলউডের ‘বিশ্রাম নেওয়া উচিত’ বলে ফক্স স্পোর্টসকে বলেছেন ক্লার্ক। চোট থেকে ফিরে তাঁর আইপিএলে নেমে পড়া মোটেও পছন্দ করেননি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক। কারণ, জাতীয় দলের সামনে অ্যাশেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজ,আর হ্যাজলউড এ সময় কিনা খেলছেন আইপিএলে, যেখানে খেলার সংস্করণটি টেস্ট সংস্করণের পুরো বিপরীত। ম্যাচে মাত্র ৪ ওভার বল করে কী আর টেস্টের প্রস্তুতি হয়! ক্লার্কের কথার সুর অনেকটাই এমন।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমকে ক্লার্ক বলেছেন, ‘আমি জানি না সেখানে সে আইপিএলে কেন খেলছে। জানি না সে কেন টেস্ট ক্রিকেট খেলতে এখানে (অস্ট্রেলিয়া) প্রস্তুতি নিচ্ছে না।’
অ্যাশেজের আগে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট আছে অস্ট্রেলিয়ার। ওভালে ৭ জুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের সেরা ক্রিকেটারদের এখন টেস্টের জন্য প্রস্তুত করতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। আর হ্যাজলউড এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট বোলিং আক্রমণে অপরিহার্যদের একজন।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও অ্যাশেজ সিরিজ হবে ইংল্যান্ডে। সেখানকার কন্ডিশন পেসারদের জন্য সহায়ক। ক্লার্ক মনে করেন, চোট থেকে সেরে উঠে হ্যাজলউডের উচিত ছিল সামনে দীর্ঘ টেস্ট মৌসুমের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
কিন্তু লাল বলের মৌসুমের প্রস্তুতি কীভাবে সাদা বলের ক্রিকেটে নেওয়া সম্ভব, সেটাই বুঝতে পারছেন না ক্লার্ক, ‘আমি জানি সেখানে পর্যাপ্ত জনবল আছে তাদের। আর টেস্টের প্রস্তুতি নিতে নেটে আইপিএলের বোলারদের চেয়ে বেশি বোলিংও করবে সে।’ ক্লার্ক এই কথা বলার পরই ক্রিকেটীয় প্রশ্নটা রেখেছেন, ‘কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, সে চোটে ছিল এবং বেশ লম্বা একটা সময় ধরেই টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে ছিল, এখন ৩-৪ ওভার বোলিং করে সেসব পুষিয়ে কীভাবে অ্যাশেজের সেরা প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।’
সিডনিতে গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন হ্যাজলউড। এরপর চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন। আইপিএল দিয়ে মাঠে ফেরা, সেটাও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও অ্যাশেজ সিরিজের আগে—ক্লার্কের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তো হ্যাজলউডের আইপিএলে খেলায় বাধা দিতে পারে। দিচ্ছে না কেন? ক্লার্কের সোজাসাপটা জবাব, ‘হ্যাঁ, তারা এটা পারে। তারা যেতে বাধা দিতে পারে। কিন্তু এটা ভারত। পাগল হয়েছেন! ভারতকে কেউ না বলে না।’
মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনের আইপিএলে খেলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ক্লার্ক, ‘ক্যামেরুন গ্রিনকে নিয়ে আমরা আগেও কথা বলেছি। সামনেই অ্যাশেজ ও যে পরিমাণ ক্রিকেট আছে, তাতে এমন পরিস্থিতির মধ্যে আইপিএলে খেলা গ্রিনের শরীরের জন্য কতটা ভালো হয়? নাকি চার সপ্তাহের বিশ্রাম নিয়ে শরীরটা ঠিক করে প্রাক্-মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু করা উচিত।’
ক্লার্ক এই সমস্যার সমাধানও দিয়েছেন। তবে সেটি টি-টোয়েন্টিতে দিন দিন বেড়ে চলা ক্রিকেটারদের টাকার মোহের প্রতি খোঁচা মেরেই কথাটা বলেছেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেদিন বলবে, “ঠিক আছে, ৮ সপ্তাহের জন্য আইপিএল তোমাকে ৩০ লাখ ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে...আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি, দেশে থেকে আমাদের সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে তোমাকে আমরাও ৩০ লাখ ডলার দেব।”’