দুই স্তরের টেস্ট চায় ‘তিন মোড়ল’, এ মাসেই আইসিসির সঙ্গে বৈঠক
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড—‘বিগ থ্রি’ হিসেবে পরিচিত এই তিন দেশ নিজেদের মধ্যে আরও বেশি বেশি টেস্ট খেলতে চায়। আর সেটি করতে গিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে দুই স্তরের কাঠামো চায় দেশ তিনটি। এ বিষয়ে চলতি মাসের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান আইসিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাতে খবরটি দিয়েছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
টেস্টে দ্বিস্তর চালু হলে র্যাঙ্কিংয়ের পেছনের দিকে থাকা বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলো দ্বিতীয় স্তরে থাকবে। অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দলগুলোর সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ থাকবে না।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের খবরে বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে দর্শকের বিপুল সাড়া দেখে দেশ দুটি ও আইসিসি দ্বিস্তর নিয়ে উৎসাহী। অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি ভেন্যুতে হওয়া ম্যাচগুলোয় মোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯ দর্শক গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন, যা অ্যাশেজের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড ও ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন।
টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিস্তর বিষয়টি চূড়ান্ত হলে দুই বছর পরই চালু হয়ে যেতে পারে। আইসিসির বর্তমান এফটিপি বা ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা শেষ হবে ২০২৭ সালে। সে বছরই টেস্ট ক্রিকেটের বয়স ১৫০ বছর পূর্ণ হবে।
ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলতে দুই স্তরের আলোচনা চলছে কয়েক বছর ধরেই। ২০১৬ সালে র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম সাত দলকে নিয়ে প্রথম স্তর এবং পরের পাঁচ দলকে নিয়ে দ্বিতীয় স্তর চালুর প্রস্তাব উঠলে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে দ্বিস্তরের বিরোধিতা করেছিল।
তবে পক্ষে ছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের তখন টেস্ট মর্যাদা ছিল না।
ওই সময় দ্বিস্তরের বিরোধিতার কথা জানাতে গিয়ে বিসিসিআইয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দুই স্তর চালু হলে ছোট দলগুলোর ক্ষতি হবে। আমরা তাদের ভালো চাই। তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন। দুই স্তর হলে ছোট দলগুলোর আয় কমবে, বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ কমবে। আমরা সেটা চাই না। আমরা বিশ্ব ক্রিকেটের ভালো চাই, চাই সবাই সবার সঙ্গে খেলুক।’
তবে আট বছর পর ভারতীয় বোর্ডের বর্তমান কর্তারা বিষয়টি দেখছেন ভিন্নভাবে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সমর্থনে আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়া জয় শাহ গত ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত ছিলেন বিসিসিআইয়ের সচিব।
এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা সম্প্রচারপ্রতিষ্ঠানগুলোর। ভারতের সম্প্রচারপ্রতিষ্ঠান ডিজনি স্টার দেখছে, বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ হলে তাদের আয় বাড়ে। অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারপ্রতিষ্ঠান ফক্সটেল ও সেভেনের পর্যবেক্ষণও একই। সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ‘(বড় দলগুলোর বিপক্ষে) যত বেশি ম্যাচ, তত ভালো।’
দ্বিস্তর কাঠামোয় প্রথম স্তরের সম্ভাব্য দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। দ্বিতীয় স্তরের সম্ভাব্য দল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ে।
সম্প্রতি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির মধ্যে দ্বিস্তরের আলোচনা আবার সামনে নিয়ে আসেন রবি শাস্ত্রী। ভারতের এই সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে হলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূল করতে হলে এটাই করতে হবে। বড় দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে নিয়মিত খেলবে, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে।’
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত নিজেদের মধ্যে প্রতি চার বছরে দুটি করে সিরিজ খেলে। দ্বিস্তর চালু হলে প্রতি তিন বছরে দুটি করে সিরিজে মুখোমুখি হবে তারা। অবশ্য বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফরম্যাটেও সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হয় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ২০২৪ সালে পাঁচ টেস্টের সিরিজ হয়েছে দুটি। একটিতে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড, আরেকটিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া।