অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে সিঙ্গাপুরিয়ান ডেভিড
সবার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। আজ সকালে ঘোষণা করা ১৫ সদস্যের দলে সবচেয়ে বড় চমক টিম ডেভিড। সিঙ্গাপুরে জন্ম নেওয়া ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়া দলে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন। তাঁকে জায়গা করে দিতে দল থেকে বাদ পড়েছেন লেগ স্পিনার মিচেল সোয়েপসন। এ ছাড়া গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দল থেকে আর কেউ বাদ পড়েননি।
ডেভিডের মা–বাবা অস্ট্রেলিয়ান হলেও তাঁর জন্ম সিঙ্গাপুরে। মা–বাবার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে বসতি গাড়েন ডেভিড দুই বছর বয়সে। সেই থেকে সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। তবে ২৬ বছর বয়সী ডেভিড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন সিঙ্গাপুরের হয়ে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে কাতারের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। সিঙ্গাপুরের হয়ে এরপর আরও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের হয়ে ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে চারটি ফিফটিসহ ৪৬.৫০ গড়ে ৫৫৮ রান করা ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিকি পন্টিংয়ের চোখে ‘পুরোদস্তুর একজন ম্যাচ–জেতানো ব্যাটসম্যান’। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে অসাধারণ ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের নজর কেড়েছেন ডেভিড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিত্ব করলেও আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তিনি অস্ট্রেলিয়া দলে খেলার জন্যই যোগ্য।
ডেভিডের প্রশংসা করে সম্প্রতি কথা বলেছেন পন্টিং। তাঁর অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো পন্টিংয়ের সে কথার ভূমিকাও আছে। ডেভিড সম্পর্কে পন্টিংয়ের প্রশংসাসূচক বাক্যগুলো ছিল এ রকম, ‘সে এমন একজন খেলোয়াড়, যে আপনাকে একটি বিশ্বকাপ জেতাতে পারে...সে আমাকে ২০০৩ বিশ্বকাপের অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাকে দলে নিলে এবং সুযোগ দিলে টুর্নামেন্ট জয়ের সুযোগ থাকে।’
পন্টিং এখানেই থামেননি; ডেভিডকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক এরপর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, কেন তাঁকে দলে নেওয়া উচিত। ‘আমি জানি, অস্ট্রেলিয়া দলে আরও অনেক বিশ্বমানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আছে। কিন্তু গত দুই বছরে সম্ভবত ডেভিডের মতো ভালো কেউ করতে পারেনি,’ বলেছেন পন্টিং। গত দুই বছরে ৮৬টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১৬৮.৪০ স্ট্রাইক রেটে ১৮৭৪ রান করেছেন ডেভিড। প্রতি ৪.৫ বলে বাউন্ডারি আছে তাঁর এবং ১৬ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো—২০৪.৮০!
গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সুপার লিগে ১৯৪.৪১ স্ট্রাইক রেটে ২৭৮ রান করে আইপিলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজর কাড়েন ডেভিড। ফেব্রুয়ারিতেই আইপিএলের মেগা নিলামে তাঁকে ১.৫৩ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে কিনে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। সেখানে তিনি ৮ ম্যাচ খেলেছেন, রান তুলেছেন ২১৬.২৮ স্ট্রাইক রেটে, যেটা এক মৌসুমে অন্তত ৫০ বল খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সে এমন একজন খেলোয়াড়, যে আপনাকে একটি বিশ্বকাপ জেতাতে পারে...সে আমাকে ২০০৩ বিশ্বকাপের অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাকে দলে নিলে এবং সুযোগ দিলে টুর্নামেন্ট জয়ের সুযোগ থাকে।
পিএসএল-আইপিএলের পর টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও একইভাবে সরব ছিল ডেভিডের ব্যাট। ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ১৭৪.৫৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪০৫ রান। মাঝেমধ্যে বোলিংয়ের জন্য হাতও ঘোরাতে পারেন ডেভিড। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১২১ ম্যাচ খেলে অফ স্পিন বোলিং করা ডেভিড ১২ উইকেট নিয়েছেন।
ডেভিডকে দলে নেওয়ার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক কমিটির প্রধান জর্জ বেইলি বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন লিগে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে টিম। সে সহজাত পাওয়ার হিটার। এ কারণেই সে দলে এসেছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া দল: অ্যাস্টন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স (সহ-অধিনায়ক), টিম ডেভিড, অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), জশ হ্যাজলউড, জশ ইংলিশ, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কেইন রিচার্ডসন, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জাম্পা।
অস্ট্রেলিয়ার এই দলই এ মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখ ভারতে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে। সেখানে অবশ্য ওয়ার্নার খেলবেন না। তাঁর জায়গায় ভারত সফরে যাবেন ক্যামেরন গ্রিন। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচ ২২ অক্টোবর, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।